ছোটবেলায় সাহেদকে ‘চিটার’ নামে ডাকতো বন্ধুরা
- আপডেটের সময় : ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০২০
- / ৮৮৭ টাইম ভিউ
সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম। করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর থেকে দেশবাসীর কাছে এখন প্রতারক সাহেদ হিসেবে পরিচিত।
ভারতে পালানোর সময় র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন তিনি। আদালতের আদেশে রিমান্ডে নেয়ার পর থেকে বেরিয়ে আসছে প্রতারক সাহেদের ভয়াবহ সব প্রতারণার তথ্য। তবে সাহেদের জন্মস্থান সাতক্ষীরায় বড় ধরনের কোনো প্রতারণার ঘটনা এখনো জানা যায়নি। এমনকি তার নিজের জেলার খুব কম মানুষই তাকে চিনে। তার বাবা সিরাজুল করিম ও মা শাফিয়া করিম এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।
সাতক্ষীরাতেই কোটি টাকা সম্পদের মালিক ছিলেন তারা। দেশ ভাগের সময় তার দাদা ভূমি বিনিময় করে ভারতের বারাসাত এলাকা থেকে চলে এসে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকায় বসতি গড়েন। শহরের উপরেই তাদের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৫ বিঘা সম্পত্তি ছিল। সেখানে একটি সুপার মার্কেট নির্মাণ করে তার বাবা। তার মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা ও জেলার প্রগতিশীল রাজনীতির পরিচিত মুখ। তৎকালীন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের দিকে এই সুপার মার্কেট, বাড়িসহ সমুদয় সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে স্থায়ীভাবে চলে যান তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে এলাকায় আর ফিরে আসেননি সাহেদ। পরে ২০১৪-১৫ সালে সাতক্ষীরায় এসে পৈতৃক সব সম্পদ বিক্রি করে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে যান। এলাকায় তার কোন নিকট আত্মীয়-স্বজনও নেই।
সাহেদের বাল্যবন্ধু রুবেল ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সাহেদ এসএসসি পাস করে ঢাকায় লেখাপড়া করতে গেলেও কোন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সেটা আমরা আর জানি না। এসএসসিতে আমি এবং সাহেদ ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম। তার আসল নাম মো. সাহেদ করিম। তবে ঢাকায় দাদা-বাবার নামের পদবি ‘করিম’ ফেলে দেয়, মো. সাহেদ হিসেবে পরিচিতি পায়। কেন করেছে তার কারণ জানি না।
তিনি আরো বলেন, ছোট থেকেই উচ্চ বিলাসী ছিল সাহেদ। মাঝেমধ্যে আমার কাছে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উইংয়ে আছি বলে পরিচয় দিতো। বলতো কোনো সমস্যা হলে যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু বিষয়টি আমার বিশ্বাস হতো না। ছোটবেলা ভালো ছিল। তবে কথা বলায় খুব পটু ছিল। খুব অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নেয়ার ক্ষমতা তার আছে।
এসএসসি পরীক্ষার ১৫ বছর পরে ২০১৪ সালে আবারো তার সঙ্গে দেখা হয়। তখনো এতো আলোচিত ছিল না। তবে কয়েক বছর আগে থেকে বিভিন্ন বাজে কর্মকাণ্ডের কারণে ‘চিটার সাহেদ’ বা ‘বাটপার সাহেদ’ নামে বন্ধুমহলে পরিচিতি লাভ করে। এখান থেকে বছর তিনেক আগে হেলিকপ্টারযোগে সাতক্ষীরার নলতায় এসেছিল।
সাহেদের স্কুল শিক্ষক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, সাহেদ আমার ছাত্র ছিল। সে আমার স্কুলে কিছু দিন লেখাপড়া করেছিল। ছোটবেলা থেকেই সে বেশ চটপটে ছিল।
তিনি আরো বলেন, ভারত থেকে দেশ বিভাগের সময় সাতক্ষীরা এসে করিম বংশ প্রতিষ্ঠা করেন সাহেদের দাদা আবদুল করিম। ‘৭২ থেকে ‘৭৪ সাল পর্যন্ত যশোর জেলার তথ্য অফিসার ছিলেন তিনি। লেখাপড়া জানা উচ্চ বংশ ছিল তাদের। বর্তমানে সাতক্ষীরায় তাদের কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই এবং কোনো সম্পত্তি নেই। যা ছিল সব বিক্রি করে চলে গেছে।
সাহেদের বিষয়ে সাতক্ষীরার বাড়ির সাবেক প্রতিবেশি কামরুজ্জামান রাসেল ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, সাহেদ করিম সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের বাসিন্দা। সে তার মা-বাবার একমাত্র ছেলে। ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর থেকে ঢাকায় চলে যান। তারপরে সাতক্ষীরায় তেমন বেশি যাতায়াত ছিল না। মাঝে মাঝে এসে দুই-একদিন থেকেই চলে যেতেন। মূলত মায়ের সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে ঢাকার রাজনীতি ও পরিচিত মহলে জায়গা তৈরি করেন সাহেদ।
সাতক্ষীরা এসপি মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, এমনিতেই সাতক্ষীরা মানুষের দুর্নামের শেষ নেই তার উপর সাহেদের বাড়ি সাতক্ষীরায় ও সম্প্রতি জেলার একটি সীমান্ত থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে নতুন করে জেলার নাম আলোচনায় এসেছে। তার (সাহেদ) বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় একটি অস্ত্র মামলা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জেলার কোন থানায় আর কোনো অভিযোগ নেই। সাহেদের ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর আছে।#