করোনার কাছে অসহায় সিলেটবাসী, স্বাস্হ্য বিভাগের টালবাহানা
- আপডেটের সময় : ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
- / ৫৪০ টাইম ভিউ
নিউজ ডেস্ক :করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সিলেটের লাগাম টেনে ধরছে না কেউ। স্বাস্থ্য বিভাগ করছে টালবাহানা। প্রশাসনেরও ‘রহস্যময়’ নীরবতা। যে যার মতো ছুটে চলেছে। মৃত্যুর মিছিল চলছে। এরপরও ঘুম ভাঙছে না কারো। একে অপরের দোষারোপ চলছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। রয়েছে সমন্বয়হীনতাও।
এ কারণে করোনার ভয়াবহ বিস্তার রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়েছেন সিলেটের সুধীজনরা। সিলেটের করোনার বাস্তব চিত্র এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার বিষয়টি জানিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার দাবি করেছেন। বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলামের মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশের মধ্য দিয়ে এ দাবি জানান। এ সময় সিলেটের সুধীজন ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন- প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আন্তরিক নয়। সিলেটের রেডজোনগুলোতে মানুষের চলাচল বন্ধ ও আক্রান্তদের আইসোলেটেড করার ব্যপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে সিলেটে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রেডজোনগুলোতে বাস্তবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সিলেটে ‘রহস্যময়’ নীরবতা চলছে। এছাড়া- সিলেটের করোনা বাস্তব চিত্র প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা। এজন্য ঢাকা থেকে গুরুত দেয়া হচ্ছে কম। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কয়েক দিন ধরে লকডাউনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার কথার কোনো গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- সিলেটে আজ বৃহস্পতিবার কভিড প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির বৈঠক আহবান করা হয়েছে। এই বৈঠক থেকে আসতে পারে নতুন সিদ্বান্ত। সিলেটের সুধীজনরা গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন- করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা নিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা ও অবহেলা লক্ষা করা যাচ্ছে। সিলেটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন দুই হাজার ছুঁইছুঁই। প্রতিদিন গড়ে সিলেটে অর্ধশতাধিক লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নমুনা পরীক্ষার অপ্রতুলতা থাকার কারণে এই হিসাব মিলছে। পরীক্ষা বাড়ানো হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে। উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে আক্রান্তের দ্বারা সিলেটে সংক্রমণ বাড়ছে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হতে পেরে, অক্সিজেন না পেয়েও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। স্মারকলিপিতে তারা আরো উল্লেখ করেন- সিলেট জেলায় গত মে মার্স পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন ৫৫৫ জন। কিন্তু জুন মাসের প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মে মাস পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিলো ১৪ জন। আর গত ২০ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১ জন রোগী। সিলেটে পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্স সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও লকডাউন বা মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ করতে কেউ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে শহরের পাড়ায় পাড়ায় ও মফস্বলের গ্রামে গ্রামে করোনার ভয়াবহ বিস্তার ঘটলেও প্রশাসন ও সির্ভিল সার্জনের কর্মকর্তারা নির্বিকার রয়েছেন। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন- সিলেটের উপসর্গ নিয়ে ঘুরলেও এক সপ্তাহ ধরনা দিয়েও পরীক্ষরা জন্য নমুনা দিতে পারছে না মানুষ। আর নমুনার ফলাফল পেতে সময় অতিবাহিত হচ্ছে ১৫ দিনের মতো। এছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ মিলছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সুনামগঞ্জ জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ কারনে সিলেটে নমুনা জট লেগেই আছে। ঢাকা থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে আসতে সময় ব্যয় হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে সিলেটে পিসিআর ল্যাবের অপ্রতুলতা রয়েছে। সিলেটে করোনা সংক্রমন রোধে পরীক্ষার ল্যাব বাড়ানো ও বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। সিলেটে করোনার চিকিৎসার অপ্রতুলতা তুলে ধরে সুধীজনেরা স্মারকলিপিতে জানান- সিলেটে করোনার চিকিৎসা এবং আইসোলেশন ব্যবস্থা খুবই কম। সিলেট বিভাগের করোনার জন্য একমাত্র চিকিৎসা শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। সেখানে কোনো ভেন্টিলেশন ছিলো না। পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ওই হাসপাতালে কয়েকটি ভেন্টিলেশন সুবিধা বাড়ানো হয়। করোনা হাসপাতাল হলেও শামসুদ্দিনের চিকিৎসক, নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বসবাসের কোনো আলাদা সুবিধা নেই। ফলে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেই তারা কভিড চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে করে তারা তাদের পরিবারকে ঝুকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। এছাড়া দুটি বেসরকারী হাসপাতালে কভিড চিকিৎসা শুরু হলেও বেশি খরচ বহন করতে পারছেন না অনেকেই। স্মারকলিপিতে সিলেটের সুধীজনরা আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে জানান- ‘সিলেটে করোনার বাস্তব চিত্র আড়াল করে রাখার কারণেই আপনার টেবিল পর্যন্ত এসব রিপোর্ট যাচ্ছে না। এ কারণে এখনই সিলেটে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেন তারা’। স্মারকলিপিতে দস্তগত করেন- সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আফজাল রশিদ চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট স্টেশন ক্লাবের সভাপতি সদর উদ্দিন আহমদ, সিলেটের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদ ইসলাম, এডভোকেট বেদানন্দ ভট্রাচার্য, সিলেট মিররের সম্পাদক আহমেদ নুর, মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর, ভুমিসন্তানের সভাপতি আশরাফুল কবির, সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ও আজিজ আহমদ সেলিম, বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সহ আরো অনেকেই। বুধবার জেলা ২টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবীর, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাক শাহ্ দিদার আলম নবেল, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর ।