বৃত্তাকার মাড়াইয়ের স্থলে যান্ত্রিকতার আসন….
- আপডেটের সময় : ০৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭
- / ১৭০৫ টাইম ভিউ
আজ থেকে ৫- ৭ বছর পূর্বেও কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে গরু ও মহিষ দ্বারা ধান মাড়াই কাজের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিগত একযুগ পূর্বের স্থানীয় তথ্যমতে জানা যায়, তখনকার কৃষক ও কৃষাণীদের গরু ও মহিষ ছাড়া ধান মাড়াইয়ের বিকল্প চিন্তা ভাবনাই ছিলনা। তখন গরু দিয়ে এক একটি মাড়াইয়ে সময় লাগতো ঘন্টা দেড়েক। প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে মাড়াই দেয়া হতো।
বিভিন্ন এলাকার প্রবীন একাধিক কৃষক জানান, অগ্রহায়ণ আসলেই ধান কেটে বাড়িতে আনা হতো, মাড়াই কাজে সহযোগীতা, ধান উতলে রোদে শুকানো, বাছাই ও জাতে জাতে আলাদা ভাবে রাখার দায়িত্ব ছিল কৃষাণীদের। সেই সময়ে কৃষকরা ধান কাটার পূর্বে কৃষাণীরা বসতবাড়ির উঠানের একটি অংশ গোবর দিয়ে লেপে উতল বানিয়ে রাখতেন। কৃষকরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধান কাটা শেষে কাধে বহন করে বাড়িতে নিয়ে আসার পর বিকেলে উতলে খড়ের বিচালিসহ ধান ছিটিয়ে ৩ থেকে ৫ টি গরু অথবা ১ থেকে ২ টি মহিষ দিয়ে বৃত্তাকারে মাড়াইর মাধ্যমে খড় থেকে ধান আলাদা করতেন। যার ফলে, ধান মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে সময় ও শ্রম দুটোই লাগতো অতিরিক্ত। বর্তমানে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী সেই দৃশ্যসমূহ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্তমান যুগে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির আগমনে কৃষক পরিবারের পরিশ্রম অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এখন জমি হাল-চাষ ও মাড়াই কাজে গরু-মহিষের স্থলে “যান্ত্রিকতা আসন করে নিয়েছে”।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ধান কাটার মহোৎসব চলছে। ধান মাড়াই, বাছাই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক পরিবারের সদস্যদের। এরই সাথে কদর বেড়েছে দিন মজুর শ্রমিকদেরও। ধান কাটা ও বহন কাজে শ্রমিকেদের হাজিরা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দিয়েও শ্রমিক পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এদিকে কৃষকরা ধান কেটে উঠানের কুনে ভিন্ন জাতের ধানের পৃথক পৃথক স্তুপ করে রেখেছেন। কাটা ধান মাড়াই দিতে দু’একদিন আগে থেকে সিরিয়াল নিতে হচ্ছে যান্ত্রিক মাড়াইকল ওয়ালাদের কাছে থেকে। সিরিয়াল অনুযায়ী মাড়াই দিতে আসছেন মাড়াই মেশিনওয়ালারা।
এছাড়াও কুলাউড়া ও জুড়ীর কয়েকটি গ্রামে “কম্বাইন হারভেস্টার” নামক একটি নতুন যন্ত্র ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ মেশিন দ্বারা মাঠে ধান কর্তন ও মাড়াই এক সাথে করা যায়। কৃষকদের ধারণা আগামী বছরগুলোতে এ যন্ত্রের কদর বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এতে করে কৃষকরা শ্রমিক খোঁজা ও অতিরিক্ত ব্যয় থেকে রক্ষা পাবে। সেই সাথে বাঁচবে মূল্যবান সময়টুকুও।