নাইট ফুটসাল কিশোরদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলছে?
- আপডেটের সময় : ১২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
- / ৪৮২ টাইম ভিউ
১৯৩০ সালে উরুগুয়ের মোন্তেভিদেওর একজন শিক্ষক হুয়ান কার্লোস সেরিয়ানি কর্তৃক ওয়াইএমসিএ-এর জন্য অভ্যন্তরীণ ফুটবলের একটি সংস্করণ তৈরি করার মাধ্যমে ফুটসালের উদ্ভাবন হয়েছে।
এই ক্রীড়াটি মূলত বাস্কেটবল মাঠের জন্য বিকশিত হয়েছিল।১৯৩৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নতুন ক্রীড়ার জন্য নিয়মের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ফুটবল ইতিমধ্যে উরুগুয়েতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং দেশটি ১৯৩০ বিশ্বকাপ এবং ১৯২৪ এবং ১৯২৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের পর এটি আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। সেরিয়ানির লক্ষ্য ছিল ফুটবলের মতো একটি দলগত খেলা তৈরি করা, যা ঘরের ভেতরে অথবা বাইরে উভয় স্থানে খেলা যেতে পারে।
ফুটসাল স্পেনীয় শব্দ “ফুতবোল সালা” অথবা “ফুতবোল দে সালোন” এবং পর্তুগিজ শব্দ “ফুতেবোল দে সালাও” (সকল শব্দের অর্থ “অভ্যন্তরীণ ফুটবল”) হতে আগত। ১৯৮৫ সালে ফিফার সাথে “ফুতবোল” নামটি নিয়ে বিতর্কের পর বিশ্ব ফুটসাল অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান নামটি নিবন্ধিত করেছে। তারপর থেকে, ফুটসাল আনুষ্ঠানিকভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাম হয়ে উঠেছে।
কিন্তু উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ভিতরে প্রফেশনাল খেলোয়াড়দের নিয়ে আয়োজন করা হতো এই খেলা। সেখানে বিদ্যালয়ে লেখা পড়া চলাকালীন কোনো ছাত্রদের রাত্রের আলোয় খেলায় অংশগ্রহণ করতে আহবান করা হতো না।
আমরা যখন কিশোর ছিলাম এমন কি তরুন হয়েছিলাম তখনও রাত্রে কোনো খেলার প্রথা ছিলো না।বাৎসরিক পরীক্ষা শেষে শুধুমাত্র বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে ব্যাডমিন্টন খেলা হতো বা খেলতাম। আর বর্তমানে লেখা পড়ার করার সময় ফুটসাল টুর্নামেন্ট খেলা হয়, তাও নিভু নিভু অপর্যাপ্ত আলোয় খেলা হয়ে থাকে। যা দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ফুটসাল এবং ফুটবলের মধ্যে পার্থক্য কী?
ফুটবল সাধারণত বড় মাঠের খেলা হিসেবে খেলা হয়, যেখানে ফুটসাল হল এক ধরনের ফুটবল যা অনেক ছোট মাঠে খেলা হয় । আমাদের দেশে এই ফুটসাল খেলা কে নিয়ে শুরু হয়েছে এক নাটক। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক রাত্রে সময় যখন ছাত্ররা লেখা পড়ায় মন দিবে ,ঠিক তখন ফুটসাল খেলার প্রতিযোগিতা ছেড়ে দিয়ে কিশোরদের রাত্রে বাহিরে বের হওয়ার পথ দেখানো হয়।
যে আলো দিয়ে ফুটসাল টুর্নামেন্ট চালানো হয়, তাতে ভালোভাবে বল দেখা যায় না, শর্ট মারবে আন্দাজের উপর, এভাবেই খেলায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এই নিভু নিভু আলোয় খেলার সময় পা ভেঙে গেলে তার দায়ভার আয়োজক কমিটি নিবে না,কখনওনেয়ও নি।
বিদুৎতের আলো অবৈধভাবে জ্বালানো হয়,তা যেনো প্রশাসন দেখেই না। এমন কি প্রশাসন নিরব থাকার রহস্য হলো তারা অবৈধভাবে আয়োজকদের কাছ থেকে বিদুৎ ব্যাবহারের জন্য ঘুষ গ্রহন করে থাকে। যাক আসি যে কথায় ছিলাম ,
যদি খেলায় পা ভেঙে তখন ঐ কিশোরের লেখা পড়া কয়েকমাস বন্ধ। পিছিয়ে পড়লো লেখা পড়ায় আর মন বসছে না, দেখা গেলো রাতের আড্ডায় মগ্ন হচ্ছে। এইভাবেই আড্ডার শুরু হয়।
তারপর একে অন্যর সাথে আড্ডায় মজ্জ হয়। স্কুলে পড়ার সময়ই কিংবা এলাকায় আড্ডা দিতে গিয়ে শুরুতে মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি হলেও পরে একসময় মাদক সহ বাজে কাজে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশজুড়ে কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। প্রথমে খেলার নেশায় বের হলো, তারপর আড্ডায় বসতে বসতে মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসায়সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সাথে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনখারাবিতে জড়াতেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা।
উদ্বেগের বিষয় হলো,আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব,বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আমিত্ব ,অহংকারীদের প্রভাব বিস্তার করতে সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাবহার করা সহজ হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে বড় ভাই’রা।
এরা প্রথমে রাতে বিভিন্ন খেলা কিংবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাতে ঘর থেকে বের হওয়ার একটা অভ্যাস তৈরী করে দেয় কিশোরদের,এভাবে কিশোরদের সাথে সংখ্যতার তৈরী করতে সময়ে সময়ে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করে কাছে ভিড়ার সুযোগ করছে বড় ভাই’রা।
তারপর তারা কয়েকমাস খেলার নাম করে সমবয়সীদের নিয়ে কয়েকঘন্টা বাহির আড্ডায় থাকতে থাকতে একসময় তা অভ্যাসে পরিণত হয় ঐ কিশোরদের । নিজেদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
এনিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন মূলতঃ দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে।
প্রথমতঃ মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
দ্বিতীয়তঃ এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না।
ফলে কিশোরদের কেউ যখন রাতের বিভিন্ন খেলায় অংশ গ্রহণ করে বন্ধুদের সাথে রাত্রে বাহিরে আড্ডা দিচ্ছে। তারপর নিয়মিত হচ্ছে সেই আড্ডা।বড় ভাইদের রাতের আয়োজনে তাদের প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ বেড়ে যায়।
একদিকে সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হলে রাত্রের বিভিন্ন খেলার আয়োজন বন্ধ করতে হবে । অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের রাত্রে বাহিরে যেথে বন্ধ করা আবশ্যক হবে।
এসব দেখে মেজর (সেনাবাহিনীর একজন নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন )সোস্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করেন যা হুবুহু তুলে ধরলাম
” অপর্যাপ্ত আলো দিয়ে যারা ফুটবল বিশেষত ক্রিকেট খেলার আয়োজন করছেন রাতের বেলা তারা যে কতটুকু ঝুঁকি নিচ্ছেন তা হয়তো বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন না। ক্রিকেটে আমরা রমন লম্বার মৃত্যু দেখেছি। খেলাধুলা দিয়ে বাচ্চাদের খারাপ কাজ থেকে সরিয়ে রাখা হয়। আরো অধিক রাতে সেই বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন তাদের কতটুকু ভালো পথে পরিচালিত করবে সেটাও একটু ভেবে দেখার বিষয় “
পরিশেষে আমাদের বোধশক্তির উদয় হোক। কিশোরদের বিনোদনমূলক খেলাকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিয়ে আসি। আজকের কিশোর আগামীর নেতৃত্ব দিবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে আদর্শিক চর্চায় তারা নিজেদর বিকশিত করুক।
শেখ নিজামুর রহমান টিপু
সম্পাদক, দেশ দিগন্ত