রাজনৈতিক সরকার আসলেই ইচ্ছেমত বিচারক নিয়োগ দেয়: প্রধান বিচারপতি
- আপডেটের সময় : ১২:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭
- / ১২৮৭ টাইম ভিউ
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারাঙ্গণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের সংখ্যা নির্দ্দিষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
তিনি বলেছেন, আমাদের হাইকোর্টে বিচারকের সংখ্যা নির্দ্দিষ্ট করা নেই। ফলে প্রতিটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলেই ইচ্ছেমত হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সময় আসছে আমাদের হাইকোর্টে বিচারক সংখ্যা নির্দ্দিষ্ট করে দেয়ার।
তিনি বলেন, বিচারকের সংখ্যা নির্দ্দিষ্ট করে দেয়া থাকলে রাজনৈতিক প্রভাব কমে যায়। এই রাজনৈতিক প্রভাব যতই কমবে ততই বিচার বিভাগের জন্য মঙ্গল।
সদ্য অবসরে যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার আজীবন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, গত তিন বছরে সুপ্রিম কোর্টের উন্নয়ন বরাদ্ধের জন্য একটি টাকাও দেয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো টাকা বরাদ্দ হয়নি। অথচ জাতীয় সংসদের জন্য উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া সন্ত্রাসের কারণে দেশের সব জায়গায় নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের বাজেট থেকে এবারের বাজেটে বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্ধ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে বাজেটের বরাদ্দ প্রত্যাহার করে একেবারে ‘শূন্য’ করে দেয়া হচ্ছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে বিচার বিভাগ চলবে কিভাবে? এটা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার যদি মনে করে প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে তাহলে আমি বলব ‘হ্যা’। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বার্থেই রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন, বিচারকদের অবস্থা ও বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য প্রধান বিচারপতি আরো বলবেন। এ ব্যাপারে আমি দ্বিধান্বিত হব না।
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনটির বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির এজলাস ও খাস কামরার ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রুম। স্থান সংকুলানের অভাবে এই ভবনের বারান্দায় হাইকোর্টের বিচারকদের জন্য খাস কামরা করা হয়েছে। যেখানে দু’জন বিচারককে একসঙ্গে বসতে হয়। হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনটিও ভঙ্গুর অবস্থায়। এই বিবেচনায় ২০ তলা একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়। যেটি প্রি-একনেকে পাস হয়ে একনেকের বৈঠকে গেলে অজ্ঞাত কারনে তা ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, যে পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং মূল ভবনটি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে তাতে মনে হয় এটি বেশিদিন টিকবে না। এই ভবন ভেঙ্গে পড়লে কি অবস্থা দাড়াবে বলা মুশকিল? তাই আপনার মাধ্যমে সরকারকে বলছি শুধু সুপ্রিম কোর্ট কেন পুরো বিচার বিভাগের যে অবস্থা সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের প্রকল্পটি যাতে একনেকে পাস হয় সেদিকে দৃষ্টি দিন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তিনি প্রথম নারী যিনি ১৯৭৫ সনে প্রথমবারের মতো পুরুষ বিচারকের পাশাপাশি যোগদান করেছিলেন বিচার বিভাগে। আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর উজ্জল পথচলায় সমৃদ্ধ হয়েছে বিচার বিভাগ। তাঁকে অনুসরণ করে অনেক নারীর পদার্পন ঘটেছে আমাদের বিচার বিভাগে। ফলস্বরূপ আজ বাংলাদেশের মোট বিচারকের প্রায় ২৪ ভাগই হলেন নারী। প্রতিবেশী সকল দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারী বিচারকের এই হার অনেক বেশি। এমনকি পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের চেয়েও এই হার উত্সাহব্যঞ্জক। আর সেই নারী বিচারকের অগ্রদূত বিচারপতি নাজমুন আরা।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরার ন্যায় বিচার করার আগ্রহ ছিলো প্রবল। কারন বিচারক হিসাবে বিচারপ্রার্থীকে সুবিচার দিতে হবে। ন্যায় বিচারের আগ্রহ না থাকলে সেটি সম্ভব নয়।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, বিচার নিয়ে কখনো তাড়াহড়ো করতে না বিচারপতি নাজমুন আরা। তিনি আমাতে বলতেন বিচারপ্রার্থীরা নানা ব্যাথা নিয়ে আদালতে এসেছেন। ভালো করে শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত।
নারী জজদের উদ্দেশে বিচারপতি নাজমুন আরা বলেন, গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা দিয়ে বিচার করতে হবে। এখানে অবহেলা বা অমনোযোগিতার কোনো সুযোগ নেই।
এসোসিয়েশনের সভাপতি জেলা জজ তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ ও অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হোসনে আরা আকতার। অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরাকে আজীবন সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান বিচারপতি এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।