ফের পানির নিচে চট্টগ্রাম
- আপডেটের সময় : ০৯:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
- / ১৩৮৫ টাইম ভিউ
মাত্র ১৫ দিনেই দুইবার পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগর। এর আগে গত ৩১ মে পানির নিচে তলিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু পানি। নগরের মূল সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে মহেশখালের বাঁধের কারণে পানি নামতে না পেরে আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা এলাকায় কোমর পানি জমে যায়। ফলে অন্তহীন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মুখে পড়েন নগরবাসী। বার বার জলাবদ্ধতা ধকল সইতে হওয়ায় নগরজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন স্থানীয়রা।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র বন্দরগুলোতে ইতোমধ্যে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সকাল আটটা ৩০ মিনিটে জোয়ার শুরু হয় এবং রাত নয়টা ৪ মিনিটে জোয়ার আসে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, নিন্মচাপের কারণে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের এলাকার এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিপাতও অব্যাহত থাকবে।
নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতি বর্ষা মৌসুম তো বটেই, সাধারণ সময়েও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কিন্তু আমরা সবসময়ই শুনি, খাল খনন ও ড্রেন সংস্কারের কথা। সংস্কারই যদি করা হয় তাহলে এর সুফল আমরা পাই না কেন।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল নেওয়াজ বলেন, যে চাক্তাই খাল দিয়ে নগরের বৃহত্তম এলাকার পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়বে, সে খাল দিয়ে পানি চলাচলের এতটুকু সুযোগ নেই। দখল, দুষণ ও ভরাটের কবলে পড়ে খালটির অবস্থা বেহাল। তাই প্রবল বর্ষণে পানি নামতে না পেরে তা সমতলে জমে যায়। এর সঙ্গে আছে নালা নর্দমা ও ড্রেন দখলের প্রতিযোগিতা।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রবল বর্ষণের কারণে নগরের কোন কোন নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তবে পানি বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়নি। খাল খনন ও নালা নর্দমা সংস্কারের কারণে পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাছাড়া খাল ও নালা নর্দমা সংস্কার কাজ এখনো চলমান। মহেশখাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালের ওপর দেয়া বাঁধটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এখানে বর্তমানে খাল সংস্কার কাজও চলছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে যায়, গত রবিবার রাত থেকেই নগরে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। ফলে সকাল হতেই নগরের সিংহ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
নগরীর আগ্রবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, সুপারি পাড়া, হালিশহরের এ ব্লক, বি ব্লক, ছোটপুল ও বড়পুল এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, জিইসি মোড়, বাকলিয়া, চকবাজার, বাদুরতলা, হালিশহর, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় কোথাও হাঁটু জল কোথাও কোমর পানি উঠে যায়। তবে বেশ কিছু বিস্তৃত এলাকা থেকে কয়েক ঘণ্টা পর পাি নেমে গেলেও আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, বাদুরতলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায় পানি থেকে যায়। পানিতে বিভিন্ন সড়ক, গলিসহ পাড়া মহল্লার বিভিন্ন ভবনের নিচতলার বাসা ডুবে যায়।
এদিকে, এক মহেশখালের বাধেই বন্দি নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ ও পতেঙ্গা এলাকার মানুষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী বাঁধের কারণে ভারী বৃষ্টির পানি নামতে পারে না বলেই আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙ্গা, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ, হালিশহর, ছোটপুলসহ বড় একটি অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
ছোটপুল এলাকার বাসিন্দা আজাদ বলেন, একটি বাধের কারণে বৃহত্তর দুটি এলাকা বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর ধরে আমরা এ সমস্যা ভোগ করছি। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি। গত ১৫ দিনেই আমরা দুইবার পানির নিচে বসবাস করতে হয়েছে।