এমাদুল মান্নান তারহাম শুধু একটা নাম নয় একটা প্রতিষ্টান
- আপডেটের সময় : ০৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০
- / ৫৩০ টাইম ভিউ
এমাদুল মান্নান তারহাম শুধু একটা নাম নয় একটা প্রতিষ্টান
আহসানুজ্জামান রাসেল
কুলাউড়ার ফুটবল নিয়ে এই গ্রুপ প্রথমে ওপেন করেছে ভাতিজা রাসেদুল ইসলাম রুবেল।পরবর্তীতে ওর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে কুলাউড়ার ফুটবলের জন্য কিছু একটা করার প্রত্যয় নিয়ে আমিও যুক্ত হই এই গ্রুপের সাথে। এরপর প্রায় দুই মাস এই গ্রুপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্দি করেছি আমাদের কুলাউড়ার অনেক সাবেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে রয়েছে গৌরব উজ্জ্বল অতীত এবং উনারা কুলাউড়ার ফুটবলের জন্য কিছু একটা করতে চান। কিন্তু উপযুক্ত প্ল্যাটফরমের অভাবে উনাদের চাওয়ার বহিঃপ্রকাশ এবং বাস্তবায়ন করতে পারছেননা। আমরা সেই প্ল্যাটফরম তৈরি করতে পেরেছি কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে আমি যেসব মহান ব্যক্তিদের কথা বলছি তাদের মধ্যে সম্মুখ সারিতে আছেন কুলাউড়ার সিনিয়র জুনিয়র এমনকি বর্তমান প্রজন্মেরও প্রিয় মুখ আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই Emadul Choudhury তারহাম।
আসলে তারহাম ভাইকে নিয়ে লেখতে গিয়ে অামি নিজেই অনেকটা আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছি।কুলাউড়ার মতো একটা মফস্বল উপজেলায় মোটামুটি সব খেলায় পারদর্শী এমন একজন মানুষের জন্ম হয়েছিল যা আমাদের জন্য অনেকটা ভাগ্যেরও ব্যাপার। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল, হকি, টেবিল টেনিস, সাঁতার, ক্যারাম দাবা সহ এমন কোন খেলা নেই যেটা তিনি খেলেননি। এছাড়াও একজন সংগঠক হিসেবে উনার তুলনা শুধু উনি নিজেই। তারহাম ভাইর আরেকটা বড় গুন হলো সেক্রিফাইস মানসিকতা যা উনাকে অনেকের থেকেই আলাদা করে রাখবে। তিনি নিজে না খেলে অন্যকে খেলার সুযোগ করে দিতেই আনন্দ পেতেন বেশী। কুলাউড়ার সাবেক অনেক নামীদামি খেলোয়াড় বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করলেও তারহাম ভাইর মতো উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন টূর্ণামেন্টে আর্থিক সম্পৃক্ততা কিন্তু অনেকেরই নাই যা স্থানীয় বিভিন্ন টূর্ণামেন্ট আয়োজকদের সাথে আলাপ করলে সহজেই বুঝা যায়।
তারহাম ভাইর খেলোয়াড় জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ উনাশি থেকে চুরাশি সাল পর্যন্ত যখন তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন। আর পরের ভাগ চুরাশি থেকে ছিয়ানব্বই যখন তিনি কুলাউড়ায় অবস্থান করেন। ক্যাডেট লাইফে তারহাম ভাই বিভিন্ন খেলাধুলায় কতটা পারদর্শী ছিলেন তা বুঝার জন্য একটা উদাহরণই যথেষ্ট আর সেটা হলো তিনি টানা দুই বছর সিলেট ক্যাডেট কলেজের স্পোর্টস ক্যাপ্টেন ছিলেন।ক্যাডেট কলেজে স্পোর্টস ক্যাপ্টেন হবার জন্য প্রতিটি খেলা সম্পর্কে দক্ষতা এবং মেধা থাকার প্রয়োজন হয়। ক্যাডেট কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন ক্যাডেট কলেজের মাঠে তাদের সাথে খেলার জন্য। সিলেট ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র মেজর জেনারেল নাইম আসফাক চৌধুরী সৃত্মিচারণে বলেন
“Emadul Mannan Chowdhury was one-year senior to me whom I know for last 41 years. We studied in Sylhet Cadet College since 1979 when the college was established through 1984/85. A perfect gentleman and a borne athlete is enviably loved by all juniors, friends and seniors. He can mix up with all too easily within a very short period of time. He was our College Games Prefect (3rd College Games Prefect of Sylhet Cadet College). He has left behind remarkable footprint in the sports arena for others to follow. He was an indispensable member of College Football, Hockey, Cricket, Volleyball, Athletics Team. He had enormous contribution in bringing laurels for the college in many games and sports competitions at Inter Cadet College Sports Competitions and other friendly competitions.”
এবার আসি কুলাউড়া প্রসঙ্গে। তারহাম ভাই কুলাউড়ায় যেসব দলের হয়ে গোল বার আগলে রাখতেন তাদের মধ্যে জাতীয় তরুন সংঘ, চলন্তিকা একাদশ, কুলাউড়া একাদশ অন্যতম।মৌলভীবাজার লীগে তিনি অাবাহনীর হয়ে খেলেছেন আশির দশকের প্রথম দিকে। স্মরনীয় সৃত্মির কথা বলতে গিয়ে তারহাম ভাই জানান, নব্বই দশকের প্রথম দিকে মৌলভীবাজারে ডিসি গোল্ডকাপে কুলাউড়া উপজেলা রানার্সআপ হয়েছিল এবং উনাকে সেই টীমের কোচ ও ম্যানেজারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মরহুম রউফ স্যার।মৌলভীবাজারের প্রভাবশালী সংগঠক প্রয়াত দানিয়াল স্যারের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করে কুলাউড়ায় জন্ম নেয়া কৃতি ফুটবলার ঝন্টু দাশকে মৌলভীবাজার একাদশের পরিবর্তে কুলাউড়া একাদশের পক্ষে খেলিয়েছিলেন। সেমিফাইনালে কুলাউড়ার সাথে টানা ১৬ বছর অপরাজিত জাতীয় ফুটবলার সফিকের হাতে গড়া বড়লেখা উপজেলাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে যায় কুলাউড়া। এই টূর্ণামেন্টে খেলোয়াড়দের মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত ভাড়ার টাকাও উনার কাছে ছিলোনা। পরে রউফ স্যারের পরামর্শে উনার ভাই প্রয়াত শহীদ মেম্বারের কোস্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে সিরিয়াল কেটে মৌলভীবাজার নিয়ে যেতেন। যাই হোক কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনে অনন্য সাধারন অবদান রাখার জন্য উনি শ্রদ্ধার সাথে যাদের কথা স্মরন করেন মরহুম ফয়েজ চৌধুরী, মরহুম রউফ স্যার, Abul Fattah ফজলু স্যার, চন্দন স্যার, Enamul Islam এবং মরহুম অাব্দুল মুকিত মিকির কথা। এছাড়াও যাদের সাথে উনি খেলেছেন খলিল, নিজাম, ফয়সল, মতিন, মন্টু, কেফায়েত, কাবুল, লিটন, মান্না, কমরু, ছুরুক, সালাম, বাসিত, নুই, বাদল, বজলু, শহীদুল্লাহ, আকবর, হোসেন, কামাল, জিতু, ফরহাদ, মোজাম্মেল, সিপার, শওকত, লিটু সহ প্রায় ৫০/৬০ জনের নাম উনি স্মরন করেন। ফুটবল ছাড়াও কুলাউড়ায় উনি ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, দাবা এবং এ্যাথলেটিক্সও সমান তালে খেলতেন।
তারহাম ভাইর পৈতৃক নিবাস হাজীপুর ইউনিয়নে হলেও বর্তমানে উনাদের বাসা কুলাউড়া পৌরসভার দক্ষিণ বাজারে। খেলাধুলা ছাড়াও তিনি গান বাজনা বিশেষ করে খুব ভালো গিটার বাজাতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলের জনক এবং বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। উনার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরী এবং মা একসময়ের স্বনামধন্য লেখিকা মরহুমা খুশমন আরা চৌধুরী। তারহাম ভাইর পারিবারিক ঐতিহ্য এবং ক্রীড়াঙ্গনে উনার গর্ব করার মতো অতীতকে মাথায় রেখে আমরা আশা করবো তিনি কুলাউড়ার ফুটবলের উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসবেন। আমরা উনার সুস্বাস্থ্য এবং সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।