বাংলাদেশের মানবিকতা, ভারতের পিটিয়ে হত্যা
- আপডেটের সময় : ০৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯
- / ৫৪৫ টাইম ভিউ
লোকটির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস। বাড়ি ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলায়। পেশায় একজন মৎস্যজীবী। ৮ দিন আগে ভারতের হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরছিলেন তিনি ও তার ১৫ জন সাথি। হঠাত্ প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। একসময় নৌকা উল্টে যায়। প্রচণ্ড ঢেউয়ে একেকজন একেক দিকে ভেসে যায়। এই রবীন্দ্রনাথও ভেসে যায়।
পেশায় জেলে হওয়ায় পানির প্রতি ভয় ছিল তার কম, মনে ছিল প্রচণ্ড সাহস। তাই গভীর সমুদ্রে ভেসে গেলেও বেঁচে থাকার সাহস হারাননি। ভাসতে থাকেন। ভাসতে থাকেন। উপরে আকাশ আর নিচে পানি। রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন। ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা করতে করতে ১ দিন থেকে ২ দিন হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন।
রবীন্দ্রনাথের শরীর দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু বাঁচার কোনো অবলম্বন খুঁজে পায় না। খাবার বলতে কেবল যখন বৃষ্টি নামে তখন সেই বৃষ্টির পানি। কারণ সমুদ্রের লোনা পানি পান করাও যায় না। তবুও রবীন্দ্রনাথ হার মানেননি। ভাসতে থাকেন, ভাসতে থাকেন।
ভাসতে ভাসতে সাতদিন পার হয়ে যায়। সাতদিন পর প্রায় ৬০০ কি.মি. ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় এসে পৌঁছে। তখন বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি জাওয়াদের’ ক্যাপ্টেন অনেক দূর থেকে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। দেখতে পেয়ে জাহাজের লোকজন তার দিকে লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে মারে। কিন্তু সে ধরতে পারে না। তলিয়ে যায়। কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন জাতপাত, ধর্মীয় ভেদাভেদ, সীমানার কাঁটাতার ভুলে তার পেছনে ছুটতে থাকে।
একজন মানুষের পেছনে ছুটতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে আবার তাকে দেখা যায়। ক্যাপ্টেন তাৎক্ষণিক জাহাজ সেদিকে ঘুড়িয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে মারে। একপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লাইফ জ্যাকেট ধরতে পারে। এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে আসতে থাকে। কাছাকাছি এলে ক্যারেন ফেলে তাকে জাহাজে তোলা হয়।
তাকে জাহাজে তোলার দৃশ্যটি একজন নাবিক ভিডিওতে ধারণ করেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথকে যখন সফলভাবে জাহাজে তোলা সম্ভব হয় তখন জাহাজের সকল নাবিক খুশিতে চিৎকার করে ওঠে।
একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যায়। একজন মৃত্যুমুখের যাত্রীকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার যে উত্তেজনা ভিডিওটি দেখলে আপনিও ফিল করতে পারবেন।
ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদের ক্যপ্টেনকে। ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদে উপস্থিত সকল নাবিককে। একজন মানব সন্তানকে জীবন ফিরিয়ে দিয়ে মানবতার যেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা পৃথিবীবাসীকে আরো বেশি মানবিক হতে শেখাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলতে শেখাবে। মানুষ হতে শেখাবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রবীন্দ্রনাথকে যখন বাংলাদেশের নাবিকরা উদ্ধার করছে ঠিক সেই মহূর্তে চাপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় বিএসএফ দুই বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
রবীন্দ্রনাথের এই ঘটনা প্রকাশ পাবার পরপরই দুই বাংলার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চারদিক ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গভীর রাত থেকে আসতে শুরু করেছে দুই বাংলার নিউজ পোর্টালেও। আজ দিনেই এসে যাবে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়।
আশা করা যায়, এই খবর কয়েক দিনের মধ্যে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়বে। তখন এই খবর পৌঁছে যাবে ভারতের একেবারে উপরের লোকজনের কানে। এই খবর পৌঁছে যাবে ভারতের বিএসএফের প্রধানদের কানেও।
রবীন্দ্রনাথের এই উজ্জ্বলতম ঘটনাকে সম্মান করে হলেও বিএসএফ প্রতিজ্ঞা করবে যে, তারা নিরস্ত্র কোনো মানুষকে উদ্দেশ্ করে আর গুলি করবে না।
রাতের অন্ধকারে কোনো অপরাধীকে দেখলেই হত্যার জন্য গুলি চালাবে না। কারণ, চোরা কারবারিরা এমন কোনো কিছুই চুরি করতে পারবে না যা মানুষের জীবনের চেয়েও দামি। মানবতার চেয়েও দামি।