কোকোনাস হুজুর আর রোলার কোষ্টারের গল্প

- আপডেটের সময় : ০৫:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৫২ টাইম ভিউ
কোকোনাস হুজুর আর রোলার কোস্টারের গল্প!
গতকাল ফেসবুকে ওয়াজের রিল স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ থেমে গেলাম। এক হুজুর আল্লাহর মহিমা প্রকাশে এমন এক গল্প শোনাচ্ছেন, শুনে মনে হলো—“ডিসকভারি চ্যানেল”-এর ডেভিড অ্যাটেনবরোও থ’ বনে যেতেন।
হুজুর সুরেলা গলায় বললেন,
“আফ্রিকার জঙ্গলে এক পাখি আছে—সে ডিম পাড়ে না, পেটে বাচ্চাও ধরে না। তবু তার বংশবৃদ্ধি হয়।”
আমি গম্ভীর হয়ে ভাবলাম, “চল, দেখি তো কোন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হলো।”
তিনি চালিয়ে গেলেন—
“যখন ওই পাখির বয়স আশি হয়, তখন সে চন্দন কাঠ জোগাড় করে। কাঠের ওপর বসে ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাতে থাকে… একসময় কাঠে আগুন জ্বলে উঠে, পাখিটাও ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই বাতাসে উড়ে যায়। তারপর বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিটি ছাইকণা আবার নতুন পাখি হয়ে জন্ম নেয়! পাখিটির নাম হলো—কোকোনাস পাখি।”
তারপর বজ্রকণ্ঠে নির্দেশ, “বলুন সুবহানাল্লাহ!” মুহূর্তেই সবাই চিৎকার—“সুবহানাল্লাহ!”
আমি শুধু চুপচাপ হয়ে ভাবনার রাজ্যে চলে গেলাম। শৈশবে এত বায়োলজি পড়লাম, ঢাকা মেডিকেলে এত বছর প্রাণীর বংশবিস্তার কপচালাম, অথচ কোকোনাস নামের অদ্ভুত পাখির নাম মনে করতে পারলাম না। লজ্জা পেলাম, মনে হলো সব পড়াশোনা জলে গেছে।
রাতে গুগল, ইউটিউব, ডিপসিক, চ্যাটজিপিটি—সবখানে ঘন্টাখানেক ধরে খুঁজলাম। ফলাফল শূন্য। চ্যাটজিপিটি বলল, “এটা আসলে হাসির গল্প।”
মনে হলো, বংশবিস্তার বিজ্ঞানে এপার্থজেনেসিস বলে একটা প্রক্রিয়া আছে, যেখানে অ্যামিবা বা কেচো জাতীয় কিছু প্রাণী তাদের কাটা অংশ থেকে নতুন প্রাণী তৈরি করতে পারে। তাহলে হুজুরের কোকোনাস পাখি?—না, আসলে সেটা শুধু হুজুরদের কল্পনার বায়োলজি, অথবা তাঁর নিজস্ব থিওরি, কিংবা মুখে মুখে রটতে রটতে বিকৃতি লাভ করা এক আজগুবি গল্প।
আরেক হুজুরের ওয়াজ মনে পড়লো।
তিনি বলেছিলেন, তিনি ও তাঁর পীর বাবা একবার মাহফিলে যাচ্ছিলেন, পথে গাড়ির পেট্রোল শেষ হয়ে যায়। তখন পীরবাবা ট্যাংকিতে ফুঁ দিলেন, অমনি গাড়ি চলা শুরু করলো। সেই যে চলতে লাগলো, টানা ৭ দিন এক ফোঁটা তেল ছাড়াই চললো!
এইসব গল্প শুনে মাথা ঝিনঝিন করত। হুজুর দের আরেকটু সচেতনতা অবলম্বন করলে ভালো।
গতকাল রোলার কোস্টারে বসে তেল-গ্যাস ছাড়া যখন জেট প্লেন নিয়ে আফ্রিকার জঙ্গলে ডাইনোসর শিকার করছিলাম, তখন হুজুরদের ফুঁ আর কোকোনাস পাখির ছাইয়ের কথা মনে পড়ছিলো।