ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বর্তমান পরিস্থিতির উপর দেশবাসীকে যে বার্তা দিলেন শায়খ নূরে আলম হামিদী স্বাধিনতা মানে শুধুমাত্র নিজস্ব মানচিত্র অর্জন নয়, চাই বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনে বড়লেখার সোয়েব আহমেদের সমর্থনে মতবিনিময় সভা ইতালির ভেনিসে গ্রিন সিলেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ইতালির ভেনিসে এনটিভির ইউরোপের ডিরেক্টর সাবরিনা হোসাইন কে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা

বনানীতে পাইপ ধরে ‘হিরো’ নাঈম হতে চায় পুলিশ, পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০১৯
  • / ৭১৩ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ রাজধানী বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর হাজার হাজার জনতা যখন সেলফি-ভিডিওতে অস্থির ছিলো, ঠিক সেই মূহুর্তে ফায়ার সার্ভিসের একটি ছিদ্র পাইপ শক্ত করে ধরে ছিলো নাঈম নামে এক ছোট্ট শিশু। সেই নাঈমের পাইপ ধরার একটি স্থির চিত্র এখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই তা শেয়ার করে প্রশংসা করছে। নাঈমের এই মানবিক কাজের জন্য এরই মধ্যে তাকে পাঁচ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি আওয়াজবিডির উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য ও বোস্টন রোটারিয়ান ক্লাবের সভাপতি। তিনি বলেন, “আমি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। আমি জেনেছি নাঈম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। আমি সেই জন্য আজ থেকে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছি। তবে এই পাঁচ হাজার ডলার তাকে আমি পর্যায়ক্রমে দিবো।” এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তার পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান ওমর ফারুক সামি।

পাইপ ধরে থাকা নাঈম থাকেন ঢাকার করাইল এলাকায়। তার বাবা তাদের ছেড়ে অনত্র সংসার করছেন। মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে নাঈম এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন।

গতকাল দুপুরে অন্যদের মতো সেও বনানীতে আসছিলো। নাঈম বলেন, “আমি কালকে দুপুরবেলা আইসে দেখি, এইহানে আগুন লাগছে। ফায়ার সার্ভিস অনেক কষ্ট করে আগুন নেভাচ্ছে। আর আমি তখন দেখি পাইপটা ফাটা। সেই জন্য আমি পাইপটা চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম যাতে পানি কাছে গিয়ে আগুন নিভা যায়।”

“আমাকে অনেক লোকে পলিথিন এনে দিয়েছে, যাতে ওটা চাপ দিয়ে ধরে রাখতে পারি। তারপরে ধরলাম। পানি তখন হালকা হালকা পড়ছিলো।”

নাঈম ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ফায়ার সার্ভিসকে অনেক ধন্যবাদ তারা আগুন নিভাতে পারছে।”

হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে এসে তিনি কেনো ওই পাইপটা ধরলেন? ছোট্ট শিশু নাঈম বলেন, “আমার মনে হচ্ছিলো, শত শত লোক মারা যাবে। আমি যদি পাইপটা ধরে রাখতে পারি তাহলে ফায়ার সার্ভিস আগুনটা নিভিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে।”

এই নাঈম এর আগে গুলশান-১ ফায়ার সার্র্ভিসের পাইপ ধরে তাদের কাজে সহায়তা করেছিল। নাঈম বলেন, “সে সময়ও সেই পাইপটা ছিঁড়ে ছিলো। তার সঙ্গে আরো অনেকেই সেই পাইপ ধরেছিলো।”

নাঈম বড়ো হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চান। তার দাবি, “পুলিশ এখানে (বনানীতে) অনেক সাহায্য করেছে। পুলিশ মানুষকে পিটিয়ে সরিয়ে দিয়েছে যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারে।”

অথচ এই মহৎ কাজের জন্য কোনো ধরনের পুরস্কারও চান না নাঈম। তিনি বলেন,  “আল্লাহ আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। আমি পুরস্কার চাই না।”

নাঈমকে নিয়ে সারাদেশ ব্যাপী এ ধরনের প্রশংসার কথা তার মা কতোটুকু জানেন?

নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, “আমি প্রথমে জানতাম না। পরে জানলাম মানুষের কাছে। বড় ছেলে নাঈম ও ছোট মেয়ে সুমাইয়া আক্তার কাজলকে নিয়ে আমি করাইল বস্তিতে থাকি। ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ছেলেকে তিনি অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে চান। ছেলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। মানুষের বিপদে কাজ করতে চায়।”

তিনি জানান, “স্বামী অনত্র বিয়ে করে সংসার করছে। তাদের খোঁজখবর নেয় না। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালাই।”

উল্লেখ্য, বনানীর এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কান একজন নাগরিকসহ এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন শতাধিক। তবে পুলিশের হিসেব মতে নিহতের সংখ্যা ২৫।

পোস্ট শেয়ার করুন

বনানীতে পাইপ ধরে ‘হিরো’ নাঈম হতে চায় পুলিশ, পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী

আপডেটের সময় : ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০১৯
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ রাজধানী বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর হাজার হাজার জনতা যখন সেলফি-ভিডিওতে অস্থির ছিলো, ঠিক সেই মূহুর্তে ফায়ার সার্ভিসের একটি ছিদ্র পাইপ শক্ত করে ধরে ছিলো নাঈম নামে এক ছোট্ট শিশু। সেই নাঈমের পাইপ ধরার একটি স্থির চিত্র এখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই তা শেয়ার করে প্রশংসা করছে। নাঈমের এই মানবিক কাজের জন্য এরই মধ্যে তাকে পাঁচ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি আওয়াজবিডির উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য ও বোস্টন রোটারিয়ান ক্লাবের সভাপতি। তিনি বলেন, “আমি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। আমি জেনেছি নাঈম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। আমি সেই জন্য আজ থেকে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছি। তবে এই পাঁচ হাজার ডলার তাকে আমি পর্যায়ক্রমে দিবো।” এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তার পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান ওমর ফারুক সামি।

পাইপ ধরে থাকা নাঈম থাকেন ঢাকার করাইল এলাকায়। তার বাবা তাদের ছেড়ে অনত্র সংসার করছেন। মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে নাঈম এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন।

গতকাল দুপুরে অন্যদের মতো সেও বনানীতে আসছিলো। নাঈম বলেন, “আমি কালকে দুপুরবেলা আইসে দেখি, এইহানে আগুন লাগছে। ফায়ার সার্ভিস অনেক কষ্ট করে আগুন নেভাচ্ছে। আর আমি তখন দেখি পাইপটা ফাটা। সেই জন্য আমি পাইপটা চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম যাতে পানি কাছে গিয়ে আগুন নিভা যায়।”

“আমাকে অনেক লোকে পলিথিন এনে দিয়েছে, যাতে ওটা চাপ দিয়ে ধরে রাখতে পারি। তারপরে ধরলাম। পানি তখন হালকা হালকা পড়ছিলো।”

নাঈম ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ফায়ার সার্ভিসকে অনেক ধন্যবাদ তারা আগুন নিভাতে পারছে।”

হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে এসে তিনি কেনো ওই পাইপটা ধরলেন? ছোট্ট শিশু নাঈম বলেন, “আমার মনে হচ্ছিলো, শত শত লোক মারা যাবে। আমি যদি পাইপটা ধরে রাখতে পারি তাহলে ফায়ার সার্ভিস আগুনটা নিভিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে।”

এই নাঈম এর আগে গুলশান-১ ফায়ার সার্র্ভিসের পাইপ ধরে তাদের কাজে সহায়তা করেছিল। নাঈম বলেন, “সে সময়ও সেই পাইপটা ছিঁড়ে ছিলো। তার সঙ্গে আরো অনেকেই সেই পাইপ ধরেছিলো।”

নাঈম বড়ো হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চান। তার দাবি, “পুলিশ এখানে (বনানীতে) অনেক সাহায্য করেছে। পুলিশ মানুষকে পিটিয়ে সরিয়ে দিয়েছে যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারে।”

অথচ এই মহৎ কাজের জন্য কোনো ধরনের পুরস্কারও চান না নাঈম। তিনি বলেন,  “আল্লাহ আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। আমি পুরস্কার চাই না।”

নাঈমকে নিয়ে সারাদেশ ব্যাপী এ ধরনের প্রশংসার কথা তার মা কতোটুকু জানেন?

নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, “আমি প্রথমে জানতাম না। পরে জানলাম মানুষের কাছে। বড় ছেলে নাঈম ও ছোট মেয়ে সুমাইয়া আক্তার কাজলকে নিয়ে আমি করাইল বস্তিতে থাকি। ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ছেলেকে তিনি অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে চান। ছেলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। মানুষের বিপদে কাজ করতে চায়।”

তিনি জানান, “স্বামী অনত্র বিয়ে করে সংসার করছে। তাদের খোঁজখবর নেয় না। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালাই।”

উল্লেখ্য, বনানীর এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কান একজন নাগরিকসহ এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন শতাধিক। তবে পুলিশের হিসেব মতে নিহতের সংখ্যা ২৫।