ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনে বড়লেখার সোয়েব আহমেদের সমর্থনে মতবিনিময় সভা ইতালির ভেনিসে গ্রিন সিলেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ইতালির ভেনিসে এনটিভির ইউরোপের ডিরেক্টর সাবরিনা হোসাইন কে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা

অপরিকল্পিত খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় রাজধানী পানিতে থৈ থৈ

দেশদিগন্ত ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ১২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • / ৫৭৮ টাইম ভিউ

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে রাজধানী ঢাকা। দুদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা অলি-গলি ডুবে গেছে। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। রাজধানীর পানিবদ্ধতার জন্য অপরিকল্পিত খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ পানিবদ্ধতা নিরসনে বছর বছর খাল ও ড্রেনের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, বরং এই দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ অবস্থায় নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে খাল ও ড্রেন ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড শোষণ ব্যবস্থা আর জলাশয়কে বাদ দিয়ে পরিকল্পনা করলে সুফল পাওয়া যাবে না। ড্রেন ও খালের পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাধার ও খোলা জায়গা (কংক্রিট ঢালাইয়ে আচ্ছাদিত নয়) নিশ্চিত করতে পারলেই ঢাকায় পানিবদ্ধতা দূর করা যাবে।

টানা দুদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলাচল করা গাড়িগুলো যানজটে পানির মধ্যে আটকে থাকছে। গত দুদিন নিয়মিত কর্মদিবস থাকায় মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হয়েছে। কিন্তু চলার পথে বাধ সেধেছে রাস্তায় জমে থাকা পানি। প্রধান রাস্তা থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলিতে পানি থাকায় সাধারণ কাজে বের হয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মানিকনগর, মুগদা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ওয়্যারলেস গেট, ফার্মগেইট, তেজগাঁও, কলাবাগান, কমলাপুর, পল্টন, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকা, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ এলাকায় রাস্তায় রিকশা, ভ্যান এবং গাড়ির অধিকাংশ অংশ ডুবে গেছে। ড্রেনের উপচে ময়লা আবর্জনা রাস্তার পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। ময়লার দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দায় ছিল। অন্যদিকে মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার মূল সড়ক রোকেয়া সরণীতে বৃষ্টির পানি জমেছে। মূল সড়কে একহাঁটু পানি দেখা গেছে। রামচন্দ্রপুর খালের নবোদয় হাউজিং, আদাবর, শেকেরটেকসহ বিভিন্ন এলাকায় খালে পানির বাড়ার কারণে মূল সড়কে পানি উঠেছে। পূর্ব রাজাবাজার এবং গ্রীন রোড এলাকায় রাস্তাগুলো হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নাখালপাড়া, গ্রিন রোড, মালিবাগ, চৌধুরিপাড়া, ডিআইটি রোড, বাড্ডার কিছু অংশের সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। ধানমন্ডি-২৭, শুক্রাবাদ, জিগাতলা, মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকাও পানিতে থৈ থৈ। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর অবধি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার। সকাল থেকে থেমে থেমে যে ভারী বৃষ্টিতে পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ ড.আব্দুল মান্নান জানান, সারাদেশে বর্তমানের আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এই বৃষ্টিপাত চলমান থাকবে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারে ৫১ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ৩১ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৩৭ মিলিমিটার, নিকলীতে ৩৩ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ২০ মিলিমিটার, সিলেটে ১৬ মিলিমিটার এবং ঈশ্বরদীতে ১০ মিলিমিটার। আজ বুধবারও ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারীবর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ঢাকার পানিবদ্ধতার মূল কারণ নিয়ে ২০১৭ সালে একটি সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তাতে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় ৪৩টি খাল ছিল। এসব খালের মধ্যে ২৬টি ঢাকা ওয়াসা ও আটটি ঢাকা জেলা প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আর নয়টি খাল বক্স-কালভার্ট, রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনে পরিণত করা হয়েছে। বাকিগুলো বিলীন হয়ে গেছে। এসব খালে নেই পানিপ্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরজুড়ে তীব্র পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে সিটি করপোরেশনের এই প্রতিবেদনের খালের হিসাবের সঙ্গে একমত নন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা জানিয়েছেন খালের সংখ্যা ছিল ৫২টি। বাকি খালগুলোর এখন অস্তিত্ব নেই।
ডিএনসিসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদ্যমান খালগুলোর মধ্যে রামচন্দ্রপুর খাল ১০০ ফুটের জায়গায় ৬০ ফুট, মহাখালী খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ৩০ ফুট, প্যারিস খাল ২০ ফুটের জায়গায় ১০-১২ ফুট, বাইশটেকি খাল ৩০ ফুটের জায়গায় ১৮-২০ ফুট, বাউনিয়া খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ৩৫-৪০ ফুট, দ্বিগুণ খাল ২০০ ফুটের জায়গায় ১৭০ ফুট, আবদুল্লাহপুর খাল ১০০ ফুটের জায়গায় ৬৫ ফুট, কল্যাণপুর প্রধান খাল ১২০ ফুটের জায়গায় স্থানভেদে ৬০ থেকে ৭০ ফুট, কল্যাণপুর ‘ক’ খালের বিশাল অংশে এখন সরু ড্রেন, রূপনগর খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট, কাটাসুর খাল ২০ মিটারের জায়গায় ১৪ মিটার, ইব্রাহিমপুর খালের কচুক্ষেত সংলগ্ন মাঝামাঝি স্থানে ৩০ ফুটের জায়গায় ১৮ ফুট রয়েছে।

এসব খালের অধিকাংশ স্থানে প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও ময়লা-অবর্জনা ভরাট করে রেখেছে। ফলে খালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিলীন হয়ে গেছে অস্তিত্ব। এতগুলো খাল থাকার পরেও রাজধানীর পানিবদ্ধতার কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দখল-দূষণের পরেও যে পরিমাণ খাল রয়েছে সেটাও যদি সচল রাখা যেতো তাহলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

এসব খাল ও ড্রেন সচল করার জন্য প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ বছর সড়ক, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ছিল ৬৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ব্যয় করা হয়েছে ৫৯৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় করা হয়েছে ৭১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এই খাতে গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৭২ টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ১৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২৪ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসাও তাদের নিজস্ব ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে ব্যয় করে বড় অঙ্কের টাকা।

পানিবদ্ধতার জন্য এত টাকা ব্যয় করা হলেও এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। উপরন্তু প্রতি বছরই পানিবদ্ধতার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। তবে দুই একটি প্রকল্পের কারণে এলাকাভিত্তিক কিছুটা মুক্তি মিললেও তার প্রভাব গিয়ে অন্য এলাকায় পড়ে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনের পর দিন কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-এ এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ ভাগে। একই অবস্থা জলজ ভূমিরও। গত বছর এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ ভাগ। এভাবে দিন দিন জলজ ভূমি ও খালি জায়গাগুলো কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যতদিন খাল ও ড্রেন কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে বের করে আনা যাবে না, ততদিন ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর খাল ও ড্রেন কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনার কারণেই আজ বৃষ্টি হলে ঢাকা ডুবে যাচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসন করতে হলে খাল ও ড্রেনের পাশাপাশি উন্মুক্ত জায়গা ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে।

পোস্ট শেয়ার করুন

অপরিকল্পিত খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় রাজধানী পানিতে থৈ থৈ

আপডেটের সময় : ১২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে রাজধানী ঢাকা। দুদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা অলি-গলি ডুবে গেছে। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। রাজধানীর পানিবদ্ধতার জন্য অপরিকল্পিত খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ পানিবদ্ধতা নিরসনে বছর বছর খাল ও ড্রেনের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, বরং এই দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ অবস্থায় নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে খাল ও ড্রেন ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড শোষণ ব্যবস্থা আর জলাশয়কে বাদ দিয়ে পরিকল্পনা করলে সুফল পাওয়া যাবে না। ড্রেন ও খালের পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাধার ও খোলা জায়গা (কংক্রিট ঢালাইয়ে আচ্ছাদিত নয়) নিশ্চিত করতে পারলেই ঢাকায় পানিবদ্ধতা দূর করা যাবে।

টানা দুদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলাচল করা গাড়িগুলো যানজটে পানির মধ্যে আটকে থাকছে। গত দুদিন নিয়মিত কর্মদিবস থাকায় মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হয়েছে। কিন্তু চলার পথে বাধ সেধেছে রাস্তায় জমে থাকা পানি। প্রধান রাস্তা থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলিতে পানি থাকায় সাধারণ কাজে বের হয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মানিকনগর, মুগদা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ওয়্যারলেস গেট, ফার্মগেইট, তেজগাঁও, কলাবাগান, কমলাপুর, পল্টন, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকা, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ এলাকায় রাস্তায় রিকশা, ভ্যান এবং গাড়ির অধিকাংশ অংশ ডুবে গেছে। ড্রেনের উপচে ময়লা আবর্জনা রাস্তার পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। ময়লার দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দায় ছিল। অন্যদিকে মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার মূল সড়ক রোকেয়া সরণীতে বৃষ্টির পানি জমেছে। মূল সড়কে একহাঁটু পানি দেখা গেছে। রামচন্দ্রপুর খালের নবোদয় হাউজিং, আদাবর, শেকেরটেকসহ বিভিন্ন এলাকায় খালে পানির বাড়ার কারণে মূল সড়কে পানি উঠেছে। পূর্ব রাজাবাজার এবং গ্রীন রোড এলাকায় রাস্তাগুলো হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নাখালপাড়া, গ্রিন রোড, মালিবাগ, চৌধুরিপাড়া, ডিআইটি রোড, বাড্ডার কিছু অংশের সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। ধানমন্ডি-২৭, শুক্রাবাদ, জিগাতলা, মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকাও পানিতে থৈ থৈ। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর অবধি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার। সকাল থেকে থেমে থেমে যে ভারী বৃষ্টিতে পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ ড.আব্দুল মান্নান জানান, সারাদেশে বর্তমানের আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এই বৃষ্টিপাত চলমান থাকবে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারে ৫১ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ৩১ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৩৭ মিলিমিটার, নিকলীতে ৩৩ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ২০ মিলিমিটার, সিলেটে ১৬ মিলিমিটার এবং ঈশ্বরদীতে ১০ মিলিমিটার। আজ বুধবারও ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারীবর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ঢাকার পানিবদ্ধতার মূল কারণ নিয়ে ২০১৭ সালে একটি সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তাতে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় ৪৩টি খাল ছিল। এসব খালের মধ্যে ২৬টি ঢাকা ওয়াসা ও আটটি ঢাকা জেলা প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আর নয়টি খাল বক্স-কালভার্ট, রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনে পরিণত করা হয়েছে। বাকিগুলো বিলীন হয়ে গেছে। এসব খালে নেই পানিপ্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরজুড়ে তীব্র পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে সিটি করপোরেশনের এই প্রতিবেদনের খালের হিসাবের সঙ্গে একমত নন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা জানিয়েছেন খালের সংখ্যা ছিল ৫২টি। বাকি খালগুলোর এখন অস্তিত্ব নেই।
ডিএনসিসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদ্যমান খালগুলোর মধ্যে রামচন্দ্রপুর খাল ১০০ ফুটের জায়গায় ৬০ ফুট, মহাখালী খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ৩০ ফুট, প্যারিস খাল ২০ ফুটের জায়গায় ১০-১২ ফুট, বাইশটেকি খাল ৩০ ফুটের জায়গায় ১৮-২০ ফুট, বাউনিয়া খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ৩৫-৪০ ফুট, দ্বিগুণ খাল ২০০ ফুটের জায়গায় ১৭০ ফুট, আবদুল্লাহপুর খাল ১০০ ফুটের জায়গায় ৬৫ ফুট, কল্যাণপুর প্রধান খাল ১২০ ফুটের জায়গায় স্থানভেদে ৬০ থেকে ৭০ ফুট, কল্যাণপুর ‘ক’ খালের বিশাল অংশে এখন সরু ড্রেন, রূপনগর খাল ৬০ ফুটের জায়গায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট, কাটাসুর খাল ২০ মিটারের জায়গায় ১৪ মিটার, ইব্রাহিমপুর খালের কচুক্ষেত সংলগ্ন মাঝামাঝি স্থানে ৩০ ফুটের জায়গায় ১৮ ফুট রয়েছে।

এসব খালের অধিকাংশ স্থানে প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও ময়লা-অবর্জনা ভরাট করে রেখেছে। ফলে খালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিলীন হয়ে গেছে অস্তিত্ব। এতগুলো খাল থাকার পরেও রাজধানীর পানিবদ্ধতার কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দখল-দূষণের পরেও যে পরিমাণ খাল রয়েছে সেটাও যদি সচল রাখা যেতো তাহলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

এসব খাল ও ড্রেন সচল করার জন্য প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ বছর সড়ক, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ছিল ৬৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ব্যয় করা হয়েছে ৫৯৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় করা হয়েছে ৭১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এই খাতে গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৭২ টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ১৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২৪ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসাও তাদের নিজস্ব ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে ব্যয় করে বড় অঙ্কের টাকা।

পানিবদ্ধতার জন্য এত টাকা ব্যয় করা হলেও এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। উপরন্তু প্রতি বছরই পানিবদ্ধতার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। তবে দুই একটি প্রকল্পের কারণে এলাকাভিত্তিক কিছুটা মুক্তি মিললেও তার প্রভাব গিয়ে অন্য এলাকায় পড়ে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনের পর দিন কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-এ এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ ভাগে। একই অবস্থা জলজ ভূমিরও। গত বছর এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ ভাগ। এভাবে দিন দিন জলজ ভূমি ও খালি জায়গাগুলো কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যতদিন খাল ও ড্রেন কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে বের করে আনা যাবে না, ততদিন ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর খাল ও ড্রেন কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনার কারণেই আজ বৃষ্টি হলে ঢাকা ডুবে যাচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসন করতে হলে খাল ও ড্রেনের পাশাপাশি উন্মুক্ত জায়গা ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে।