পাত্র ‘বৃটিশ সিটিজেন’ শুনলেই যারা মেয়ে বিয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে যান
- আপডেটের সময় : ০৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৬৮ টাইম ভিউ
পাত্র ‘বৃটিশ সিটিজেন’ শুনলেই যারা মেয়ে বিয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে যান!
সুচনা (ছদ্মনাম) একজন এসছেন ডিপ্রেশন নিয়ে। বেশ কদিন যাবৎ সব সময় তার মন খুব খারাপ থাকে। তিনি কোন কিছুতেই আর আনন্দ বা আগ্রহ বোধ করেন না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বেঁচে থাকতে তার আর ইচ্ছে হয়না। তার ডিপ্রেশন কারন হিসেবে যা বোঝা গেলো তিনি স্বামী কতৃক চরম নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার। তার স্বামী একজন ‘স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার’ এর পেশেন্ট।
সুচনার স্বামী যে মানসিক রোগ ‘স্যাক্সুয়াল স্যাডিসম ডিসওর্ডার’ এটি তিনি আজই প্রথম জানলেন। রোগ’টা কি এ সম্পর্কে তিনি সম্যক ধারণাও পেলেন।
“সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার” রোগী ‘স্যক্সুয়াল’ একোটিভিটির পূর্বে তার বেড পার্টনার কে বেধড়ক পেটায় থাকে, গালি গালাজ করতে থাকে, সেই সাথে চলে তাকে নিয়ে নানান অপমান সুচক, এবং সন্দেহ মুলক অসভ্য কথাবার্তা। এতে রোগী সেক্সুয়াল আনন্দ পান। এটা একটা পৈশাচিক মূহুর্ত।
যাহোক, সুচনা বিগত ১৭ বছর এসব সহ্য করতে করতে এখন আর পারছেন না। এখন তিনি এতোটাই হতাশাগ্রস্ত এবং বিরক্ত ও যে তিনি স্বামী’কে এবার তালাক দিবেনই। আর পারছেন না, বরং একাই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। মাঝেমধ্যে তিনি ভাবেন সুইসাইড করতে। তার যাবার জায়গা নেই।
স্যাডিস্ট লোকটা তাকে বিয়ে করেছে অনেকটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। লন্ডন থেকে প্রথমে সে সূচনা কে রং নাম্বার হিসেবে ফোন দেয়। সুন্দর সুন্দর কথা বলে রঙীন স্বপ্ন দেখায়। কলেজ পড়ুয়া সুচনা ফাঁদ বুঝেনা। অবশেষে পালিয়েই বিয়ে করে। যার ফলে পরিবার থেকে বিচ্যুত। তাই তার ফিরে যাবার পথ ছিলো না।
তার বিয়ের ১৭ বছর চলছে। সন্তান আছে ১ টি। সন্তান কে ইংল্যান্ড নিয়ে গেছে স্যাডিস্ট বাবা। ‘স্যাডিস্ট’ সন্তান কে নিয়েছে কিন্তু ‘স্ত্রী’ কে নেয়নি, এবং সে নিতে চায়ও না। কারন স্যাডিস্টটা প্রায়ই বলে, “তোকে ইংল্যান্ড নিলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আমার নামে বদনাম করবি”।
সুচনা (ছদ্মনাম) জানালেন তার গায়ে এমন কোন জায়গা নেই যে মারা বা কাটার দাগ নেই। আর অপমান সূচক কথাবার্তা গুলো এতোটাই নীচ প্রকৃতির যে তিনি উচ্চারণই করতে পারলেন না, কেবল কাঁদতে থাকলেন।
ভদ্র মহিলার সাথে আলাপে আরো বুঝা গেলো সেই স্যাডিস্ট লোকটা আবার ইরেকটাইল ডিসফাংশন যেমন আছে তেমনি আছে তার প্রিম্যাচ্যুর ইজাকুলেশন। মারামারি ও গালিগালাজ এর সময়ই তার অর্গাজম হয়ে যায়। অর্গাজম হলে সে তাৎক্ষণিক কিছুটা নরম মেজাজের হতে থাকে। নির্যাতন বন্ধ করে তবে তার ভয়ানক আচরণ নিয়ে কখনোই সে অনুতপ্ত হয়না। রাত হলে আবার শুরু হয় একই কায়দায় পৈশাচিক নির্যাতন।
এখানে একটা কথা বলে রাখি সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার রোগের এর সাথে অনেক সময় এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ও থাকে। এতে ঘঠে যায় মারাত্মক দূর্ঘটনা, হত্যাকাণ্ড। এ এক ভয়ানক পরিস্থিতি।
এটা স্যাডিস্টের ছিলো ২য় বিয়ে। প্রথম স্ত্রী ছিলো বাংলাদেশ বংশদ্ভূত বৃটিশ সিটিজেন। সে পুলিশ মামলার আশ্রয় নিয়ে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে বিয়ের এক বছরের মাথায়ই।
আর সুচনা তার দ্বিতীয় বউ। সুচনা ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের সহজ সরল পরিবারের অল্প বয়সী মেধাবী, পরমা সুন্দরী কলেজ ছাত্রী।
সূচনা ১৭ বছর মুখ বুজে সব সহ্য করে ছিলো শুধু একটি আশায়, হয়তো লোকটা ভালো হয়ে যাবে অথবা সে লন্ডন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তার আর লন্ডন যাওয়া হয়নি।
এখন নাকি সেই স্যাডিস্ট আবারো তার নাম পরিচয় গোপন করে বিদেশী সিম কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়া কম বয়সী, নিম্নবিত্ত, সুন্দরী মেয়েদের মোবাইলে ফোন করে প্রেমের অভিনয় করে, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং করে।
এ পৃথিবীতে সূচনার আপন বলতে কেউ নেই। ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করাতে এসে এবারই প্রথম সব তার জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী বললেন একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে। স্বামীর সাথে তার ভাই বোনের কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া তারা সবাই লন্ডন থাকে।
‘স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার’ রোগে ভোগা তার স্যাডিস্ট স্বামী বাংলাদেশ বংশদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক টাকাপয়সা ও আছে। এ পরিচয় দিয়েই সে ব্ল্যাক মেলিং করে। প্রতিবছর নভেম্বর ডিসেম্বর এলে সে দেশে আসে। এবারও আসবে, কিন্তু সুচনা এবার ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
চিকিৎসা জন্যে এর আগে তিনি মাঝেমধ্যে ফ্লুপেনটিক্সল ম্যালিট্রাসিন নামক ঔষধ সেবন করতেন। তবে দীর্ঘদিন এটা সেবনে অনেক সময় সুইসাইডল থিংক চলে আসে। তার ও এরকম হয়েছে।
সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা অনেক ক্ষেত্রে এন্টিসাইকোটিক দিয়ে অত্যন্ত সফল ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
সুচনা তার স্বামীর চিকিৎসা করাতে চাননা। তার জীবন শেষ হয়ে গেছে আঘাতে আঘাতে, অপমানে, অপদস্তে। লোকটার ভয়ংকর চেহারা তার চোখে ভাসলেই সে ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে।
ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস ডিএমসি, কে-৫২,
বিসিএস -২৪
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।
সিলেট মেডিকেল কলেজ।