ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে এক বাংলাদেশীর জীবন বাঁচালেন চিকিৎসক

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ০৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০১৯
  • / ৬৮১ টাইম ভিউ

মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন তিনি!

বিমানের ২৭ নম্বর রো-এর একটি আসনে ৫০ বছরের বাংলাদেশি মহিলা তখন শ্বাস নিতে না পেরে খাবি খাচ্ছেন। ‘‘দয়া করে উড়ানে কোনও চিকিৎসক থাকলে এগিয়ে আসুন’’— বিমানসেবিকার ঘোষণা শুনে ৯ নম্বর রো-এ নড়েচড়ে বসলেন চিকিৎসক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তিলক। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

তিলক বেল টিপে বিমানসেবিকাকে ডাকতেই তিনি প্রায় ছুটে এসে জানতে চান, ‘‘আপনি ডাক্তার?’’ তাঁর সঙ্গে ২৭ নম্বর রো-এর সেই আসনে গিয়ে ওই চিকিৎসক দেখেন, মধ্যবয়সী এক মহিলা শ্বাস নিতে না পেরে আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছেন। সঙ্গে মেয়ে।

পুণে থেকে শুক্রবার সকাল ছ’টায় ছাড়ার পরে সেই বিমানের তত ক্ষণে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ওড়া হয়ে গিয়েছে। তিলককে ওই মহিলার মেয়ে জানান, তাঁরা আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা। মা কল্পনারানি সাহা অনেক দিন ধরেই ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্যই পুণে গিয়েছিলেন। এখন কলকাতায় ফিরে শুক্রবার বিকেলেই ঢাকার উড়ান ধরার কথা।

তিলক এএফএমসি পুণে (সেনা হাসপাতাল)-তে কর্মরত। এবং কাকতালীয় ভাবে তিনিও ফুসফুসের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। কলকাতায় আসছিলেন অঙ্কোলজি নিয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। শুক্রবার দুপুরে কলকাতার একটি হোটেল থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমি যখন মহিলার কাছে পৌঁছই, তখন তাঁর বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দেখলাম, পাল্‌স খুব কম। বিমানসেবিকা মেডিক্যাল বক্স এনে দেন। সেখানে বিপি মেশিন ছিল। সেটা বার করে দেখার আগেই মহিলার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পাল‌্‌স। কেঁদে ফেলেন পাশে থাকা মেয়ে।’’

২৭ নম্বর রো পুরোটা খালি করিয়ে তিলক কল্পনাদেবীকে শুইয়ে দেন। শুরু হয় হার্ট মাসাজ। তাঁর কথা অনুযায়ী, প্রায় এক মিনিট ধরে পাল্‌স পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি একটানা মাসাজ করার পরে আবার শ্বাস নিতে শুরু করেন মহিলা। তিলকের কথায়, ‘‘আমি তখন প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ খুঁজছি। মেয়ে জানালেন, তাঁর কাছে মায়ের ইনহেলার রয়েছে। তখন নেবুলাইজ করতে পারলে সুবিধা হত। কিন্তু ইনহেলার তখনকার মতো সাহায্য করে। বিমানে অক্সিজেন ছিল। তা-ও দেওয়া হয় মহিলাকে।’’

এর মধ্যে বিমানে থাকা আরও দুই চিকিৎসক চলে আসেন তিলকের পাশে। কল্পনাদেবী তখন কিছুটা সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তাঁর হাতে চ্যানেল করে একটি জরুরি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পরে ফ্লুইড দিতে শুরু করেন তিলক। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সেবিকা জানান, কলকাতায় পৌঁছতে আরও অন্তত ৪৫ মিনিট।

কার্গিল যুদ্ধের সময়ে কাশ্মীর ছিল তাঁর কর্মস্থল। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও সৈনিক আহত হলে তাঁকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াই তিলকদের কাজ। সময় ধরে সেই জওয়ানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতে হয় আপ্রাণ। ফলে কল্পনাদেবী যে অনায়াসেই

কলকাতায় পৌঁছে যাবেন, তা বুঝতে পেরে যান তিলক। বিমানটি কলকাতায় নেমে দরজা খোলার পরে বিমানবন্দরে থাকা চিকিৎসক কল্পনাদেবীর কাছে আসা পর্যন্ত তিলক সেখান থেকে নড়েননি। বসে ছিলেন কল্পনাদেবীর পাশে, তাঁর কব্জি ধরে। বিমানবন্দরের চিকিৎসকেরা কল্পনাদেবীকে পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেন কাছের হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে তাঁকে দেখার পরে চিকিৎসকেরা ছেড়ে দেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলের উড়ানেই মেয়ের সঙ্গে ঢাকা ফিরে গিয়েছেন কল্পনাদেবী।

‘‘যে কোনও ধরনের জরুরি অবস্থা সামলানোর প্রশিক্ষণটাই সেনাবাহিনীতে প্রথম দেওয়া হয়। আমার ৪৪ বছরের জীবনে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে আর কখনও সেই প্রশিক্ষণ কাজে আসেনি। এ দিন এক ভিন্‌দেশি মহিলার জন্য সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। গর্ব হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও’’— বলছেন তিলক। পুরো নাম, টি ভি এস ভি জি কে তিলক!

আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে।

পোস্ট শেয়ার করুন

মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে এক বাংলাদেশীর জীবন বাঁচালেন চিকিৎসক

আপডেটের সময় : ০৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০১৯

মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন তিনি!

বিমানের ২৭ নম্বর রো-এর একটি আসনে ৫০ বছরের বাংলাদেশি মহিলা তখন শ্বাস নিতে না পেরে খাবি খাচ্ছেন। ‘‘দয়া করে উড়ানে কোনও চিকিৎসক থাকলে এগিয়ে আসুন’’— বিমানসেবিকার ঘোষণা শুনে ৯ নম্বর রো-এ নড়েচড়ে বসলেন চিকিৎসক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তিলক। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

তিলক বেল টিপে বিমানসেবিকাকে ডাকতেই তিনি প্রায় ছুটে এসে জানতে চান, ‘‘আপনি ডাক্তার?’’ তাঁর সঙ্গে ২৭ নম্বর রো-এর সেই আসনে গিয়ে ওই চিকিৎসক দেখেন, মধ্যবয়সী এক মহিলা শ্বাস নিতে না পেরে আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছেন। সঙ্গে মেয়ে।

পুণে থেকে শুক্রবার সকাল ছ’টায় ছাড়ার পরে সেই বিমানের তত ক্ষণে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ওড়া হয়ে গিয়েছে। তিলককে ওই মহিলার মেয়ে জানান, তাঁরা আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা। মা কল্পনারানি সাহা অনেক দিন ধরেই ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্যই পুণে গিয়েছিলেন। এখন কলকাতায় ফিরে শুক্রবার বিকেলেই ঢাকার উড়ান ধরার কথা।

তিলক এএফএমসি পুণে (সেনা হাসপাতাল)-তে কর্মরত। এবং কাকতালীয় ভাবে তিনিও ফুসফুসের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। কলকাতায় আসছিলেন অঙ্কোলজি নিয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। শুক্রবার দুপুরে কলকাতার একটি হোটেল থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমি যখন মহিলার কাছে পৌঁছই, তখন তাঁর বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দেখলাম, পাল্‌স খুব কম। বিমানসেবিকা মেডিক্যাল বক্স এনে দেন। সেখানে বিপি মেশিন ছিল। সেটা বার করে দেখার আগেই মহিলার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পাল‌্‌স। কেঁদে ফেলেন পাশে থাকা মেয়ে।’’

২৭ নম্বর রো পুরোটা খালি করিয়ে তিলক কল্পনাদেবীকে শুইয়ে দেন। শুরু হয় হার্ট মাসাজ। তাঁর কথা অনুযায়ী, প্রায় এক মিনিট ধরে পাল্‌স পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি একটানা মাসাজ করার পরে আবার শ্বাস নিতে শুরু করেন মহিলা। তিলকের কথায়, ‘‘আমি তখন প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ খুঁজছি। মেয়ে জানালেন, তাঁর কাছে মায়ের ইনহেলার রয়েছে। তখন নেবুলাইজ করতে পারলে সুবিধা হত। কিন্তু ইনহেলার তখনকার মতো সাহায্য করে। বিমানে অক্সিজেন ছিল। তা-ও দেওয়া হয় মহিলাকে।’’

এর মধ্যে বিমানে থাকা আরও দুই চিকিৎসক চলে আসেন তিলকের পাশে। কল্পনাদেবী তখন কিছুটা সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তাঁর হাতে চ্যানেল করে একটি জরুরি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পরে ফ্লুইড দিতে শুরু করেন তিলক। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সেবিকা জানান, কলকাতায় পৌঁছতে আরও অন্তত ৪৫ মিনিট।

কার্গিল যুদ্ধের সময়ে কাশ্মীর ছিল তাঁর কর্মস্থল। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও সৈনিক আহত হলে তাঁকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াই তিলকদের কাজ। সময় ধরে সেই জওয়ানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতে হয় আপ্রাণ। ফলে কল্পনাদেবী যে অনায়াসেই

কলকাতায় পৌঁছে যাবেন, তা বুঝতে পেরে যান তিলক। বিমানটি কলকাতায় নেমে দরজা খোলার পরে বিমানবন্দরে থাকা চিকিৎসক কল্পনাদেবীর কাছে আসা পর্যন্ত তিলক সেখান থেকে নড়েননি। বসে ছিলেন কল্পনাদেবীর পাশে, তাঁর কব্জি ধরে। বিমানবন্দরের চিকিৎসকেরা কল্পনাদেবীকে পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেন কাছের হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে তাঁকে দেখার পরে চিকিৎসকেরা ছেড়ে দেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলের উড়ানেই মেয়ের সঙ্গে ঢাকা ফিরে গিয়েছেন কল্পনাদেবী।

‘‘যে কোনও ধরনের জরুরি অবস্থা সামলানোর প্রশিক্ষণটাই সেনাবাহিনীতে প্রথম দেওয়া হয়। আমার ৪৪ বছরের জীবনে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে আর কখনও সেই প্রশিক্ষণ কাজে আসেনি। এ দিন এক ভিন্‌দেশি মহিলার জন্য সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। গর্ব হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও’’— বলছেন তিলক। পুরো নাম, টি ভি এস ভি জি কে তিলক!

আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে।