ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

‘বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে সব সম্ভব

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : ০৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ১১৮২ টাইম ভিউ

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক:  নাগরিক জীবনের সংগ্রামে উপার্জনের একমাত্র সম্বল নিজের স্কুটিটি ছিনতাই হওয়ার একদিনের মধ্যেই তা উদ্ধার হওয়ার খবরে নিজের খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না শাহনাজ আক্তার পুতুল।আবেগ-উচ্ছ্বাসের মধ্যেও যতটুকু বোঝা গেল, শাহনাজ বললেন, পুলিশ যা করেছে তা কল্পনার বাইরে। বাংলাদেশের পুলিশরা যে চাইলে এত কিছু পারে, এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। ওনারা পুরো ক্রামই পেট্রোলের মতো অ্যাকশন দেখাইছে। একরাতের মধ্যে ছোঁ মাইরা গাড়ি নিয়ে আসলো, আসামি নিয়া আসল। বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে সব সম্ভব। আজ বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে যখন মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছিল শাহনাজ আক্তারের সঙ্গে। ততক্ষণে আগের দিন বিকেলে ছিনতাই হওয়া বাইক বুঝে পেয়েছেন তিনি। দুই সন্তান, মা আর ছোট বোনকে নিয়ে যে সংসার একা টেনে বেড়াচ্ছেন শাহনাজ, সেই সংসার চালানোর উপার্জনের হাতিয়ারই ছিল তার এই স্কুটি। ফলে একদিন আগেও এই স্কুটি হারিয়ে শাহনাজ ভেঙে পড়েছিলেন স্বাভাবিকভাবেই। সেই স্কুটি ফিরে পেয়ে এখন উচ্ছ্বাস বাধ মানছে না তার। শাহনাজ আক্তার বলেন, একজন মানুষ যদি পালিয়েই থাকে, তাকে বের করা কীভাবে সম্ভব! কিন্তু আমাদের পুলিশ ভাইরা তাই করছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ মিডিয়ার কাছেও। তারা সবাই এভাবে বাইক হারানোর খবর দিয়েছে বলেই তো আবার সেটা ফিরে পেলাম।

জানালেন, সারারাত ঘুমাননি। হেলমেট মাথায় নিয়ে পুরো সময়টা কাটিয়েছেন। বারবার আর্তি করছিলেন, তার বাইকটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা যেন প্রশাসন করে দেয়। বাইক ছিনতাইয়ের পর অনেকেই ফোন করেছেন তাকে। বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। কেউ কেউ নতুন বাইকও দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সাহায্য নয়, নিজের লড়াইয়ের হাতিয়ার বাইকটিই ফিরে পেতে চেয়েছেন শাহনাজ। আর সেটি ফিরে পাওয়ায় পুলিশসহ যারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই নারী বাইকার। এর আগে, বুধবার সকালে শাহনাজের মিরপুরের বাসায় বসে কথা হয় তার সঙ্গে। বাইক হারিয়ে তখনও বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত শাহনাজ। ঘরে ঢুকেও দেখি, হেলমেট পরে বসে আছেন। জানালেন, বাইক ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত খুলবেন না হেলমেট। বলেন, ‘বাইক চালাইতে চালাইতে আঙুলটা শক্ত হয়ে গেছে। কতবার পড়ে গেছি, কিন্তু ভয় পাই নাই। একবার আরেকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অনেক কঠিন শর্ত। সেজন্য আর করতে পারি নাই।’

মিরপুরের সাত হাত বাই আট হাত ‍দু’টো ঘরে মা, বোন আর দুই মেয়েকে নিয়ে শাহনাজের সংসার। বৃদ্ধ মা অসুস্থ। তার চিকিৎসা, দুই মেয়ের লেখাপড়া— সবই চলে শাহনাজের উপার্জনে। তবে মাস কয়েক আগে ছোট বোনের চাকরি হওয়ায় কিছুটা সহায়তা পাচ্ছেন তার কাছেও। শাহনাজ জানান, মায়ের জমানো টাকা আর ছোট বোনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাইক কেনেন তিনি। বলেন, মেয়ে দুইটাকে নিয়ে খুব কষ্ট করি। আপনারা আমার বাইকটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক বাইক কোম্পানি থেকে বাইক গিফট করব বলে ফোন করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ফোন করেছেন। কিন্তু আমার কারও গিফট বা কারও দয়া লাগবে না। আমি কষ্ট কইরাই বাঁচতে চাই। হাত পেতে নেওয়ার হলে তো আগেই পারতাম, কষ্ট করতাম না। তবে যদি পারেন, একটা ‘পারমানেন্ট কাজে’র ব্যবস্থা করে দেন। যেন সম্মান নিয়ে মা-বোন আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে পারি।

শাহনাজ আক্তার বলেন, বড় মেয়েটাকে গতকালই ৫ হাজার টাকা ধার করে মিরপুর বাংলা স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তি করিয়েছি। ছোট মেয়েটা পড়ে প্রিক্যাডেটে। ওদের খরচসহ সংসার খরচ চালাতে আমি হিমশিম খাই।

বাইক চালিয়ে কেমন আয় হয়— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তেলের টাকা বাদ দিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো থাকে। বের হই দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে। ফিরি রাত সাড়ে ১০টার ভেতরে। রাত করি না বেশি। মনে রাখতে হয়, আমার দুইটা মেয়ে আছে।’ সকালে মেয়েদের নাস্তা রেডি করে স্কুলে দিতে হয় বলেই সকালে বাইক নিয়ে বের হতে পারেন না বলে জানান তিনি। সকালে শাহনাজের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তাকে ফোন করেন বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক মোর্শেদ হাসিব হাসান। জানান, বাইকটি পাওয়া গেছে। শুনেই খুশির ঝলক বয়ে যায় শাহনাজের চোখে-মুখে। তবু শান্ত হতে পারছিলেন না। বলেন, ‘ভাই, বাইকটা হাতে আনার ব্যবস্থা করে দেন। হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমার মনটা শান্ত হচ্ছে না। আমাকে কাজে নামতে হবে, আর চলতেছে না। আমার কারও সাহায্য দরকার নাই ভাই, আমি কারও কাছে ১০টা টাকাও চাই না। কেবল আমার বাইকটা আমি ফেরত চাই।’

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবারে মোটরসাইকেল চালিয়ে শাহনাজ বেগম এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন দেশজুড়ে। সারাবাংলাসহ বেশকিছু গণমাধ্যম তাকে নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে শাহনাজের পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি অভিনব কৌশলে তার স্কুটিটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বুধবার ভোরের দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্কুটিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে তেজগাঁও জোনের পুলিশ উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার শাহনাজের কাছে স্কুটির চাবি ফেরত দেন। এসময় পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাহনাজ বলেন, পুলিশ যে এত দ্রুত আমার বাইক ফিরিয়ে দিতে পেরেছে এ জন্য আমি বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ। ইন্ডিয়ান চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রোল দেখেছি, এমন উদ্ধার অভিযান শুধু টিভিতেই দেখা হয় জানতাম। বাস্তবে পুলিশ যে রাতারাতি এমন একটি অভিযান করে আমার রিজিক ফিরিয়ে দিতে পারবে, এটা বুঝিনি। গাড়ি ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে সারাবাংলাকে ধন্যবাদ জানাই। বাইক চুরির পর সারাবাংলা থেকে ফোন করে নিউজ করেছে। অন্যরাও করেছে। সে কারণেই হয়তো এত দ্রুত বাইকটি ফিরে পেলাম।

উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, জনি নামের এক তরুণের সঙ্গে শাহানাজ আক্তারের পরিচয় হয়। শাহনাজকে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। এ অবস্থায় ওই তরুণ তাকে স্থায়ী চাকরি দেখার প্রলোভন দেখায়। তারপর পরিকল্পনা করে বাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাইকটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনিকে নারায়ণগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ছিনতাই করা স্কুটিসহ গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ডিসি বিপ্লব। তিনি আরও বলেন, শাহনাজকে যতটুকু সম্ভব আইনি সহযোগিতা আমরা দিয়েছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা বিবেচনাতেও তেঁজগাও পুলিশের পক্ষ থেকে এই উদ্যমী নারীকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

পোস্ট শেয়ার করুন

‘বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে সব সম্ভব

আপডেটের সময় : ০৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক:  নাগরিক জীবনের সংগ্রামে উপার্জনের একমাত্র সম্বল নিজের স্কুটিটি ছিনতাই হওয়ার একদিনের মধ্যেই তা উদ্ধার হওয়ার খবরে নিজের খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না শাহনাজ আক্তার পুতুল।আবেগ-উচ্ছ্বাসের মধ্যেও যতটুকু বোঝা গেল, শাহনাজ বললেন, পুলিশ যা করেছে তা কল্পনার বাইরে। বাংলাদেশের পুলিশরা যে চাইলে এত কিছু পারে, এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। ওনারা পুরো ক্রামই পেট্রোলের মতো অ্যাকশন দেখাইছে। একরাতের মধ্যে ছোঁ মাইরা গাড়ি নিয়ে আসলো, আসামি নিয়া আসল। বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে সব সম্ভব। আজ বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে যখন মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছিল শাহনাজ আক্তারের সঙ্গে। ততক্ষণে আগের দিন বিকেলে ছিনতাই হওয়া বাইক বুঝে পেয়েছেন তিনি। দুই সন্তান, মা আর ছোট বোনকে নিয়ে যে সংসার একা টেনে বেড়াচ্ছেন শাহনাজ, সেই সংসার চালানোর উপার্জনের হাতিয়ারই ছিল তার এই স্কুটি। ফলে একদিন আগেও এই স্কুটি হারিয়ে শাহনাজ ভেঙে পড়েছিলেন স্বাভাবিকভাবেই। সেই স্কুটি ফিরে পেয়ে এখন উচ্ছ্বাস বাধ মানছে না তার। শাহনাজ আক্তার বলেন, একজন মানুষ যদি পালিয়েই থাকে, তাকে বের করা কীভাবে সম্ভব! কিন্তু আমাদের পুলিশ ভাইরা তাই করছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ মিডিয়ার কাছেও। তারা সবাই এভাবে বাইক হারানোর খবর দিয়েছে বলেই তো আবার সেটা ফিরে পেলাম।

জানালেন, সারারাত ঘুমাননি। হেলমেট মাথায় নিয়ে পুরো সময়টা কাটিয়েছেন। বারবার আর্তি করছিলেন, তার বাইকটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা যেন প্রশাসন করে দেয়। বাইক ছিনতাইয়ের পর অনেকেই ফোন করেছেন তাকে। বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। কেউ কেউ নতুন বাইকও দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সাহায্য নয়, নিজের লড়াইয়ের হাতিয়ার বাইকটিই ফিরে পেতে চেয়েছেন শাহনাজ। আর সেটি ফিরে পাওয়ায় পুলিশসহ যারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই নারী বাইকার। এর আগে, বুধবার সকালে শাহনাজের মিরপুরের বাসায় বসে কথা হয় তার সঙ্গে। বাইক হারিয়ে তখনও বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত শাহনাজ। ঘরে ঢুকেও দেখি, হেলমেট পরে বসে আছেন। জানালেন, বাইক ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত খুলবেন না হেলমেট। বলেন, ‘বাইক চালাইতে চালাইতে আঙুলটা শক্ত হয়ে গেছে। কতবার পড়ে গেছি, কিন্তু ভয় পাই নাই। একবার আরেকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অনেক কঠিন শর্ত। সেজন্য আর করতে পারি নাই।’

মিরপুরের সাত হাত বাই আট হাত ‍দু’টো ঘরে মা, বোন আর দুই মেয়েকে নিয়ে শাহনাজের সংসার। বৃদ্ধ মা অসুস্থ। তার চিকিৎসা, দুই মেয়ের লেখাপড়া— সবই চলে শাহনাজের উপার্জনে। তবে মাস কয়েক আগে ছোট বোনের চাকরি হওয়ায় কিছুটা সহায়তা পাচ্ছেন তার কাছেও। শাহনাজ জানান, মায়ের জমানো টাকা আর ছোট বোনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাইক কেনেন তিনি। বলেন, মেয়ে দুইটাকে নিয়ে খুব কষ্ট করি। আপনারা আমার বাইকটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক বাইক কোম্পানি থেকে বাইক গিফট করব বলে ফোন করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ফোন করেছেন। কিন্তু আমার কারও গিফট বা কারও দয়া লাগবে না। আমি কষ্ট কইরাই বাঁচতে চাই। হাত পেতে নেওয়ার হলে তো আগেই পারতাম, কষ্ট করতাম না। তবে যদি পারেন, একটা ‘পারমানেন্ট কাজে’র ব্যবস্থা করে দেন। যেন সম্মান নিয়ে মা-বোন আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে পারি।

শাহনাজ আক্তার বলেন, বড় মেয়েটাকে গতকালই ৫ হাজার টাকা ধার করে মিরপুর বাংলা স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তি করিয়েছি। ছোট মেয়েটা পড়ে প্রিক্যাডেটে। ওদের খরচসহ সংসার খরচ চালাতে আমি হিমশিম খাই।

বাইক চালিয়ে কেমন আয় হয়— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তেলের টাকা বাদ দিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো থাকে। বের হই দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে। ফিরি রাত সাড়ে ১০টার ভেতরে। রাত করি না বেশি। মনে রাখতে হয়, আমার দুইটা মেয়ে আছে।’ সকালে মেয়েদের নাস্তা রেডি করে স্কুলে দিতে হয় বলেই সকালে বাইক নিয়ে বের হতে পারেন না বলে জানান তিনি। সকালে শাহনাজের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তাকে ফোন করেন বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক মোর্শেদ হাসিব হাসান। জানান, বাইকটি পাওয়া গেছে। শুনেই খুশির ঝলক বয়ে যায় শাহনাজের চোখে-মুখে। তবু শান্ত হতে পারছিলেন না। বলেন, ‘ভাই, বাইকটা হাতে আনার ব্যবস্থা করে দেন। হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমার মনটা শান্ত হচ্ছে না। আমাকে কাজে নামতে হবে, আর চলতেছে না। আমার কারও সাহায্য দরকার নাই ভাই, আমি কারও কাছে ১০টা টাকাও চাই না। কেবল আমার বাইকটা আমি ফেরত চাই।’

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবারে মোটরসাইকেল চালিয়ে শাহনাজ বেগম এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন দেশজুড়ে। সারাবাংলাসহ বেশকিছু গণমাধ্যম তাকে নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে শাহনাজের পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি অভিনব কৌশলে তার স্কুটিটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বুধবার ভোরের দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্কুটিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে তেজগাঁও জোনের পুলিশ উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার শাহনাজের কাছে স্কুটির চাবি ফেরত দেন। এসময় পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাহনাজ বলেন, পুলিশ যে এত দ্রুত আমার বাইক ফিরিয়ে দিতে পেরেছে এ জন্য আমি বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ। ইন্ডিয়ান চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রোল দেখেছি, এমন উদ্ধার অভিযান শুধু টিভিতেই দেখা হয় জানতাম। বাস্তবে পুলিশ যে রাতারাতি এমন একটি অভিযান করে আমার রিজিক ফিরিয়ে দিতে পারবে, এটা বুঝিনি। গাড়ি ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে সারাবাংলাকে ধন্যবাদ জানাই। বাইক চুরির পর সারাবাংলা থেকে ফোন করে নিউজ করেছে। অন্যরাও করেছে। সে কারণেই হয়তো এত দ্রুত বাইকটি ফিরে পেলাম।

উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, জনি নামের এক তরুণের সঙ্গে শাহানাজ আক্তারের পরিচয় হয়। শাহনাজকে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। এ অবস্থায় ওই তরুণ তাকে স্থায়ী চাকরি দেখার প্রলোভন দেখায়। তারপর পরিকল্পনা করে বাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাইকটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনিকে নারায়ণগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ছিনতাই করা স্কুটিসহ গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ডিসি বিপ্লব। তিনি আরও বলেন, শাহনাজকে যতটুকু সম্ভব আইনি সহযোগিতা আমরা দিয়েছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা বিবেচনাতেও তেঁজগাও পুলিশের পক্ষ থেকে এই উদ্যমী নারীকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।