কুলাউড়া তথা সিলেট বিভাগের মানুষের প্রাণপুরুষ ছিলেন আবদুল জব্বার।
- আপডেটের সময় : ০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৯
- / ১২১৪ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: ১৯৪৫ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন সিলেট জেলার কুলাউড়া আলালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মৌলভীবাজার জেলার আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর গুনমুগ্ধ, সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল জব্বার। নিভৃত পল্লিতে বেড়ে ওঠা কৃষক পরিবারের সন্তান ব্যক্তিগত আরাম আয়েস, ভোগ বিলাস, স্বাচ্ছন্দকে তুচ্ছ করে যিনি আমৃত্যু নির্যাতিত, বঞ্চিত, নিরন্ন, বানভাসী, অসহায় মানুষের অধিকার ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর অবদান শুধু কুলাউড়া উপজেলা নয় সমগ্র জাতির জন্য এক আলোর দিশারী। বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের মেধা, মনন বিকাশে, সঠিক ইতিহাসচর্চা, জ্ঞান আহরণ ও সুবিবেচক এবং বাংলাদেশের সুনাগরিক হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যে প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে চলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাঁর সে প্রয়াসকে বাস্তব রূপদান করতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও নিবেদিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আত্মকর্ম ও জীবনাদর্শ ব্যাপকভাবে তরুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার দাবী রাখে। আর হারিয়ে যাওয়া সেই সকল ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যারা লেখনী ধরার পুর্বেই অমোঘ সত্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন ইতিমধ্যে, সেই সকল মানুষদের জীবনালেখ্য তরুণ প্রজন্ম তথা জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে পারে। এমনি এক মফস্বলের অবিসংবাদিত নেতা, কুলাউড়া তথা সিলেট আওয়ামীলীগের নিভৃতচারী নক্ষত্র মরহুম মো. আবদুল জব্বার। অতি ক্ষুদ্র পরিসরে, কৃষক পরিবারেও জন্মগ্রহণ করে কণ্টকময় পথ পাড়ি দিয়ে মহান জাতীয় সংসদে উপনীত হওয়ার উদাহরণ মরহুম মো. আবদুল জব্বার। ৬২ সালের শিক্ষা কমিশন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ সর্বত্রই ছিল তাঁর অংশগ্রহণ ও বিচরণ আওয়ামীলীগ তথা এ দেশকে করেছে মহিমান্বিত। আর স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশরে প্রতিকুলতাগুলো মোকাবেলায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামীলীগের একটি বিরাট অংশ ‘কাগমারী সম্মেলনের’ মরহুম মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে দল ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামীলীগে নেতা কর্মীরা প্রায়সবাই ন্যাপে চলে যান। তখন সংগঠনের এই দুদিনের দলকে ধরে রাখতে এবং পুনরায় সুসংগঠিত করার কাজে যে কয়জন নেতা অগ্রগণ্যদের তালিকায় ছিলেন তাদের মধ্যে মরহুম আবদুল জব্বারও একজন । ১৯৫৮ সালে সালে সামরিক শাসনের সময় বহু নির্যাতন ও কষ্ট ভোগ করে জীবনকে বাজী রেখে সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশ স্বাধীন হবার পরও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদ করায় ১৯৭৫ সালে ১১ মাস ও ১৯৭৭ সালে প্রায় একবছর তাঁকে জেল কাটতে হয়েছে। তার নিখাদ দেশপ্রেম ও নির্ভেজাল গণসংযোগের ফলে কুলাউড়া থানাসহ পুরো সিলেট জেলায় আওয়ামীলীগের ভিত মজবুত হয়। এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ে সংগঠনের ভিত মজবুত রাখতে আজীবন সততার সাথে পরিশ্রম করে গেছেন। নিখাদ জনপ্রিয়তার একটি পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিগত সততা । তিনি সমাজের সকল শ্রেণিগোষ্ঠী জাতির নিকট একজন সৎ ও নির্ভীক নেতা হিসেবে বিদিত ছিলেন। জনগণের দল আওয়ামীলীগ ও জনগণের কল্যাণ কামনা ও কল্যাণকর কর্মই ছিল তাঁর ভাবনাবিলাস। তিনি মূলত কৃষকফ্রন্টে কাজ করলেও সকল শ্রেণির মানুষের সাথে তাঁর সদ্ভাব ছিল। তিনি চা বাগানের শ্রমিকদের ও নেতা ছিলেন। মহান জাতীয় সংসদে তিনি কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের সুখ দুঃখ, আশা আকাক্সক্ষার কথা বলতেন। তিনি ছিলেন ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী মরহুম আবদুল জব্বার ছিলেন বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা ও কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের প্রতি উদারতা মানুষকে আকৃষ্ট করত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা পর তিনি এর প্রতিবাদ করলে, তাকে বার বার জেল খাটতে হয়। শুধু জেল নয় তৎকালীন মাথাচাড়া দিয়ে উঠা একাত্তরের রাজকাররা তাকে হত্যারও পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্ত এদেশের মানুষের কাছে তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন বলে তাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হয়নি। তিনি যে, মানুষের নেতা ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে। তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার স্বাধীনচেতা মানুষকে ভয় ও আতংকের মধ্যে রেখেছিলো বঙ্গবন্ধু প্রীতিভাব দেখলেই তাদের উপর চলে আসতো জেল জুলুম। এ অবস্থায় মানুষ আওয়ামীলীগকে ভোট দিতে গিয়েও পারেনি। তদুপরি সাহসিকতার সাথে ৭৯ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে নির্বাচন করে তিনি বিপুল ভোট জয় লাভ করেন। সে নির্বাচনে সারা দেশে মাত্র ৩৯ জন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বলা চলে পরাশক্তি মদদকারী ৭৫-এ ক্ষমতা দখলকারীদের ভয়ে সে দিন যদি আবদুল জব্বারদের মতো নেতারা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আন্দোলনে না নামতেন, নির্বাচনে না যেতেন, তাহলে আজকে বিশ্বের একটি অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগ হয়তো রূপ নিতো না। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, কুলাউড়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও কৃষক লীগের একজন ত্যাগী নেতা আব্দুল জব্বার এক বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন এবং বাংলার গণমানুষের মুক্তির লক্কে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্টার জন কাজ করে গেছেন। আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাক্তন হুইপ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আজিজুর রহমান জানান, ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধি আন্দোলনে তাকে কারাবরণ করতে হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে কুলাউড়া থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে মৌলভীবাজার মহকুমা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে