নিজেকে সম্মানিত মনে করছি: ট্রাম্প
- আপডেটের সময় : ০১:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭
- / ১৪৭৭ টাইম ভিউ
জার্মানির হামবুর্গে শিল্পোন্নত ২০টি দেশের জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের শুরুতে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে শুক্রবার সকালে সম্মেলনের প্রথমদিনেই তারা প্রাথমিক সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করেন।
সিএনএন জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে আধঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছে। পুতিনের সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। উত্তরে পুতিন রুশ ভাষায় বলেন, আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি আনন্দিত। বৈঠকে এ দুই নেতার দোভাষীর ভূমিকা পালন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ, ইউক্রেন ইস্যু ও সিরিয়া সংকট নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামত করতে সম্মত হন ট্রাম্প ও পুতিন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে ট্রাম্পের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ’দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আপনার সঙ্গে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছি। তবে ফোনালাপই যথেষ্ট নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মীমাংসা করতে চাই, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ অবশ্যই প্রয়োজন। আমি আশা করি, আপনি যেমনটা বলেছিলেন, এ বৈঠক থেকে একটা ইতিবাচক ফলাফল আসবে।’
গত জানুয়ারি এবং মে মাসে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের পর ক্রেমলিন এবং হোয়াইট হাউস থেকে তাদের বক্তব্যের সারাংশ প্রকাশ করা হয়েছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার পোল্যান্ড সফরকালে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করেন।
এদিকে জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগেই জার্মানির হামবুর্গ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৭৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেলের সাক্ষাতের এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ১২ হাজার বিক্ষোভকারী মুখোশ পরে সম্মেলন ভেন্যুর কাছেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তারা ট্রাম্পকে ‘নরকে স্বাগত’ বলে স্লোগান দিতে দিতে এগোতে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।
সেখানকার একটি ভবনে তারা স্লোগান লিখেছে, ‘জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে সীমানাহীন সংহতি, জি-২০-কে আক্রমণ কর।’
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একপর্যায়ে জলকামান ও পেপার স্প্রে করে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পানির বোতল, পাথর ও মশাল ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দেয় এবং যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের একটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে বিভ্রান্ত করতে বিক্ষোভকারীরা নানা দিকে ধারাবাহিকভাবে লেজার রশ্মি ছোড়ে।
এ ছাড়া পুলিশের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভয়াবহ বিক্ষোভের কারণে সম্মেলন সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে। ট্রাম্পপত্নী মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেয়া অন্য নেতাদের স্ত্রীদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তার হোটেল থেকে বের হতে পারেননি।
রয়টার্স জানিয়েছে, জার্মান অর্থমন্ত্রী উলফগ্যাং শহরের নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের একটি অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর বিক্ষোভের আয়োজকরা জি-২০ সম্মেলনস্থলের দিকে যাত্রা বাতিল করে। তবে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা দখল করে রাখায় বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিবিসি জানায়, হামবুর্গে সম্মেলনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় প্রায় ২০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা যেন সম্মেলনস্থলে পৌঁছতে না পারে সে জন্য ভেন্যুর আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তারপরও বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।
জি-২০ সম্মেলনের দু’দিন শুক্র ও শনিবার হামবুর্গজুড়ে অন্তত এক লাখ বিক্ষোভকারী উপস্থিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।