সরকারি খরচে ফ্রি প্রশিক্ষণ দেবে সরকার এবং সাথে চাকরির সুযোগ
- আপডেটের সময় : ১১:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৯
- / ১৫৬১ টাইম ভিউ
অবিশ্বাস্য নয় সত্যি। সরকারী খরচে মাসিক ৯,০০০–১৮,০০০ টাকা ভাতাসহ ৫ লাখ তরুণ তরুণীকে ৯ টি সেক্টরে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিবে বাংলাদেশ সরকার এবং সাথে চাকরীর সুযোগ। দেরি না করে এখনই আবেদন করে ফেলুন । সেইপ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় নিউজও হয়েছে।
কালের কণ্ঠ ও সমকাল পত্রিকায় গত বছরের শেষের দিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন গুলোতে বলা হয়,সরকারি খরচে প্রশিক্ষণ পাবে পাঁচ লাখ তরুণ। ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম’ (সেইপ) প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে সারা দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বিভিন্ন বিষয়ে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, নির্মাণশিল্প, লাইট, ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চামড়া ও পাদুকাশিল্প, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি: অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং, নার্সিং টেকনোলজি। ৯টি সেক্টরে ১৩০-এর বেশি ট্রেডে সরকারি খরচে প্রশিক্ষণ পাবে ৫,০২,০০০ তরুণ। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। জুলাই ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। চলবে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য
প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে দেশের বেকারত্ব কমিয়ে দেশের যুব সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা। সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ১,২৮,৩৮৮ জনকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৫১,৩৭৭ জন। বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে ৮৫,৮১৩ জনের।’
প্রকল্পের মূল টার্গেট সমাজের অনগ্রসর যুব সম্প্রদায়। হতে পারে সে বেকার অথবা মিড-লেভেলের কর্মকর্তা বা সুপারভাইজর, যারা প্রশিক্ষণ পেলে আরো দক্ষ হতে পারবে। যাদের কাজ করার মানসিকতা, শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে অথচ বেকার—এমন তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পেতে সহায়তা করা হচ্ছে। ভাতাসহ বিশেষ বৃত্তি পান দরিদ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সুবিধাবঞ্চিত প্রশিক্ষণার্থীরা। কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত।’
খাত ও বিষয়
৯টি সেক্টরে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে মার্চেন্ডাইজিং, মিড-লেভেল সুপারভাইজর, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং, ওভেন মেশিন ও নিট মেশিন চালনা, মাননিয়ন্ত্রণ ও টেক্সটাইল টেস্টিং, ফায়ার সেফটি অ্যান্ড কম্প্লায়েন্স, উইভিং টেকনোলজি ও নিটিং টেকনোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বিষয়গুলো হলো গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। নির্মাণশিল্পের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো—ম্যাসনারি, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশন। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিষয়গুলো হলো—রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মেশিন টুলস অপারেশন, লেদ মেশিন পরিচালনা, অটোমোবাইল মেকানিক, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স। চামড়া ও পাদুকাশিল্পের বিষয়গুলো হলো—সেলাই পরিচালনা, কাটিং অপারেশন, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিষয়গুলো হলো—ওয়েল্ডিং ও সিএনসি মেশিন অপারেশন। অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিংয়ের বিষয়গুলো হলো—প্রডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং আপগ্রেডিং, উত্পাদন বৃদ্ধির কৌশল ও টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটির বিষয়গুলো হলো—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ও হাউসকিপিং।
বিষয়ভেদে কোর্সের মেয়াদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিন্ন। কোর্সের মেয়াদ সর্বনিম্ন এক মাস এবং সর্বোচ্চ ছয় মাসের হয়ে থাকে। কোর্স ও বিষয়ভেদে বয়সসীমা ১৬ থেকে ৪০ বছর। মার্চেন্ডাইজিং, মিড-লেভেল সুপারভাইজার, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে ভর্তির যোগ্যতা স্নাতক। অষ্টম থেকে এসএসসি পাস হলেই ভর্তি হওয়া যাবে ওভেন মেশিন ও নিট মেশিন চালনা, মাননিয়ন্ত্রণ এবং টেক্সটাইল টেস্টিং, ফায়ার সেফটি অ্যান্ড কম্প্লায়েন্স, উইভিং টেকনোলজি ও নিটিং টেকনোলজি কোর্সে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে কোর্সভেদে ভর্তির যোগ্যতা এসএসসি থেকে স্নাতক। অষ্টম শ্রেণি পাস হলেই রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মেশিন টুলস অপারেশন, লেদ মেশিন পরিচালনা, অটোমোবাইল মেকানিক, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, সেলাই পরিচালনা, কাটিং অপারেশন, ওয়েল্ডিং, সিএনজি মেশিন অপারেশন প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে অষ্টম থেকে এইচএসসি পাস হলেই। এসএসসি প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে প্রডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং আপগ্রেডিং, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ও হাউসকিপিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ দেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল, রংপুর, শেরপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি, মানিকগঞ্জ ও হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ফেনী। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম; বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা; শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা; টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, রাঙামাটি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, লালমনিরহাট ও গোপালগঞ্জ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনিক্যাল সেন্টার (বিআইটিএসি), ঢাকা, খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রাম। আরো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইআইওএ), অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি), লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও) এবং বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বিএপিএ)। এ ছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এসএমই বিভাগ এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের আউটসোর্সকৃত সহযোগী প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
মিলবে ভাতা ও চাকরি
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে ভাতা। এর জন্য কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয়। মাসিক তিন হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। কোর্সভেদে এক মাসের জন্য তিন হাজার, দুই মাসের জন্য ছয় হাজার, তিন মাস মেয়াদের জন্য ৯ হাজার ও ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ১৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ শেষ করা মোট ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া যাঁরা ব্যবসা বা নিজেই কিছু করতে চান, তাঁদেরও সহায়তা করা হয়। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সনদ দেওয়া হয়। তাই শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রয়েছে কাজের সুযোগ। এ ছাড়া শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দক্ষতার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় তারা উচ্চতর পদে বেশি বেতনে চাকরি পাচ্ছে।