ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামী করে মামলা- কুলাউড়ায় সালিশী বৈঠকে অপমানিত হয়ে প্রতিবন্ধী যুবকের আত্মহনন
- আপডেটের সময় : ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯
- / ১৩৯৩ টাইম ভিউ
দেশ দিগন্ত ডেক্স: গ্রাম্য আদালতে সালিশী বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান সহ তার কয়েক সঙ্গীদের রায়ে এক অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারকে চোর সাজিয়ে জরিমানা ও মারধর করার অপমান সইতে না পেরে ইছরাইল আলী (২৮) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় প্রতিবন্ধী যুবকের পিতা আছদ আলী ৭ মে মঙ্গলবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে ৩ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া পৌরসভার মধ্য মনসুর গ্রামের আছদ আলীর পুত্র প্রতিবন্ধী ইছরাইল আলী পৌর শহরের মনসুর সাইন বোর্ড এলাকায় চায়ের দোকানের ব্যবসা করতেন। একই এলাকার সামছুল ইসলাম চৌধুরী পাবেলের পরিবারের সাথে ইছরাইল আলী ও তার পিতা আছদ আলীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় সামছুল ইসলাম কোথাও বেড়াতে গেলে তার বাসার চাবি ইছরাইল আলী বা আছদ আলীর কাছে রেখে যেতেন। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সামছুল ইসলাম তার বাসার চাবি ইছরাইলের কাছে দিয়ে তার পরিবার সহ বেড়াতে যান। ইছরাইল আলী রাতে তার পিতা আছদ আলীর কাছে সামছুল ইসলামের বাসার চাবি দিয়ে জানায় ওই বাসায় ঘুমাবার জন্য সামছুল ইসলাম বলে গেছেন। আছদ আলী রাতে সামছুল ইসলাম এর বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো, আলমারিও লন্ডভন্ড। রান্নাঘরের কাঠের দরজা ভাঙ্গা। হতভম্ব আছদ আলী আশপাশের লোকজন ও বাসার মালিক সামছুল ইসলামকে অবহিত করেন।
সামছুল ইসলাম বাসায় এসে চুরি হয়েছে দেখে আছদ আলী ও তার ছেলে ইছরাইল চুরি করেছে বলে গালিগালাজ করে তাদের আত্মীয় কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালামকে জানান। চেয়ারম্যানের নির্দেশে আছদ আলী তার প্রতিবন্ধী পুত্র ইছরাইল আলী ও ছোট ছেলে রায়হান আলী (১৬) কে অভিযুক্ত করে কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছে বিচার প্রার্থী হোন সামছুল ইসলাম। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এপ্রিলের ২৫ তারিখ চেয়ারম্যান ছালাম এর অফিস কক্ষে সালিশী বৈঠক বসে। বৈঠকে চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গীরা পিতা-পুত্রকে চোর আখ্যায়িত করে এক সপ্তাহের মধ্যে সামছুল ইসলামকে ৭০ হাজার টাকা দেয়ার রায় দেন। সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় চেয়ারম্যান ছালাম আবারো নোটিশ দিয়ে ৫ মে রবিবার আছদ আলী ও তার ছেলেদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। কেন টাকা পরিশোধ করোনি জানতে চাইলে আছদ আলী ও তার ছেলেরা চেয়ারম্যানকে বলে আমরা খুবই গরিব মানুষ, কোন কিছুই চুরি করিনি। ৭০ হাজার টাকা দিতে পারবো না। এসময় চেয়ারম্যান ছালাম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রতিবন্দি ইসরাঈলকে মারধর করেন। চেয়ারম্যান ছালাম তার আগের দেয়া রায় ৭০ হাজার টাকা কমিয়ে ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার রায় দিয়ে সাদা কাগজে পিতা পুত্রদের স্বাক্ষর রেখে তাদের বিদায় করেন। অপমানে জর্জরিত প্রতিবন্ধী ইছরাইল আলী ওই দিনই সন্ধ্যার পরে বিষপান করলে তাকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৬ মে সোমবার সকাল ৮টায় ইছরাইল মৃত্যুবরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় জয়পাশায় হযরত কামালশাহ (রহঃ) এর মাজারের পাশে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে নিহত ইছরাইল আলীর বড় ভাই ইয়াসিন আলী সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সকাল ৮টায় আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান ছালাম ও নজরুল ওসমানী হাসপাতালে দেখতে গেলেও শহরে তার জানাযার নামাজে তারা কেউ আসেনি।
চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে তিনি ৩৫ হাজার জরিমানা করার কথা স্বীকার করেছেন।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়ারদৌস হাসান বলেন, নিহত যুবকের পিতা আছদ আলী আত্মহত্যার প্ররোচনা করার অপরাধে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সালাম, বাসার মালিক সামছুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে আসামী করে থানায় মামলা করেছেন। মামলা নং-০৭।