ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

মোসলেমের ৫৯ বছরের বিরল পত্রিকা সংগ্রহশালা

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : ০২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ১৭৯১ টাইম ভিউ

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: বই বা পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের সমাহার বসানোর নেশা অনেকেরই। আর এটা সম্ভব হয় বেশির ভাগই সৌখিন বা অর্থনৈতিভাবে সচ্ছল মানুষ দিয়ে। কিন্তু সেটা যদি হয় নানা টানাপোড়েনের সংসারের একজন দরিদ্র মানুষ দিয়ে, তাহলে সত্যিই বিষয়টি আবাক হওয়ার। আর এমনই জানা গেছে- ময়মনসিংহের সংবাদপত্রপ্রেমী ব্যক্তি মোসলেহ উদ্দীন ওরফে মোসলেমকে নিয়ে। তিনি প্রায় ৫৯ বছর ধরে নিরলসভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা থেকে রিপোর্ট বা ফিচার কেটে কেটে সংগ্রহ করে এসেছেন। হাজার হাজার ইংরেজি অথবা বাংলা ভাষার সংবাদপত্রসহ, পত্রিকায় দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কথা, প্রত্যেক বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সংখ্যা, সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, কৃষি, স্বাস্থ্য, ধর্ম, রকমারি ও বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কিত পত্রিকা তারিখ অনুযায়ী সাজিয়ে বিরল সংগ্রহশালা বানিয়েছেন জেলাটির গৌরীপুর উপজেলার বেকারকান্দা গ্রামের মোসলেম।

তার পত্রিকা সংগ্রহশালায় আছে- ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংসদে দেওয়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধকালীন পত্রিকা, বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ (২১ জুন, ১৯৭৫), কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বনাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, আদিবাসী কারা, শেখ হাসিনার বিভিন্ন কথা ও ট্রানজিট- এমন তথ্যসমৃদ্ধ দৈনিক। আরও রয়েছে  চার্লস-ডায়না, ক্লিনটন-মনিকা, এরশাদ-মেরীর বিষয়ে লেখা পত্রিকাগুলো। এছাড়া তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইংরেজি ‘মস্কো নিউজ’ পত্রিকা, মাসিক কারেন্ট ওয়ার্ল্ডয়ের সব সংখ্যা। সেইসঙ্গে সযত্নে তার সংগ্রহে আছে- পুরাতন পঞ্জিকা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র।

১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে মার্কিন মহাকাশচারীদের চাঁদে অবতরণ বিষয়ে লেখা তৎকালীন দৈনিক ইত্তেফাক, মার্কিন পরিক্রমা ও পাকিস্তান আমলের কয়েকটি দৈনিক দেশপত্রিকা তার ভাণ্ডারে আছে।

এরপর ইত্তেফাক ও জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সৃষ্টি রহস্যের খোঁজে হাবল’ সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে তার কাছে। রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত জনপ্রিয় অজস্র কলাম লেখকদের লেখা, যা পত্রিকায় দেখলেই বোঝা যায়।

তবে অর্থের অভাবে বুকসেলফ বা আলমিরা কিনতে না পারায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে সংগ্রহ করে রাখা তার এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনো বুক সেলফ বা আলমিরা কেনার সামর্থ নেই মোসলেমের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করা এসব তথ্য রক্ষা করতে চান। জানা গেছে  ছোট্ট জরাজীর্ণ একটি ঘরে তার বাস। জন্ম ১৯৪৭ সালে সম্ভ্রান্ত পরিবারে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি। ১৯৫৬ সালে স্থানীয় গজন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৬১ সালে ৫ম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে পিতার আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে পাঁচ বছর পড়াশোনা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু অদম্য মনোবল থাকায় ১৯৭২ সালে নিজের একটি ছাগল ৩৪ টাকায় বিক্রি করে পরের দিন গৌরীপুর সরকারি কলেজের কদ্দুছ কেরানীর সহায়তায় মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন মোসলেম। ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাসের পর ১৯৯৩ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বাঁচার তাগিদে ১৯৭৬ সালে তিনি তার সামান্য জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। এছাড়া ১৯৭৩ ও ১৯৭৮ সালে যথাক্রমে মাতা ও পিতাকে হারান তিনি। একজন দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যে হাইস্কুলেই তিনি শিক্ষকতা করতে যান, সহজ-সরল মানুষ বিধায় সবাই তাকে ঠকিয়েছিল।

১৯৮৪ সালে একটি স্কুলে চাকরির জন্য তিনি ১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা দক্ষিণা দেন। পরে চাকরিও হয়ে যায়। কিন্তু ভগ্নিপতি সাদত আলী ও ভাগ্নে নজরুল ইসলাম কাল হয়ে দাঁড়ান জমিটা তাদের কাছে বিক্রি করা হয়নি বলে। একপর্যায়ে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তার পাওয়া চাকরিটাও হারাতে হয়।

পোস্ট শেয়ার করুন

মোসলেমের ৫৯ বছরের বিরল পত্রিকা সংগ্রহশালা

আপডেটের সময় : ০২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৯

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: বই বা পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের সমাহার বসানোর নেশা অনেকেরই। আর এটা সম্ভব হয় বেশির ভাগই সৌখিন বা অর্থনৈতিভাবে সচ্ছল মানুষ দিয়ে। কিন্তু সেটা যদি হয় নানা টানাপোড়েনের সংসারের একজন দরিদ্র মানুষ দিয়ে, তাহলে সত্যিই বিষয়টি আবাক হওয়ার। আর এমনই জানা গেছে- ময়মনসিংহের সংবাদপত্রপ্রেমী ব্যক্তি মোসলেহ উদ্দীন ওরফে মোসলেমকে নিয়ে। তিনি প্রায় ৫৯ বছর ধরে নিরলসভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা থেকে রিপোর্ট বা ফিচার কেটে কেটে সংগ্রহ করে এসেছেন। হাজার হাজার ইংরেজি অথবা বাংলা ভাষার সংবাদপত্রসহ, পত্রিকায় দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কথা, প্রত্যেক বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সংখ্যা, সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, কৃষি, স্বাস্থ্য, ধর্ম, রকমারি ও বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কিত পত্রিকা তারিখ অনুযায়ী সাজিয়ে বিরল সংগ্রহশালা বানিয়েছেন জেলাটির গৌরীপুর উপজেলার বেকারকান্দা গ্রামের মোসলেম।

তার পত্রিকা সংগ্রহশালায় আছে- ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংসদে দেওয়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধকালীন পত্রিকা, বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ (২১ জুন, ১৯৭৫), কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বনাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, আদিবাসী কারা, শেখ হাসিনার বিভিন্ন কথা ও ট্রানজিট- এমন তথ্যসমৃদ্ধ দৈনিক। আরও রয়েছে  চার্লস-ডায়না, ক্লিনটন-মনিকা, এরশাদ-মেরীর বিষয়ে লেখা পত্রিকাগুলো। এছাড়া তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইংরেজি ‘মস্কো নিউজ’ পত্রিকা, মাসিক কারেন্ট ওয়ার্ল্ডয়ের সব সংখ্যা। সেইসঙ্গে সযত্নে তার সংগ্রহে আছে- পুরাতন পঞ্জিকা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র।

১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে মার্কিন মহাকাশচারীদের চাঁদে অবতরণ বিষয়ে লেখা তৎকালীন দৈনিক ইত্তেফাক, মার্কিন পরিক্রমা ও পাকিস্তান আমলের কয়েকটি দৈনিক দেশপত্রিকা তার ভাণ্ডারে আছে।

এরপর ইত্তেফাক ও জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সৃষ্টি রহস্যের খোঁজে হাবল’ সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে তার কাছে। রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত জনপ্রিয় অজস্র কলাম লেখকদের লেখা, যা পত্রিকায় দেখলেই বোঝা যায়।

তবে অর্থের অভাবে বুকসেলফ বা আলমিরা কিনতে না পারায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে সংগ্রহ করে রাখা তার এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনো বুক সেলফ বা আলমিরা কেনার সামর্থ নেই মোসলেমের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করা এসব তথ্য রক্ষা করতে চান। জানা গেছে  ছোট্ট জরাজীর্ণ একটি ঘরে তার বাস। জন্ম ১৯৪৭ সালে সম্ভ্রান্ত পরিবারে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি। ১৯৫৬ সালে স্থানীয় গজন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৬১ সালে ৫ম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে পিতার আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে পাঁচ বছর পড়াশোনা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু অদম্য মনোবল থাকায় ১৯৭২ সালে নিজের একটি ছাগল ৩৪ টাকায় বিক্রি করে পরের দিন গৌরীপুর সরকারি কলেজের কদ্দুছ কেরানীর সহায়তায় মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন মোসলেম। ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাসের পর ১৯৯৩ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বাঁচার তাগিদে ১৯৭৬ সালে তিনি তার সামান্য জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। এছাড়া ১৯৭৩ ও ১৯৭৮ সালে যথাক্রমে মাতা ও পিতাকে হারান তিনি। একজন দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যে হাইস্কুলেই তিনি শিক্ষকতা করতে যান, সহজ-সরল মানুষ বিধায় সবাই তাকে ঠকিয়েছিল।

১৯৮৪ সালে একটি স্কুলে চাকরির জন্য তিনি ১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা দক্ষিণা দেন। পরে চাকরিও হয়ে যায়। কিন্তু ভগ্নিপতি সাদত আলী ও ভাগ্নে নজরুল ইসলাম কাল হয়ে দাঁড়ান জমিটা তাদের কাছে বিক্রি করা হয়নি বলে। একপর্যায়ে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তার পাওয়া চাকরিটাও হারাতে হয়।