ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

ভাইভার টাকার জন্য কানের দুল বিক্রি করে সন্তানকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন এই মা

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ১১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯
  • / ৬৩৩ টাইম ভিউ

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ   মা। পৃথিবীর বুকে মমতার সর্বৎকৃষ্ট মূর্ত প্রতীক। সন্তানের জন্য মায়েরা যুগে যুগে বিলীন করে গেছেন নিজেদের। এমনই এক মমতাময়ী মায়ের গল্প আমরা বলবো। ভাইভার টাকার জন্য নিজের কানের দুল বিক্রি করে সন্তানকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন এই মা। তাঁর সম্পর্কে আমরা শুনবো তাঁরই সন্তানের কাছ থেকে।

“আমার মায়ের কথা বলব। আমার মা রেস্টুরেন্ট (Restaurant) কথাটি উচ্চারণ করতে পারেন না। এমনকি রেস্টুরেন্টে যেতেও বিব্রত বোধ করেন। চাকরি পাওয়ার পর অনেকবার চেষ্টা করেছি, একবার পেরেছি নিতে, তাও আমার ছেলের অনুষ্ঠানে। এমনকি তিনি ছবিও তুলতে চান না। এটাই মায়ের সঙ্গে আমার ফেসবুকে প্রথম ছবি।

আমি শাকিল আল আমিন, নেত্রকোনার সদর উপজেলার কংশ নদীর তীরে মশুয়া গ্রামে কোন এক কাক ডাকা ভোরে মায়ের কোল জুড়ে এসেছিলাম। আম্মা আমাকে আবু বলে ডাকেন। সম্ভবত গ্রামের ৯০% মা-ই এই নামে ডাকেন। আমি আজ যতটুকুই পারি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি মানুষের দোয়া আর বাবার সাপোর্টে। কিন্তু আমাদের টানাপোড়েনের সংসারে যিনি শক্ত হাতে হাল ধরে বসে আছেন তিনি আমার মা। আমি জানি এটা বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক মায়ের গল্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমি বেকার ঘুরছি, টিউশন ছেড়ে বিসিএস নামক ব্ল্যাক হোলে ডুবে আছি। তবুও মা বলেছেন কিছু একটা হবে, হয়েছে। আম্মা বিসিএস কি, ক্যাডার কি বুঝেন না, এখন বলেন প্রফেসর। সবাই মাকে যখন প্রফেসরের (গ্রামে লেকচারার কেউ বুঝে না, কলেজের শিক্ষক অথবা প্রফেসর) মা বলে সম্বোধন করেন, তিনি তখন দেখি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। আমার পরীক্ষা থাকলেই তিনি জায়নামাজে বসে দীর্ঘক্ষণ প্রার্থনা করতেন। একদিনের ঘটনা, ৩৬তম বিসিএসের ভাইভা দিয়ে বাড়িতে গেলাম, খেয়াল করে দেখলাম আম্মার কানের দুল কানে নেই, দেখতে খালি খালি লাগছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম আম্মা কানের দুল কই? আম্মা থতমত খেয়ে বললেন, গোসল করতে গিয়ে একটা হারিয়ে ফেলেছে তাই আরেকটা খুলে রেখেছেন। পরে দাদির কাছে ঘটনা শুনে আমার চোখের জল সামলাতে পারিনি। আম্মার কাছে ভাইভা দেওয়ার জন্য জুতা ড্রেস কিনতে হবে বলে কিছু টাকা চেয়েছিলাম, তিনি দিয়েছিলেন, দুল বিক্রি করে।

এমন অনেক অনেক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে আমাদের লেখাপড়া করাতে, তা এখন আস্তে আস্তে জানছি। পৃথিবীতে এমন কেউ কি আছেন? মায়ের মতো। পৃথিবীতে কোন খারাপ মা নেই। নিস্বার্থ, নির্ভেজাল, নিখাদ ভালবাসা হলো মা। প্রত্যেক সন্তানের জন্য মা এক অপরিসীম অনুপ্রেরণা। সকল দুঃসময়ের বটছায়া। মায়ের জন্য অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে। চাকরি পাওয়ার পর, আশ্বর্য হলাম আম্মা আমার কাছে কিছু চায়না, চায় আমি যেন ভাল থাকি। যাদের মা নেই, তাদের কিছু কি আছে?

আমার মা এখন আর্থ্রাইটিসের রোগী, জানি কলুর বলদের মতো সংসারের জন্য খেটে তার এই অবস্থা হয়েছে। দূর থেকে মাকে শুধু মিস করি। খুব মিস করি। বলি আল্লাহ আমার মাকে তুমি অনেক অনেক ভালো রেখো। আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুক।

আমি গর্বিত এমন একজন দুখিনী মায়ের সন্তান হতে পেরে। পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য দোয়া ও ভালবাসা। মা ভালো থাকবে সবসমই।”

পোস্ট শেয়ার করুন

ভাইভার টাকার জন্য কানের দুল বিক্রি করে সন্তানকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন এই মা

আপডেটের সময় : ১১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ   মা। পৃথিবীর বুকে মমতার সর্বৎকৃষ্ট মূর্ত প্রতীক। সন্তানের জন্য মায়েরা যুগে যুগে বিলীন করে গেছেন নিজেদের। এমনই এক মমতাময়ী মায়ের গল্প আমরা বলবো। ভাইভার টাকার জন্য নিজের কানের দুল বিক্রি করে সন্তানকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন এই মা। তাঁর সম্পর্কে আমরা শুনবো তাঁরই সন্তানের কাছ থেকে।

“আমার মায়ের কথা বলব। আমার মা রেস্টুরেন্ট (Restaurant) কথাটি উচ্চারণ করতে পারেন না। এমনকি রেস্টুরেন্টে যেতেও বিব্রত বোধ করেন। চাকরি পাওয়ার পর অনেকবার চেষ্টা করেছি, একবার পেরেছি নিতে, তাও আমার ছেলের অনুষ্ঠানে। এমনকি তিনি ছবিও তুলতে চান না। এটাই মায়ের সঙ্গে আমার ফেসবুকে প্রথম ছবি।

আমি শাকিল আল আমিন, নেত্রকোনার সদর উপজেলার কংশ নদীর তীরে মশুয়া গ্রামে কোন এক কাক ডাকা ভোরে মায়ের কোল জুড়ে এসেছিলাম। আম্মা আমাকে আবু বলে ডাকেন। সম্ভবত গ্রামের ৯০% মা-ই এই নামে ডাকেন। আমি আজ যতটুকুই পারি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি মানুষের দোয়া আর বাবার সাপোর্টে। কিন্তু আমাদের টানাপোড়েনের সংসারে যিনি শক্ত হাতে হাল ধরে বসে আছেন তিনি আমার মা। আমি জানি এটা বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক মায়ের গল্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমি বেকার ঘুরছি, টিউশন ছেড়ে বিসিএস নামক ব্ল্যাক হোলে ডুবে আছি। তবুও মা বলেছেন কিছু একটা হবে, হয়েছে। আম্মা বিসিএস কি, ক্যাডার কি বুঝেন না, এখন বলেন প্রফেসর। সবাই মাকে যখন প্রফেসরের (গ্রামে লেকচারার কেউ বুঝে না, কলেজের শিক্ষক অথবা প্রফেসর) মা বলে সম্বোধন করেন, তিনি তখন দেখি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। আমার পরীক্ষা থাকলেই তিনি জায়নামাজে বসে দীর্ঘক্ষণ প্রার্থনা করতেন। একদিনের ঘটনা, ৩৬তম বিসিএসের ভাইভা দিয়ে বাড়িতে গেলাম, খেয়াল করে দেখলাম আম্মার কানের দুল কানে নেই, দেখতে খালি খালি লাগছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম আম্মা কানের দুল কই? আম্মা থতমত খেয়ে বললেন, গোসল করতে গিয়ে একটা হারিয়ে ফেলেছে তাই আরেকটা খুলে রেখেছেন। পরে দাদির কাছে ঘটনা শুনে আমার চোখের জল সামলাতে পারিনি। আম্মার কাছে ভাইভা দেওয়ার জন্য জুতা ড্রেস কিনতে হবে বলে কিছু টাকা চেয়েছিলাম, তিনি দিয়েছিলেন, দুল বিক্রি করে।

এমন অনেক অনেক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে আমাদের লেখাপড়া করাতে, তা এখন আস্তে আস্তে জানছি। পৃথিবীতে এমন কেউ কি আছেন? মায়ের মতো। পৃথিবীতে কোন খারাপ মা নেই। নিস্বার্থ, নির্ভেজাল, নিখাদ ভালবাসা হলো মা। প্রত্যেক সন্তানের জন্য মা এক অপরিসীম অনুপ্রেরণা। সকল দুঃসময়ের বটছায়া। মায়ের জন্য অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে। চাকরি পাওয়ার পর, আশ্বর্য হলাম আম্মা আমার কাছে কিছু চায়না, চায় আমি যেন ভাল থাকি। যাদের মা নেই, তাদের কিছু কি আছে?

আমার মা এখন আর্থ্রাইটিসের রোগী, জানি কলুর বলদের মতো সংসারের জন্য খেটে তার এই অবস্থা হয়েছে। দূর থেকে মাকে শুধু মিস করি। খুব মিস করি। বলি আল্লাহ আমার মাকে তুমি অনেক অনেক ভালো রেখো। আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুক।

আমি গর্বিত এমন একজন দুখিনী মায়ের সন্তান হতে পেরে। পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য দোয়া ও ভালবাসা। মা ভালো থাকবে সবসমই।”