ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

এবার নতুন মিশনে ‘সর্বহারা’ সুলতান মনসুর!

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ১০:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯
  • / ৭৬৯ টাইম ভিউ

দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতিতে কোনঠাসা বহুল আলোচিত-সমালোচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে প্রথমে ছিটকে পড়েন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতির মঞ্চ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ছেড়ে একে একে নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া হয়ে শেষে ঠাঁই হয় গণফোরামে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেত্রীর জন্য মায়াকান্না কেঁদে এমপিও নির্বাচিত হন।

এদিকে নির্বাচিত হয়েই স্বভাবসুলভভাবে ‘ইউটার্ন’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, এমন কি রাজনীতিতে ঠাঁই করে দেয়া গণফোরামের সঙ্গেও। জোট ও সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় গণফোরাম থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজনৈতিক জীবনে ধারাবাহিক ডিগবাজির কারণে নিজ নির্বাচনী এলাকা কুলাউড়ায়ও এখন তিনি কারো কাছে আর বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্ব নন, বরং অনেকটাই কোণঠাসা তিনি। তাই রাজনৈতিক চালচুলো হারিয়ে সর্বহারা সুলতান বাধ্য হয়ে নেমেছেন নতুন মিশন নিয়ে। নিজের নেতৃত্ব বজায় রাখার দিবাস্বপ্নে রাজনীতির নতুন আরেকটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছেন কুলাউড়া থেকে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর ভিপির দায়িত্ব পালনকারী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একদা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীনের সঙ্গে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

১/১১-এর সময় সংস্কারপন্থীর কালিমা গায়ে লেপন করে চিরস্থায়ীভাবে ঝরে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে। এরপর লিপ্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনায়।

২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীসভা করে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দেন সুলতান মনসুর। এ সময় তার অনুসারীদের সহযাত্রী হওয়ারও আহবান করেন তিনি। তাৎক্ষনিক তার অনুসারীরা তার এ আহ্বানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরেক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করাও জন্য চেষ্টা শুরু করেন তিনি। মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য গঠনে ছিলেন অগ্রভাগে। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠনেও নেতৃত্ব দেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনেও কাজ করেন তিনি। ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। গণফোরামের প্রার্থী হয়ে বিএনপির ধানের শীষ (তার ভাষায় ধানের ছড়া!) প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন সুলতান মনসুর।

সূত্র জানায়, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কুলাউড়া আওয়ামী লীগ, জামায়াত-বিএনপিসহ বিভিন্ন মতাদর্শী ছাত্রদের নিয়ে গঠন করেছেন জগাখিঁচুড়ি সংগঠন- কুলাউড়া ছাত্রকল্যাণ পরিষদ ও সাইবার ফোর্স। যুবকল্যাণ পরিষদ ও অভিভাবক সংগঠন নামের দুটি সংগঠনও রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কুলাউড়া তথা মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে হাসিঠাট্টা ও নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনীতি সচেতনরা এসব কমিটিকে কুলাউড়ার ভবিষ্যত রাজনীতির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

৯ জুন কুলাউড়া ছাত্রকল্যাণ পরিষদের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন পদে ১৪১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন অভিযোগে দলে কোণঠাঁসা ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের চিহ্নিত কর্মীরাও। সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ছাত্রলীগের নামে অনেক বির্তকিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে আত্মপ্রকাশ ঘটে সুলতান মনসুর সাইবার ফোর্সের। গত রমজানে কুলাউড়ায় ইফতার মাহফিলও করেছে এ কমিটি। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নবাব আলী ওয়াজেদ খান বাবুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগের সঙ্গে পল্টি মেরেছেন অনেক আগেই। গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কুলাউড়া থেকে নির্বাচন করেছেন। কুলাউড়া বিএনপি-জামায়াতসহ ২১ দলের নেতাকর্মীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাকে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিত হয়ে তাদের সঙ্গেও ফের পল্টি মেরেছেন তিনি। তার ধারাবাহিক পল্টিবাজির কারণে বিভ্রান্ত কুলাউড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তার সঙ্গে প্রশাসনিক প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ মিশতেও চান না।

এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচিতেও দেখা মেলেনি তার। তাই নিজের অবস্থানকে সুদূঢ় করতে কুলাউড়া তৈরি করছেন এসব প্লাটফর্ম।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের একক নির্দেশনায় তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি এই সংগঠনের একমাত্র উপদেষ্টা।

তিনি দাবি করেন, এই সংগঠন এলাকার অবহেলিত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার জন্য সংগঠনটি করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে উপজেলাব্যাপী এর কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা তাঁতি লীগের যুগ্ম-সম্পাদক প্রভাষক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তরিক বলেন, কুলাউড়ায় যুবলীগ-যুবদল, ছাত্রলীগ-ছাত্রদলকে পাশ কাটিয়ে যুবকল্যাণ পরিষদ, ছাত্রকল্যাণ পরিষদ গঠন কিসের লক্ষণ? তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে নয়। কুলাউড়ায় কী কোনো ব্যক্তি সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? তা বুঝতে পারছি না।

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, সুলতান মনসুরের কোনো দল নেই। কাজেই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এ এন এম আবেদ রাজা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যে সুলতান মনসুরকে বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু তিনি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। কুলাউড়া বিএনপি তার গণবিরোধী পদক্ষেপকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার সম্পর্কে আমাদের জানার কোনো আগ্রহ নাই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট মনোনিত প্রার্থী এম এম শাহীন বলেন, মানুষের পরিচয় হলো ঈমান ও আকিদা। যে রাজনীতিকের এই নীতি ও নৈতিকতা নেই তাকে পৃথিবীর কোনো মানুষ ভালোবাসতে পারে না। আমি সেই রাজনীতিক সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না।

কুলাউড়ার সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খান বলেন, ‘সুলতান মনসুর আমাদের জোট থেকে প্রার্থী হয়ে এসেছিলেন। আমরা নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তাকে নির্বাচিত করেছি। নির্বাচিত হয়ে আমাদের জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি এখন আমাদের জোটে নেই। আমরা তার সম্পর্কে কিছু জানি না।’   সূত্রঃ সিলেট ভয়েস

পোস্ট শেয়ার করুন

এবার নতুন মিশনে ‘সর্বহারা’ সুলতান মনসুর!

আপডেটের সময় : ১০:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯

দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতিতে কোনঠাসা বহুল আলোচিত-সমালোচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে প্রথমে ছিটকে পড়েন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতির মঞ্চ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ছেড়ে একে একে নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া হয়ে শেষে ঠাঁই হয় গণফোরামে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেত্রীর জন্য মায়াকান্না কেঁদে এমপিও নির্বাচিত হন।

এদিকে নির্বাচিত হয়েই স্বভাবসুলভভাবে ‘ইউটার্ন’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, এমন কি রাজনীতিতে ঠাঁই করে দেয়া গণফোরামের সঙ্গেও। জোট ও সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় গণফোরাম থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজনৈতিক জীবনে ধারাবাহিক ডিগবাজির কারণে নিজ নির্বাচনী এলাকা কুলাউড়ায়ও এখন তিনি কারো কাছে আর বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্ব নন, বরং অনেকটাই কোণঠাসা তিনি। তাই রাজনৈতিক চালচুলো হারিয়ে সর্বহারা সুলতান বাধ্য হয়ে নেমেছেন নতুন মিশন নিয়ে। নিজের নেতৃত্ব বজায় রাখার দিবাস্বপ্নে রাজনীতির নতুন আরেকটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছেন কুলাউড়া থেকে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর ভিপির দায়িত্ব পালনকারী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একদা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীনের সঙ্গে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

১/১১-এর সময় সংস্কারপন্থীর কালিমা গায়ে লেপন করে চিরস্থায়ীভাবে ঝরে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে। এরপর লিপ্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনায়।

২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীসভা করে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দেন সুলতান মনসুর। এ সময় তার অনুসারীদের সহযাত্রী হওয়ারও আহবান করেন তিনি। তাৎক্ষনিক তার অনুসারীরা তার এ আহ্বানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরেক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করাও জন্য চেষ্টা শুরু করেন তিনি। মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য গঠনে ছিলেন অগ্রভাগে। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠনেও নেতৃত্ব দেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনেও কাজ করেন তিনি। ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। গণফোরামের প্রার্থী হয়ে বিএনপির ধানের শীষ (তার ভাষায় ধানের ছড়া!) প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন সুলতান মনসুর।

সূত্র জানায়, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কুলাউড়া আওয়ামী লীগ, জামায়াত-বিএনপিসহ বিভিন্ন মতাদর্শী ছাত্রদের নিয়ে গঠন করেছেন জগাখিঁচুড়ি সংগঠন- কুলাউড়া ছাত্রকল্যাণ পরিষদ ও সাইবার ফোর্স। যুবকল্যাণ পরিষদ ও অভিভাবক সংগঠন নামের দুটি সংগঠনও রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কুলাউড়া তথা মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে হাসিঠাট্টা ও নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনীতি সচেতনরা এসব কমিটিকে কুলাউড়ার ভবিষ্যত রাজনীতির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

৯ জুন কুলাউড়া ছাত্রকল্যাণ পরিষদের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন পদে ১৪১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন অভিযোগে দলে কোণঠাঁসা ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের চিহ্নিত কর্মীরাও। সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ছাত্রলীগের নামে অনেক বির্তকিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে আত্মপ্রকাশ ঘটে সুলতান মনসুর সাইবার ফোর্সের। গত রমজানে কুলাউড়ায় ইফতার মাহফিলও করেছে এ কমিটি। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নবাব আলী ওয়াজেদ খান বাবুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগের সঙ্গে পল্টি মেরেছেন অনেক আগেই। গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কুলাউড়া থেকে নির্বাচন করেছেন। কুলাউড়া বিএনপি-জামায়াতসহ ২১ দলের নেতাকর্মীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাকে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিত হয়ে তাদের সঙ্গেও ফের পল্টি মেরেছেন তিনি। তার ধারাবাহিক পল্টিবাজির কারণে বিভ্রান্ত কুলাউড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তার সঙ্গে প্রশাসনিক প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ মিশতেও চান না।

এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচিতেও দেখা মেলেনি তার। তাই নিজের অবস্থানকে সুদূঢ় করতে কুলাউড়া তৈরি করছেন এসব প্লাটফর্ম।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের একক নির্দেশনায় তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি এই সংগঠনের একমাত্র উপদেষ্টা।

তিনি দাবি করেন, এই সংগঠন এলাকার অবহেলিত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার জন্য সংগঠনটি করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে উপজেলাব্যাপী এর কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা তাঁতি লীগের যুগ্ম-সম্পাদক প্রভাষক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তরিক বলেন, কুলাউড়ায় যুবলীগ-যুবদল, ছাত্রলীগ-ছাত্রদলকে পাশ কাটিয়ে যুবকল্যাণ পরিষদ, ছাত্রকল্যাণ পরিষদ গঠন কিসের লক্ষণ? তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে নয়। কুলাউড়ায় কী কোনো ব্যক্তি সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? তা বুঝতে পারছি না।

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, সুলতান মনসুরের কোনো দল নেই। কাজেই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এ এন এম আবেদ রাজা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যে সুলতান মনসুরকে বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু তিনি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। কুলাউড়া বিএনপি তার গণবিরোধী পদক্ষেপকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার সম্পর্কে আমাদের জানার কোনো আগ্রহ নাই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট মনোনিত প্রার্থী এম এম শাহীন বলেন, মানুষের পরিচয় হলো ঈমান ও আকিদা। যে রাজনীতিকের এই নীতি ও নৈতিকতা নেই তাকে পৃথিবীর কোনো মানুষ ভালোবাসতে পারে না। আমি সেই রাজনীতিক সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না।

কুলাউড়ার সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খান বলেন, ‘সুলতান মনসুর আমাদের জোট থেকে প্রার্থী হয়ে এসেছিলেন। আমরা নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তাকে নির্বাচিত করেছি। নির্বাচিত হয়ে আমাদের জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি এখন আমাদের জোটে নেই। আমরা তার সম্পর্কে কিছু জানি না।’   সূত্রঃ সিলেট ভয়েস