নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধি আলীমের জীবনযুদ্ধ
- আপডেটের সময় : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭
- / ১৩৫৯ টাইম ভিউ
আমার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একটি সরকারি চাকুরী খুবই প্রয়োজন ছিল। কারণ, প্রতিবন্ধিত্বের সাথে আমি প্রতিদ্বন্ধিতা করতে চাই না ! কারো হাতের দিকে না তাকিয়ে নিজে পায়ে দাঁড়াতে চাই। শিক্ষকদের পরামর্শে একাধিকবার চেষ্টা করেও কোনো চাকুরী হয়নি। এখনও চাকুরীর জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সার্কুলার দেখে সিভি পাঠাচ্ছি। চাকুরী নামের সোনার হরিণের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু আমার জীবনে কি সত্যি চাকুরী-টাকুরী হবে ? আমাদের মতো প্রতিবন্ধিদের তো শুধু কোটা আছে ? চাকুরী নেই! জেনে শুনে কে দেবে চাকুরী ? তবুও অপেক্ষা করে নিজেকে সান্তনা দেই, এ কথাগুলো বলছিলেন, গোয়ালবাড়ি বাজারের প্রতিবন্ধি মোদি দোকানি হাফেজ আব্দুল আলীম।
জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধি। তাঁর দু’টো পা ও দু’টো হাত বাঁকা, চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। বেশি দূরে যেতে হলে হুইল চেয়ারে করে প্রায়ই তাকে যাতায়াত করতে দেখা যায়। এরপরও থেমে নেই আলীমের জীবন। তিনি জানেন, প্রতিবন্ধিরাও সমাজের একটি অংশ। বাঁচতে হলে কিছু একটা করতে হবে।
জানা যায়, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের ৫ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আব্দুল আলীম। তিনি ২০০০ সালে গোয়ালবাড়ি হাফিজী মাদ্রাসা থেকে হিফজ ও অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন। ২০১২সালে জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩.৭৫ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে টি এন খানম কলেজ থেকে কৃতিত্বের এইচএসসি পাস করেন। শিক্ষা জীবনে অনেকের মতো তিনি নিয়মিত অধ্যয়ন করতে পারেননি। শিক্ষক, শুভাকাঙ্খি ও বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শ উৎসাহে হাফিজী শেষ করে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন না করে মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে লেখাপড়া করেছেন। যাতে অতি সহজে সরকারি চাকুরী পাওয়া যায়। কিন্তু এক এক করে জীবনের ৩০টি বসন্ত পেরোলেও আলীমের জীবনে আসেনি নিম্ন চাকুরীও।
তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠান থেকে হাফিজী শেষ করেছি, সেখানেও পদ শূন্য হলে পাইনি সেই সোনার হরিণ! হাফেজ হয়েছি কিন্তু প্রতিবন্ধি হওয়ায় কোন মসজিদ বা মক্তবে নেই কোন সুযোগ। তাই অবসর সময়টা কাটাতে গোয়ালবাড়ি বাজারে একটি টং দোকান খুলে বসেছি। এই দোকানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ টাকা বেচা-বিক্রি হয়। তা দিয়ে কোনমতে জীবন চলছে…