ঢাকা , মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
কানাডার প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট ইলেকশন ডলি’র হ্যাটট্রিক জয় ১৭ বছর পর দেশে প্রত্যাবর্তন লন্ডন বিএনপি নেতা শরফুকে শ্রীমঙ্গলে গণ সংবর্ধনা ইতালির মানতোভা শহরে দুইদিনব্যাপী দূতাবাস সেবা অনুষ্ঠিত ,প্রায় আট শতাধিক প্রবাসীরা এই ক্যাম্প থেকে দূতাবাস সেবা গ্রহণ করেন ইতালিতে এমপি প্রার্থী প্রফেসর ডা: সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম কে চাঁদপুরবাসীর সংবর্ধনা দেশে ফিরছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্হায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানের মৃত্যুতে দোয়া অনুষ্ঠিত কুলাউড়া বিএনপির ১৩ ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা, সমন্বয়কদের দায়িত্ব বন্টন কুলাউড়ায় রাজাপুরে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সেতু রক্ষায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত উৎসবমুখর পরিবেশে ইতালির তরিনোতে সিলেট বিভাগ ঐক্য পরিষদের নবগঠিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ছাত্রশিবিরের নববর্ষ প্রকাশনা উৎসব

মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ হায়দার চৌধুরীর জীবনাবসান, জানাজা ও রাষ্ট্রিয় সম্মাননা শেষে দাফন

ছয়ফুল আলম সাইফুলঃ
  • আপডেটের সময় : ১০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯
  • / ১০০৭ টাইম ভিউ

ছয়ফুল আলম সাইফুলঃ   সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিক, একাত্তরের রনাঙ্গনে ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা গ্রুপের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্বা ফরিদ হায়দার চৌধুরী আর নেই। (ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কেন্টে স্থায়ী ভাবে বসবাসরত প্রবীন এ রাজনীতিক গত শনিবার স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৭৬ বছর। ২০১১ সাল থেকে স্ত্রী ও পরিবার পরিজন নিয়ে লন্ডনের কেন্টে বসবাস করছিলেন বীর এই মুক্তিযোদ্ধা।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি হাজীপুর গ্রামের সন্তান ফরিদ হায়দার চৌধুরী এক সময় সিলেটে ছাত্র ইউনিয়ন ও ন্যাপ রাজনীতিতে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ৮০র দশকের শুরুতে তিনি যোগদান করেন মহিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন বাকশাল-এ। পরবর্তীতে বাকশাল আবার আওয়ামী লীগে বিলুপ্ত হলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে সক্রিয় হন এই মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিক। ৮০র দশকে সিলেট জেলা বাকশালের অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব চৌধুরী ১৫ দলীয় জোটের নেতা  হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন এরশাদ সরকারের কোপানলে পড়ে জেলও খেটেছেন। সজ্জন ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ফরিদ হায়দার চৌধুরীর জীবনের গর্বিত অংশ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সুযোগকে তিনি মনে করতেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরীর এক সময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বিশিষ্ট ব্যাংকার মনিরুজ্জামান চৌধুরী সত্যবাণীকে বলেন, আত্মপ্রচার বিমূখ এই নেতা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তাঁর  মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার বা প্রচার না করলেও নিজের এই গৌরবগাঁথার কথা নাতি নাতনীসহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গল্প করতে খুব স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করতেন। তিনি জানান, ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা গ্রুপের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায় করেন আদালতের দ্বারস্থ হয়ে। সম্প্রতি এই গ্রুপকে আদালত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বেশ কিছুদিন পর সম্প্রতি ফরিদ হায়দার চৌধুরী এসেছিলেন দেশে। ঐসময় তিনি সংগ্রহ করেন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও দুই মাসের ভাতা। এগুলো হাতে পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন। হেসে হেসে বলেছিলেন, ‘এবার বিনা প্রমানে গল্প নয়, প্রমানসহ নাতি নাতনীদের সাথে গল্প করতে পারবো আমার জীবনের গৌরবময় সেই দিনগুলোর কথা। কিন্তু উত্তর প্রজন্মের কাছে প্রমানাদিসহ সেই গল্প তাঁর আর করা হেয় উঠেনি। দেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গমন করেন। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেননি, চীরদিনের জন্য চলে গেছেন পরপারে।’

১৯৯৪ সালে সুরন্জিত সেনগুপ্ত, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সভাপতি ইকবাল আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ আনাস পাশের সাথে সদ্য প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরী
১৯৯৪ সালে সিলেট সার্কিট হাউসে জননেতা সুরন্জিত সেনগুপ্ত, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ আনাস পাশের সাথে সদ্য প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরী

লন্ডনে বসবাসরত জনাব চৌধুরীর এক সময়ের আরেক রাজনৈতিক সহকর্মী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ রকিব সত্যবাণীকে বলেন, সজ্জন, আপাদমস্তক ভদ্র ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে সিলেটে যেকজন মানুষ ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরিদ হায়দার চৌধুরী। এক সময় তাঁর সঙ্গ পেয়েছি, এটি ভাবতেই ভালো লাগে। তিনি বলেন, ‘ফরিদ ভাই ছিলেন আত্মপ্রচার বিমূখ। নিজেকে ঢাক ডোল পিঠিয়ে তিনি প্রচার করতেন না। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন যাবত তিনি রাজনীতির বাইরে ছিলেন। ফলে তাঁর প্রজন্ম ছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই তাঁকে চিনেনা। ২০১১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে লন্ডন বসবাস করায় তিনি চলে গিয়েছিলেন অনেকের তাঁর প্রজন্মেরও অনেকের স্মৃতির অন্তরালে।

এদিকে বুধবার বাদ জোহর পূর্ব লন্ডন মসজিদে প্রয়াত ফরিদ চৌধুরীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সত্যবাণীকে জানিয়েছেন সৈয়দ রকিব। নামাজে জানাজা শেষে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে হাই কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রিয় সম্মাননা জানানো হবে প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। রাষ্ট্রিয় সম্মাননার পর হ্যানল্টের গার্ডেন অফ পিস-এ চীরনিদ্রায় শায়িত হবেন, বাঙালীর শ্রেষ্ট সন্তানদের একজন, একাত্তরের রনাঙ্গন কাঁপানো এই মুক্তিযোদ্ধা।

পোস্ট শেয়ার করুন

মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ হায়দার চৌধুরীর জীবনাবসান, জানাজা ও রাষ্ট্রিয় সম্মাননা শেষে দাফন

আপডেটের সময় : ১০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯

ছয়ফুল আলম সাইফুলঃ   সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিক, একাত্তরের রনাঙ্গনে ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা গ্রুপের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্বা ফরিদ হায়দার চৌধুরী আর নেই। (ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কেন্টে স্থায়ী ভাবে বসবাসরত প্রবীন এ রাজনীতিক গত শনিবার স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৭৬ বছর। ২০১১ সাল থেকে স্ত্রী ও পরিবার পরিজন নিয়ে লন্ডনের কেন্টে বসবাস করছিলেন বীর এই মুক্তিযোদ্ধা।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি হাজীপুর গ্রামের সন্তান ফরিদ হায়দার চৌধুরী এক সময় সিলেটে ছাত্র ইউনিয়ন ও ন্যাপ রাজনীতিতে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ৮০র দশকের শুরুতে তিনি যোগদান করেন মহিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন বাকশাল-এ। পরবর্তীতে বাকশাল আবার আওয়ামী লীগে বিলুপ্ত হলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে সক্রিয় হন এই মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিক। ৮০র দশকে সিলেট জেলা বাকশালের অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব চৌধুরী ১৫ দলীয় জোটের নেতা  হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন এরশাদ সরকারের কোপানলে পড়ে জেলও খেটেছেন। সজ্জন ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ফরিদ হায়দার চৌধুরীর জীবনের গর্বিত অংশ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সুযোগকে তিনি মনে করতেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরীর এক সময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বিশিষ্ট ব্যাংকার মনিরুজ্জামান চৌধুরী সত্যবাণীকে বলেন, আত্মপ্রচার বিমূখ এই নেতা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তাঁর  মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার বা প্রচার না করলেও নিজের এই গৌরবগাঁথার কথা নাতি নাতনীসহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গল্প করতে খুব স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করতেন। তিনি জানান, ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা গ্রুপের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায় করেন আদালতের দ্বারস্থ হয়ে। সম্প্রতি এই গ্রুপকে আদালত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বেশ কিছুদিন পর সম্প্রতি ফরিদ হায়দার চৌধুরী এসেছিলেন দেশে। ঐসময় তিনি সংগ্রহ করেন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও দুই মাসের ভাতা। এগুলো হাতে পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন। হেসে হেসে বলেছিলেন, ‘এবার বিনা প্রমানে গল্প নয়, প্রমানসহ নাতি নাতনীদের সাথে গল্প করতে পারবো আমার জীবনের গৌরবময় সেই দিনগুলোর কথা। কিন্তু উত্তর প্রজন্মের কাছে প্রমানাদিসহ সেই গল্প তাঁর আর করা হেয় উঠেনি। দেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গমন করেন। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেননি, চীরদিনের জন্য চলে গেছেন পরপারে।’

১৯৯৪ সালে সুরন্জিত সেনগুপ্ত, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সভাপতি ইকবাল আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ আনাস পাশের সাথে সদ্য প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরী
১৯৯৪ সালে সিলেট সার্কিট হাউসে জননেতা সুরন্জিত সেনগুপ্ত, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ আনাস পাশের সাথে সদ্য প্রয়াত ফরিদ হায়দার চৌধুরী

লন্ডনে বসবাসরত জনাব চৌধুরীর এক সময়ের আরেক রাজনৈতিক সহকর্মী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ রকিব সত্যবাণীকে বলেন, সজ্জন, আপাদমস্তক ভদ্র ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে সিলেটে যেকজন মানুষ ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরিদ হায়দার চৌধুরী। এক সময় তাঁর সঙ্গ পেয়েছি, এটি ভাবতেই ভালো লাগে। তিনি বলেন, ‘ফরিদ ভাই ছিলেন আত্মপ্রচার বিমূখ। নিজেকে ঢাক ডোল পিঠিয়ে তিনি প্রচার করতেন না। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন যাবত তিনি রাজনীতির বাইরে ছিলেন। ফলে তাঁর প্রজন্ম ছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই তাঁকে চিনেনা। ২০১১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে লন্ডন বসবাস করায় তিনি চলে গিয়েছিলেন অনেকের তাঁর প্রজন্মেরও অনেকের স্মৃতির অন্তরালে।

এদিকে বুধবার বাদ জোহর পূর্ব লন্ডন মসজিদে প্রয়াত ফরিদ চৌধুরীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সত্যবাণীকে জানিয়েছেন সৈয়দ রকিব। নামাজে জানাজা শেষে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে হাই কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রিয় সম্মাননা জানানো হবে প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। রাষ্ট্রিয় সম্মাননার পর হ্যানল্টের গার্ডেন অফ পিস-এ চীরনিদ্রায় শায়িত হবেন, বাঙালীর শ্রেষ্ট সন্তানদের একজন, একাত্তরের রনাঙ্গন কাঁপানো এই মুক্তিযোদ্ধা।