ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

ডিজিটাল নগরীতে সিলেটে এখন ‘নৌকা ও ভেলাই ভরসা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
  • / ২৭৯ টাইম ভিউ

২০২০ সালে সিলেট মহানগরকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল সিটি’ ঘোষণা করা হয়। মাটির নিচে বিদ্যুতের তার (লাইন), অপরাধী শনাক্তে বিশেষায়িত ক্যামেরা ও নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু হয় সিলেট নগরে। তবে এতকিছুর ভিড়ে এবারের বন্যায় দেশের এই প্রথম ডিজিটাল নগরের বেশিরভাগ এলাকা চলে গেছে পানির নিচে। সড়কে চলছে কলাগাছের ভেলা, সিলেটি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ভোরা’। জরুরি কাজ সারতে নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় লোকজনকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

এছাড়া নগরের অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহরে গাড়ি নিয়ে বের হতে না পেরে অনেকে প্লাস্টিকের নৌকায় বের হচ্ছেন। অনেকে আবার সখের বশেও এমন নৌকা নিয়ে সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নগরের ঘাসিটুলা এলাকার স্কুলছাত্রী ওয়াজিহা মাহমুদ আফরিন কলাগাছের ভেলা দেখে বলে ওঠে দেশের ডিজিটাল নগরে এখন কলাগাছের ভেলা চলছে।

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সুরমা নদী উপচে নগরের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। মহানগরের বেশিরভাগ মানুষ এখন পানিবন্দি। নগরের বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে বলা হচ্ছে- ‘বন্যার পানি দ্রুত বাড়ছে। বাসার জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চলে যান।’

সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আমার ওয়ার্ডে। এখানকার প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। মসজিদে মাইকিং করে লোকজনকে বলা হচ্ছে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য। এই ওয়ার্ডে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

তাজ বলেন, লোকজন যেভাবে পারে সেভাবে চলছেন। অনেকেই গাড়ির বিকল্প হিসেবে কলাগাছ দিয়ে ভেলা তৈরি করে চলাচল করছেন।

সুরমা নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরীর নতুন নতুন এলাকা। মঙ্গলবার দিনভর প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, কামালগড়, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, মাছুদিঘির পাড়, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলা ও ঘাসিটুলা, মজুদারপাড়া, শামিমাবাদসহ অন্তত ৬০টি এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট এবং বাজার ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকার রাস্তায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি রয়েছে।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাটের শত শত দোকান ও গোডাউন পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিঘাটের বৃহত্তম চালের আড়তদার মেসার্স হাজী আলকাস ট্রেডার্সসহ বিভিন্ন দোকানের শত শত চালের বস্তা পানিতে নিমজ্জিত। গোডাউনে থাকা প্রায় চার হাজার চাউলের বস্তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলকাস ট্রেডার্সের এই ব্যবসায়ী। পানিতে ভিজে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. কয়েস আহমদ।

সিলেট চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জিয়া উদ্দিন বলেন, শত শত দোকান পানিতে নিমজ্জিত, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কোটি টাকার উপরে। এত দ্রুত পানি ঢুকেছে যে মাল সরানোর যথেষ্ট সময় ব্যবসায়ীরা পাননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। সিলেটের উজানে অর্থাৎ ভারতে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদ-নদীর পানি।

পোস্ট শেয়ার করুন

ডিজিটাল নগরীতে সিলেটে এখন ‘নৌকা ও ভেলাই ভরসা

আপডেটের সময় : ০৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২

২০২০ সালে সিলেট মহানগরকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল সিটি’ ঘোষণা করা হয়। মাটির নিচে বিদ্যুতের তার (লাইন), অপরাধী শনাক্তে বিশেষায়িত ক্যামেরা ও নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু হয় সিলেট নগরে। তবে এতকিছুর ভিড়ে এবারের বন্যায় দেশের এই প্রথম ডিজিটাল নগরের বেশিরভাগ এলাকা চলে গেছে পানির নিচে। সড়কে চলছে কলাগাছের ভেলা, সিলেটি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ভোরা’। জরুরি কাজ সারতে নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় লোকজনকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

এছাড়া নগরের অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহরে গাড়ি নিয়ে বের হতে না পেরে অনেকে প্লাস্টিকের নৌকায় বের হচ্ছেন। অনেকে আবার সখের বশেও এমন নৌকা নিয়ে সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নগরের ঘাসিটুলা এলাকার স্কুলছাত্রী ওয়াজিহা মাহমুদ আফরিন কলাগাছের ভেলা দেখে বলে ওঠে দেশের ডিজিটাল নগরে এখন কলাগাছের ভেলা চলছে।

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সুরমা নদী উপচে নগরের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। মহানগরের বেশিরভাগ মানুষ এখন পানিবন্দি। নগরের বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে বলা হচ্ছে- ‘বন্যার পানি দ্রুত বাড়ছে। বাসার জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চলে যান।’

সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আমার ওয়ার্ডে। এখানকার প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। মসজিদে মাইকিং করে লোকজনকে বলা হচ্ছে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য। এই ওয়ার্ডে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

তাজ বলেন, লোকজন যেভাবে পারে সেভাবে চলছেন। অনেকেই গাড়ির বিকল্প হিসেবে কলাগাছ দিয়ে ভেলা তৈরি করে চলাচল করছেন।

সুরমা নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরীর নতুন নতুন এলাকা। মঙ্গলবার দিনভর প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, কামালগড়, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, মাছুদিঘির পাড়, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলা ও ঘাসিটুলা, মজুদারপাড়া, শামিমাবাদসহ অন্তত ৬০টি এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট এবং বাজার ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকার রাস্তায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি রয়েছে।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাটের শত শত দোকান ও গোডাউন পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিঘাটের বৃহত্তম চালের আড়তদার মেসার্স হাজী আলকাস ট্রেডার্সসহ বিভিন্ন দোকানের শত শত চালের বস্তা পানিতে নিমজ্জিত। গোডাউনে থাকা প্রায় চার হাজার চাউলের বস্তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলকাস ট্রেডার্সের এই ব্যবসায়ী। পানিতে ভিজে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. কয়েস আহমদ।

সিলেট চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জিয়া উদ্দিন বলেন, শত শত দোকান পানিতে নিমজ্জিত, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কোটি টাকার উপরে। এত দ্রুত পানি ঢুকেছে যে মাল সরানোর যথেষ্ট সময় ব্যবসায়ীরা পাননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। সিলেটের উজানে অর্থাৎ ভারতে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদ-নদীর পানি।