ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

বাংলাদেশের আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে : বিশ্লেষণ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মে ২০২০
  • / ৩৯৩ টাইম ভিউ

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে দেশে আগামী দিনগুলো সবচেয়ে সঙ্কটময় হতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

তারা বলছেন, দেশের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়টি অপেক্ষা করছে। আগামী কয়েকদিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ হবে। যতই আমরা সীমিত পরীক্ষা করি এবং পরীক্ষায় বিলম্ব করি না কেন, সামাজিক সংক্রমণ বিস্তৃত হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।

দেশে বুধবার (২৯ এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ ৫৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত এক দিনে পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৩৩২ জনের। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে সংক্রমণের হার এবং সংখ্যা একইরকম আছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫ হাজার পরীক্ষায় পৌঁছাতে পারেনি, ১০ হাজার পরীক্ষা তো অনেক দূরের কথা।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৩৩ জনের। শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ১০৩ জন। অর্থাৎ যাদের পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১১. ৮০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষার জন্য মানুষ হন্যে হয়ে যাচ্ছে, পাগল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকার ঘোষিত সেবাদানকেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ করছে। কিন্তু পরীক্ষা যেন এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি উপসর্গসহ একজন মানুষকে যথাযথ সময়ে পরীক্ষা না করে আইসোলেশনে না নেয়া বা চিকিৎসা না দেয়া হয়, তাহলে তার মাধ্যমেই সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এখানেই এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের গত ৪ দিনের পরিসংখ্যান একই থাকার মানে হচ্ছে, এ দেশে করোনা পরিস্থিতি একই রকম আছে। এই একই রকম করোনা পরিস্থিতি থাকার মানেই হলো, বাংলাদেশ এখনও করোনার পিক সময় অর্থাৎ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেনি। এখন যদি আমরা আরও কিছুদিন লকডাউন বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অক্ষুন্ন রাখতে পারতাম, তাহলে এই করোনা পরিস্থিতির লাগামটা হয়তো আমরা টেনে ধরতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই সেই সুযোগটা হারিয়েছি। এখন যেভাবে ঢাকার মধ্যে লোকজন ঢুকছে, গার্মেন্টস কারখানা ও হোটেল-রেস্তোরাসহ সবকিছু খুলে দেয়া হচ্ছে এবং মানুষ অবাধে মেলামেশা করছে, তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি যদি খারাপ হয়, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ আমাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার যে সময়সীমাটা ছিল, সেটা আমরা সঠিকভাবে প্রতিপালন করিনি।

এ প্রসঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০তম দিনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে ৬০তম দিন আসার এখনও ৮ দিন বাকি আছে। আগামী এই ৮টা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ৮ দিনের মধ্যে যদি আমরা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বিধি নিষেধগুলোকে মানতে না পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুব খারাপ খবর অপেক্ষা করছে।

আরেকজন বিশেষজ্ঞ হতাশার সুরে বলেছেন, কেউ আসলে কিছুই মানছে না। যার যা ইচ্ছা তাই করছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস খুলে দেয়া এবং অন্যান্য অনেক কিছু খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তৃতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

তারা মনে করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদিও বলেছেন, বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এটাও জানা উচিৎ, বাংলাদেশের কতগুলো পরিসংখ্যান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এর মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত; বাংলাদেশে ৫২তম দিনে ৫৪ হাজার ৭৩৩ জনের পরীক্ষা হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে দিনে এক হাজারের মতো পরীক্ষা হয়েছে। এটা বিশ্বে সবচেয়ে কম।

দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১৫৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৩৯ জন। এই তুলনামূলক পরিসংখ্যানও বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই আছে। অন্য কোনও দেশে এত খারাপ পরিস্থিতি নেই। বরং সব দেশেই সুস্থ হওয়ার হার মৃত্যুর হারের চেয়ে অনেক বেশি।

এই সমস্ত বিশ্লেষণ করেই বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের একটু অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল। আর একটু ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। তাহলে আমরা হয়তো করোনার সামাজিক সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে পারতাম।

চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একজন বিশ্লেষক টোলারবাগের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে সেখানে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়েনি। অন্যান্য এলাকাগুলো যেমন যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, তারা সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে পারেনি বলে সংক্রমিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে রাখতে হবে, ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যখন ঢাকার লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট চালু করা হচ্ছে, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হচ্ছে, তখন ঢাকার পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে কী ভয়ঙ্কর হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

পোস্ট শেয়ার করুন

বাংলাদেশের আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে : বিশ্লেষণ

আপডেটের সময় : ০২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মে ২০২০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে দেশে আগামী দিনগুলো সবচেয়ে সঙ্কটময় হতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

তারা বলছেন, দেশের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়টি অপেক্ষা করছে। আগামী কয়েকদিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ হবে। যতই আমরা সীমিত পরীক্ষা করি এবং পরীক্ষায় বিলম্ব করি না কেন, সামাজিক সংক্রমণ বিস্তৃত হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।

দেশে বুধবার (২৯ এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ ৫৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত এক দিনে পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৩৩২ জনের। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে সংক্রমণের হার এবং সংখ্যা একইরকম আছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫ হাজার পরীক্ষায় পৌঁছাতে পারেনি, ১০ হাজার পরীক্ষা তো অনেক দূরের কথা।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৩৩ জনের। শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ১০৩ জন। অর্থাৎ যাদের পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১১. ৮০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষার জন্য মানুষ হন্যে হয়ে যাচ্ছে, পাগল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকার ঘোষিত সেবাদানকেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ করছে। কিন্তু পরীক্ষা যেন এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি উপসর্গসহ একজন মানুষকে যথাযথ সময়ে পরীক্ষা না করে আইসোলেশনে না নেয়া বা চিকিৎসা না দেয়া হয়, তাহলে তার মাধ্যমেই সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এখানেই এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের গত ৪ দিনের পরিসংখ্যান একই থাকার মানে হচ্ছে, এ দেশে করোনা পরিস্থিতি একই রকম আছে। এই একই রকম করোনা পরিস্থিতি থাকার মানেই হলো, বাংলাদেশ এখনও করোনার পিক সময় অর্থাৎ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেনি। এখন যদি আমরা আরও কিছুদিন লকডাউন বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অক্ষুন্ন রাখতে পারতাম, তাহলে এই করোনা পরিস্থিতির লাগামটা হয়তো আমরা টেনে ধরতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই সেই সুযোগটা হারিয়েছি। এখন যেভাবে ঢাকার মধ্যে লোকজন ঢুকছে, গার্মেন্টস কারখানা ও হোটেল-রেস্তোরাসহ সবকিছু খুলে দেয়া হচ্ছে এবং মানুষ অবাধে মেলামেশা করছে, তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি যদি খারাপ হয়, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ আমাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার যে সময়সীমাটা ছিল, সেটা আমরা সঠিকভাবে প্রতিপালন করিনি।

এ প্রসঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০তম দিনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে ৬০তম দিন আসার এখনও ৮ দিন বাকি আছে। আগামী এই ৮টা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ৮ দিনের মধ্যে যদি আমরা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বিধি নিষেধগুলোকে মানতে না পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুব খারাপ খবর অপেক্ষা করছে।

আরেকজন বিশেষজ্ঞ হতাশার সুরে বলেছেন, কেউ আসলে কিছুই মানছে না। যার যা ইচ্ছা তাই করছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস খুলে দেয়া এবং অন্যান্য অনেক কিছু খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তৃতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

তারা মনে করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদিও বলেছেন, বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এটাও জানা উচিৎ, বাংলাদেশের কতগুলো পরিসংখ্যান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এর মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত; বাংলাদেশে ৫২তম দিনে ৫৪ হাজার ৭৩৩ জনের পরীক্ষা হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে দিনে এক হাজারের মতো পরীক্ষা হয়েছে। এটা বিশ্বে সবচেয়ে কম।

দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১৫৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৩৯ জন। এই তুলনামূলক পরিসংখ্যানও বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই আছে। অন্য কোনও দেশে এত খারাপ পরিস্থিতি নেই। বরং সব দেশেই সুস্থ হওয়ার হার মৃত্যুর হারের চেয়ে অনেক বেশি।

এই সমস্ত বিশ্লেষণ করেই বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের একটু অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল। আর একটু ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। তাহলে আমরা হয়তো করোনার সামাজিক সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে পারতাম।

চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একজন বিশ্লেষক টোলারবাগের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে সেখানে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়েনি। অন্যান্য এলাকাগুলো যেমন যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, তারা সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে পারেনি বলে সংক্রমিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে রাখতে হবে, ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যখন ঢাকার লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট চালু করা হচ্ছে, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হচ্ছে, তখন ঢাকার পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে কী ভয়ঙ্কর হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।