আপডেট

x


ভারতে সাজা ভোগের পর দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় ১৯ বাংলাদেশী

সোমবার, ০৪ মার্চ ২০১৯ | ১০:১৬ অপরাহ্ণ | 853 বার

ভারতে সাজা ভোগের পর দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় ১৯ বাংলাদেশী

ভারতের আসাম রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে শতাধিক বাংলাদেশী বন্দী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এদের অধিকাংশ সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদেরকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছিল। সে দেশের আদালতে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা জটিলতায় তাদের দেশে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে।

এদিকে জেলে থাকা এসব বন্দীদের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না অনেকের স্বজনরা। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার ভোলারকান্দি গ্রামের চান্দ আলী, নরসিংদী জেলার পাচদোনার আব্দুল লতিফসহ অনেকের কথা তাদের স্বজনরা ভুলেই গেছেন। অসহায় ও নিরীহ বন্দীদের সহযোগীতায় সরকারি-বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমার দাশ।



ভারতের আসামে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনসহ বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, শিলচরের একটি কারাগারের ৫৪ জন বাংলাদেশি বন্দীর সাজার মেয়াদ ২ থেকে ৬ বছর আগে শেষ হলেও নাম পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের দেশে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। ভারতের আসাম রাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর গত বছরের জুলাইয়ে নতুন কর্মস্থলে (গোয়াটি) যোগদান করে প্রদেশের বিভিন্ন কারাগারে বাংলাদেশি বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে তৎপরতা চালান। মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমার দাশ দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশের বন্দীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে উভয় দেশের সরকার, দুতাবাস ও আদালতের জটিলতা নিরসনে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসামে নিযুক্ত সহকারি হাই কমিশনারের বিশেষ তত্তাবধানে ও অমলেন্দু দাশের সহায়তায় ভারতের কাচাড় জেলার শিলচর কারাগারে বন্দী ৫৪ বাংলাদেশীর ২১ বাংলাদেশি বন্দী গত ১৯ জানুয়ারি বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি বর্ডার হয়ে দেশে ফিরেছেন।

আসামে বাংলাদেশের নিযুক্ত সহকারি হাইকমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর জানান, আসামের গোয়াটিতে যোগদানের পরই তিনি শিলচর জেলখানা ভিজিট করেন ও অমলেন্দু দাশের সহায়তায় শিলচর কারাগারে অবশিষ্ট ৩৩ বাংলাদেশি বন্দীর ১৯ জনের নাম ঠিকানা নিশ্চিত হন। তাদের স্বজনদের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দুতাবাসে পাঠিয়েছেন। এসব বাংলাদেশি বন্দীর আপন নীড়ে ফেরার প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। তারা এখন দেশে ফেরার প্রহর গুনছে। আশা করা যাচ্ছে মার্চেই তারা দেশে ফিরবেন।

সাজাভোগের পর দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা বন্দীরা হলেন- বড়লেখার ভোলারকান্দি গ্রামের চান্দ আলী, মোহাম্মদনগর গ্রামের মো. ইব্রাহিম, জুড়ীর সাগরনালের ফারুক মিয়া, জকিগঞ্জের এওলাসার গ্রামের সুজিত চন্দ্র দাস, হাতিধর গ্রামের ইকবাল হোসেন, নয়াগ্রামের শামীম আহমদ, ফিল্লাকান্দি গ্রামের আজিম উদ্দিন, রহিম খার চকের শেখর নমশুদ্র, সিলেটের হেতিমগঞ্জের আহমেদ উদ্দিন, ভদ্রা গ্রামের দেবদাস রবিদাস, কানাইঘাটের জোয়ারীমাটি গ্রামের আব্দুল গফুর, বিষ্ণনগর গ্রামের বাদল মিয়া, বিশ্বনাথের লালটেকের ইছহাক আলী, হবিগঞ্জের বাহুবলের ভবানীপুর গ্রামের ছায়াদ আলী আমিন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম কাকুরিয়ার রবিন্দ্র দাস, মিটামইনের দিজেন্দ্র চন্দ্র দাস, কুলিয়াচরের শাহ আলী মিয়া, নরসিংদীর পাচদোনার আব্দুল লতিফ ও ক´বাজারের শ্যামল জাল দাস। অবশিষ্ট ১০/১২ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশি বন্দী প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতাকারী মৌলভীবাজারের অমলেন্দু দাশ জানান, বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি রাষ্ট্র। সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, অনেকে আবার অতি উৎসাহী হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে থাকে। আবার অনেকেই অপরাধমুলক কাজে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিকট ধরা পড়ে জেলে যায়। এ দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে অনেক ভারতীয় বন্দীর সাজার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হওয়ার পরও তারা নিজ দেশে যেতে পারছে না। অপরদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার অনেক নাগরিক ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছে। আসাম প্রদেশের কাচাড় জেলার শিলচর জেলে অনেক বন্দী ছিলেন। গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের নিযুক্ত সহকারি হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরের প্রচেষ্ঠায় ২১ জন দেশে ফিরেছেন। এ মাসে আরো ১৯ জন আসছে।

দেশে প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব প্রসঙ্গে অমলেন্দু কুমার দাশ জানান, এর মূল কারণ বেশিরভাগ বন্দী মানসিক বিকারগ্রস্থ, সঠিক নাম ঠিকানা বলতে পারে না, পরিবারের সাথে যোগাযোগ না থাকা।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুবউন্নয়ন অধিদপ্তরের চাকুরী করলেও মানবিক ও মানবতার সেবাকে মাথায় নিয়ে অনেক সীমাবদ্ধতা ও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের জেলে থাকা বন্দীদেও নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে কাজ করছেন। এতে শারিরিক ও মানসিক চাপে থাকলেও মনের মধ্যে এক ধরণের প্রশান্তি বিরাজ করে। উভয় দেশের সরকারি-বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা উভয় দেশের অসহায় ও নিরীহ বন্দীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসলে তিনি এ কাজ থেকে অব্যাহতি নিতে পারতেন।#

মন্তব্য করতে পারেন...

comments


deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত

design and development by : http://webnewsdesign.com