ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে কুলাউড়ায় প্রতিষ্টা হয়েছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থা

আহসানুজ্জামান রাসেল
  • আপডেটের সময় : ১২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭৪১ টাইম ভিউ

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে কুলাউড়ায় প্রতিষ্টা হয়েছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থা

আহসানুজ্জামান রাসেল

বাড়ন্ত তারুণ্যের সময় কাটে পরিবারের জন্য, পাড়া মহল্লার জন্য, অনিয়মের প্রতিবাদের জন্য, দেশ ও জাতির তরে কিছু করার জন্য। এই চিন্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হলো সততা এবং দেশপ্রেম তথা এলাকাপ্রেম। আর এলাকার মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে ক্রীড়া, শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চার উন্নয়ন, সমাজসেবা এবং তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রত্যয়ে জাতীয় তরুণ সংঘ প্রতিষ্টার ঠিক তিন মাস পর ১৯৭৮ সালের ২০ জুলাই কুলাউড়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থার।

প্রতিষ্টাকালীন সদস্য ছিলেন আটাশ জন যাদের মধ্যে অন্যতম এনামুল ইসলাম, আবুল ফাত্তাহ ফজলু, মিকি, জুলন, এনাম, হেলুন, ভানু, বিজু, সিরাজ, মিন্টু, বিভু, খোকন, মহসিন এবং লুৎফুর।অনুজদের মধ্যে খলিল, মান্না, মতিন, বাদল, আকবর, আব্দুল হাই, হোসেন সহ আরো অনেকেই। প্রতিষ্টাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হোন সৈয়দ বাকী বিল্লাহ শিবলী এবং সাধারণ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আবুল ফাত্তাহ ফজলু স্যার।

সমাজসেবা কার্যালয়, কুলাউড়া কর্তৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পর্যায়ের প্রথম যুব সংগঠন সমস্বরের অস্থায়ী কার্যালয় করা হয় দক্ষিণ বাজারের বিনিময় লাইব্রেরীর পিছনের কক্ষ।

আলোড়ন সৃষ্টি করে জন্ম নেয়া এই সংগঠনের প্রথম কার্যক্রম ছিলো টিপ সহির বদলে নাম লেখা শেখানো। তখনকার সময় অনেক সাধারণ মানুষ নিজের নাম লেখতে জানতেন না। ফলে যত্রতত্র তাঁদের টিপ সই দিতে হতো। তাঁদের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়ার প্রয়াসে আটাত্তরের ডিসেম্বরে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়। কুলাউড়া শহরে চারটি স্থানে যথাক্রমে হাইস্কুল চৌমুহনী, দক্ষিণবাজার চৌমুহনী, ষ্টেশন রোড চৌমুহনী ও উত্তরবাজার লংলা প্রেসের সামনে মোট চারটি বুথ স্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে সংঘটনের প্রতিষ্টাতা সম্পাদক আবুল ফাত্তাহ জানান “আমাদের ব্যক্তিগত চাঁদায় কাগজ-পেন্সিল ক্রয় করা হয়। প্রতিটি বুথে ছয়/সাতজন ভাগ হয়ে কাজ করতেন। প্রথমে অনেক পরিচিতজনরা লজ্জায় আসতে চাইতো না! অফিস-আদালতে গিয়ে টিপসই দেয়া বেশী লজ্জার, এটা বোঝানোর পর তাঁরা বুথে আসলো। তিনদিন ব্যাপী এই কার্যক্রমে চারটি বুথে আমরা একহাজার তিন’শর বেশি লোককে নাম লেখা শেখাই! সে সময় এ উদ্যোগটি খুব প্রশংসনীয় হয়েছিল।”

দ্বিতীয় কার্যক্রম নৈতিকতা, শিক্ষা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে জনগণকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তায় থানার উত্তর পূর্ব পাশে চৌমুহনীতে নীতিবাক্য সংবলিত বিশাল আকারের একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এতে ৫ টি নীতি বাক্য লেখা ছিলো…

১. শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ৩. ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান সমান অপরাধ।
৪. অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। ৫. ভেবে দেখুন, আপনার উপার্জন কি সৎ পথে?

সেই সাইনবোর্ডটা শহরে দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, জাতীয় তরুণ সংঘ, কুলাউড়া শাখার সদস্যরা কখনো-কখনো এ কাজে সমস্বরের সাথে সম্পৃক্ত হতেন।

আরেকটি কার্যক্রম ছিলো ফজলু স্যারের বাড়ীতে সব্জি খামার প্রকল্পে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষের সাথে এক বিঘা জমিতে উন্নত মানের টমেেটো চাষ করা। ফলন ভালো হয়েছিল! সব্জি বিক্রি করে মোটামুটি একটি ফান্ড তৈরী হয়েছিল। তবে আসল উদ্দেশ্য ছিলো সবজি চাষ সম্পর্কে জানা এবং শেখা।

সদস্যদের পাঠোভ্যাস গড়ে তোলার জন্য অনেক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে গঠিত হয় পাঠাগার। তৎকালীন সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ মিজানুর রহমান শেলী কুলাউড়া সফর করেন এবং সমস্বরের কার্যক্রম পরিদর্শন করে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মূলত খেলাধুলাতেই সমস্বরের সম্পৃক্ততা ছিলো বেশী বিশেষ করে ফুটবলে।কুলাউড়ায় প্রথম ফুটবল লীগ চালু এবং সফলভাবে সম্পন্ন করে সমস্বর। এছাড়াও কুলাউড়ার ভালো ফুটবলারদের বেশীরভাগই সমস্বরের হয়ে খেলতেন। কুলাউড়া মাঠে সমস্বর যেসব তারকা ফুটবলারদের জন্ম দিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কুলাউড়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার খলিলুর রহমান, পোস্টার বয় গিয়াস উদ্দিন মান্না, প্রয়াত আব্দুল মুকিত মিকি, মতিউর রহমান ও বাদল দাস

ফুটবল, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টনের বেশ কিছু প্রতিযোগীতারও আয়োজন করেছে সমস্বর। নিজেদের এবং অন্যদের আয়োজিত প্রতিটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতো সমস্বর। আবাহনী মোহামেডানের মতো সমস্বর তরুণ সংঘ ছিলো প্রতিটি টুর্নামেন্টের প্রাণ। খেলাধুলা ছাড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমস্বরের চেয়ে তরুণ সংঘের বিচরণ ছিলো বেশী। আবুল ফাত্তাহ এবং ভানু দা ছাড়া তৎকালীন সময়ে বেশীর ভাগ সাংস্কৃতিক কর্মী মাগুরায় বসবাস করতো বলে সমস্বরের চেয়ে তরুণ সংঘের গান বাজনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেশী ছিলো।

আনন্দ আর উত্তেজনার কথা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হতো তরুণ সংঘ এবং সমস্বর। ফাইনাল খেলার দিন পুরো কুলাউড়া দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তো। টুকটাক ঝগড়া হয়েছে ঠিকই, কারণ প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্ধীতা ছিলো তাই ঐ বয়সে টেনশনও ছিলো। কিন্তু মারামারি বলতে যেটা বুঝায় তা কখনো হয়নি। চির তরুণ মাকু ভাই এবং সিনিয়রদের মধ্যস্থতায় সব ঝগড়া শুরুতেই শেষ হয়ে যেতো।

পরবর্তীকালে সমস্বরের কান্ডারীরা যে যার পেশায় মনোনিবেশ করায় এবং অনেকে বিদেশ চলে যাওয়ায় সমস্বরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে মাক্কু ভাইরে আমুদে নেতৃত্বে এবং বুলবুল ভাই, ফয়সাল ভাই এবং লিটন ভাইদের কুলাউড়া অবস্থান করায় তরুণ সংঘের কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো এবং এখনো আছে।

বিভিন্ন সময়ে সমস্বরের সভাপতি/সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল ইসলাম, কুলাউড়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগঠক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত আব্দুল মুকিত মিকি, সাবেক জনপ্রিয় ফুটবলার গিয়াস উদ্দিন মান্না সহ আরো অনেক জনপ্রিয় সংগঠক।

স্মৃতিচারণে এনামুল ইসলাম এনাম বলেন “মুরব্বী কিংবা সিনিয়রদের সামনে নিয়ে আসার প্রেক্ষাপঠ এখন আর আগের মতো নেই। আগে মুরব্বীরা ভুল শুদ্ধ যাই বলতেন আমরা মেনে নিতাম পাছে বেয়াদবি হয় সেই চিন্তায়। আমাদের সন্তানেরা এখন অনেক কিছু জানে, দেখে এবং জ্ঞান রাখে। আর তাই তারা যুক্তি দেখিয়ে মত প্রকাশ করে বলে আমাদের পিছু হঠতে হয়। জয় হউক জ্ঞান বিজ্ঞানের।”

কালের গর্ভে সমস্বর বিলীন হয়ে গেলেও সংগঠনটির অতীত কার্যক্রম নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। সমস্বরের কান্ডারীরা বর্তমানে উচ্চতর টেকনোলজির যুগে আমাদের হাতের নাগালেই আছেন। বিশেষ করে ফজলু স্যার, এনাম চাচা, সোহাগ ভাই, খলিল ভাই, মান্না ভাই কিংবা মতিন ভাইকে এই প্রজন্ম যদি কোন কাজে লাগাতে চায় আমার বিশ্বাস উনার কাউকে নিরাশ করবেননা।

পোস্ট শেয়ার করুন

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে কুলাউড়ায় প্রতিষ্টা হয়েছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থা

আপডেটের সময় : ১২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০২১

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে কুলাউড়ায় প্রতিষ্টা হয়েছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থা

আহসানুজ্জামান রাসেল

বাড়ন্ত তারুণ্যের সময় কাটে পরিবারের জন্য, পাড়া মহল্লার জন্য, অনিয়মের প্রতিবাদের জন্য, দেশ ও জাতির তরে কিছু করার জন্য। এই চিন্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হলো সততা এবং দেশপ্রেম তথা এলাকাপ্রেম। আর এলাকার মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে ক্রীড়া, শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চার উন্নয়ন, সমাজসেবা এবং তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রত্যয়ে জাতীয় তরুণ সংঘ প্রতিষ্টার ঠিক তিন মাস পর ১৯৭৮ সালের ২০ জুলাই কুলাউড়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিলো সমস্বর প্রগতিশীল যুব সংস্থার।

প্রতিষ্টাকালীন সদস্য ছিলেন আটাশ জন যাদের মধ্যে অন্যতম এনামুল ইসলাম, আবুল ফাত্তাহ ফজলু, মিকি, জুলন, এনাম, হেলুন, ভানু, বিজু, সিরাজ, মিন্টু, বিভু, খোকন, মহসিন এবং লুৎফুর।অনুজদের মধ্যে খলিল, মান্না, মতিন, বাদল, আকবর, আব্দুল হাই, হোসেন সহ আরো অনেকেই। প্রতিষ্টাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হোন সৈয়দ বাকী বিল্লাহ শিবলী এবং সাধারণ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আবুল ফাত্তাহ ফজলু স্যার।

সমাজসেবা কার্যালয়, কুলাউড়া কর্তৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পর্যায়ের প্রথম যুব সংগঠন সমস্বরের অস্থায়ী কার্যালয় করা হয় দক্ষিণ বাজারের বিনিময় লাইব্রেরীর পিছনের কক্ষ।

আলোড়ন সৃষ্টি করে জন্ম নেয়া এই সংগঠনের প্রথম কার্যক্রম ছিলো টিপ সহির বদলে নাম লেখা শেখানো। তখনকার সময় অনেক সাধারণ মানুষ নিজের নাম লেখতে জানতেন না। ফলে যত্রতত্র তাঁদের টিপ সই দিতে হতো। তাঁদের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়ার প্রয়াসে আটাত্তরের ডিসেম্বরে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়। কুলাউড়া শহরে চারটি স্থানে যথাক্রমে হাইস্কুল চৌমুহনী, দক্ষিণবাজার চৌমুহনী, ষ্টেশন রোড চৌমুহনী ও উত্তরবাজার লংলা প্রেসের সামনে মোট চারটি বুথ স্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে সংঘটনের প্রতিষ্টাতা সম্পাদক আবুল ফাত্তাহ জানান “আমাদের ব্যক্তিগত চাঁদায় কাগজ-পেন্সিল ক্রয় করা হয়। প্রতিটি বুথে ছয়/সাতজন ভাগ হয়ে কাজ করতেন। প্রথমে অনেক পরিচিতজনরা লজ্জায় আসতে চাইতো না! অফিস-আদালতে গিয়ে টিপসই দেয়া বেশী লজ্জার, এটা বোঝানোর পর তাঁরা বুথে আসলো। তিনদিন ব্যাপী এই কার্যক্রমে চারটি বুথে আমরা একহাজার তিন’শর বেশি লোককে নাম লেখা শেখাই! সে সময় এ উদ্যোগটি খুব প্রশংসনীয় হয়েছিল।”

দ্বিতীয় কার্যক্রম নৈতিকতা, শিক্ষা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে জনগণকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তায় থানার উত্তর পূর্ব পাশে চৌমুহনীতে নীতিবাক্য সংবলিত বিশাল আকারের একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এতে ৫ টি নীতি বাক্য লেখা ছিলো…

১. শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ৩. ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান সমান অপরাধ।
৪. অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। ৫. ভেবে দেখুন, আপনার উপার্জন কি সৎ পথে?

সেই সাইনবোর্ডটা শহরে দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, জাতীয় তরুণ সংঘ, কুলাউড়া শাখার সদস্যরা কখনো-কখনো এ কাজে সমস্বরের সাথে সম্পৃক্ত হতেন।

আরেকটি কার্যক্রম ছিলো ফজলু স্যারের বাড়ীতে সব্জি খামার প্রকল্পে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষের সাথে এক বিঘা জমিতে উন্নত মানের টমেেটো চাষ করা। ফলন ভালো হয়েছিল! সব্জি বিক্রি করে মোটামুটি একটি ফান্ড তৈরী হয়েছিল। তবে আসল উদ্দেশ্য ছিলো সবজি চাষ সম্পর্কে জানা এবং শেখা।

সদস্যদের পাঠোভ্যাস গড়ে তোলার জন্য অনেক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে গঠিত হয় পাঠাগার। তৎকালীন সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ মিজানুর রহমান শেলী কুলাউড়া সফর করেন এবং সমস্বরের কার্যক্রম পরিদর্শন করে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মূলত খেলাধুলাতেই সমস্বরের সম্পৃক্ততা ছিলো বেশী বিশেষ করে ফুটবলে।কুলাউড়ায় প্রথম ফুটবল লীগ চালু এবং সফলভাবে সম্পন্ন করে সমস্বর। এছাড়াও কুলাউড়ার ভালো ফুটবলারদের বেশীরভাগই সমস্বরের হয়ে খেলতেন। কুলাউড়া মাঠে সমস্বর যেসব তারকা ফুটবলারদের জন্ম দিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কুলাউড়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার খলিলুর রহমান, পোস্টার বয় গিয়াস উদ্দিন মান্না, প্রয়াত আব্দুল মুকিত মিকি, মতিউর রহমান ও বাদল দাস

ফুটবল, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টনের বেশ কিছু প্রতিযোগীতারও আয়োজন করেছে সমস্বর। নিজেদের এবং অন্যদের আয়োজিত প্রতিটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতো সমস্বর। আবাহনী মোহামেডানের মতো সমস্বর তরুণ সংঘ ছিলো প্রতিটি টুর্নামেন্টের প্রাণ। খেলাধুলা ছাড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমস্বরের চেয়ে তরুণ সংঘের বিচরণ ছিলো বেশী। আবুল ফাত্তাহ এবং ভানু দা ছাড়া তৎকালীন সময়ে বেশীর ভাগ সাংস্কৃতিক কর্মী মাগুরায় বসবাস করতো বলে সমস্বরের চেয়ে তরুণ সংঘের গান বাজনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেশী ছিলো।

আনন্দ আর উত্তেজনার কথা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হতো তরুণ সংঘ এবং সমস্বর। ফাইনাল খেলার দিন পুরো কুলাউড়া দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তো। টুকটাক ঝগড়া হয়েছে ঠিকই, কারণ প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্ধীতা ছিলো তাই ঐ বয়সে টেনশনও ছিলো। কিন্তু মারামারি বলতে যেটা বুঝায় তা কখনো হয়নি। চির তরুণ মাকু ভাই এবং সিনিয়রদের মধ্যস্থতায় সব ঝগড়া শুরুতেই শেষ হয়ে যেতো।

পরবর্তীকালে সমস্বরের কান্ডারীরা যে যার পেশায় মনোনিবেশ করায় এবং অনেকে বিদেশ চলে যাওয়ায় সমস্বরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে মাক্কু ভাইরে আমুদে নেতৃত্বে এবং বুলবুল ভাই, ফয়সাল ভাই এবং লিটন ভাইদের কুলাউড়া অবস্থান করায় তরুণ সংঘের কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো এবং এখনো আছে।

বিভিন্ন সময়ে সমস্বরের সভাপতি/সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল ইসলাম, কুলাউড়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগঠক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত আব্দুল মুকিত মিকি, সাবেক জনপ্রিয় ফুটবলার গিয়াস উদ্দিন মান্না সহ আরো অনেক জনপ্রিয় সংগঠক।

স্মৃতিচারণে এনামুল ইসলাম এনাম বলেন “মুরব্বী কিংবা সিনিয়রদের সামনে নিয়ে আসার প্রেক্ষাপঠ এখন আর আগের মতো নেই। আগে মুরব্বীরা ভুল শুদ্ধ যাই বলতেন আমরা মেনে নিতাম পাছে বেয়াদবি হয় সেই চিন্তায়। আমাদের সন্তানেরা এখন অনেক কিছু জানে, দেখে এবং জ্ঞান রাখে। আর তাই তারা যুক্তি দেখিয়ে মত প্রকাশ করে বলে আমাদের পিছু হঠতে হয়। জয় হউক জ্ঞান বিজ্ঞানের।”

কালের গর্ভে সমস্বর বিলীন হয়ে গেলেও সংগঠনটির অতীত কার্যক্রম নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। সমস্বরের কান্ডারীরা বর্তমানে উচ্চতর টেকনোলজির যুগে আমাদের হাতের নাগালেই আছেন। বিশেষ করে ফজলু স্যার, এনাম চাচা, সোহাগ ভাই, খলিল ভাই, মান্না ভাই কিংবা মতিন ভাইকে এই প্রজন্ম যদি কোন কাজে লাগাতে চায় আমার বিশ্বাস উনার কাউকে নিরাশ করবেননা।