ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

কুলাউড়ার পৃথিমপাশায় পবিত্র আশুরা পালিত

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৫০১ টাইম ভিউ

নিজস্ব প্রতিনিধি: আশুরা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। হিজরির সাল অনুসারে ১০ মহরমকে বলা হয় আশুরা। ঘটনাবহুল এই দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ইমাম হোসেনের অনুসারী শিয়া সম্প্রদায়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত নবাববাড়ী হায় হুসেন হায় হুসেন আর মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে ওঠে।
গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় পৃথিমপাশায় (নবাব বাড়ী থেকে) কারবালার দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের বিশাল তাজিয়া মিছিল বের করে। তাজিয়া মিছিলটি ইমামবাড়া থেকে বের হয়ে স্থানীয় কারবালা প্রান্তরে (কবরস্থান) গিয়ে শেষ হয়। শিয়া সম্প্রদায় সূত্রে জানা গেছে, কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডি স্মরণে প্রতি বছর ১০ মহররম ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা আর ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমেই শোক পালন করেন বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। তবে, শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ বেশ ঘটা করেই তা পালন করেন থাকেন। ১ মহররম থেকে শুরু সাড়াদিন থেকে ছোট, বড় দলে দলে চলে মার্সিয়া মাতম, মজলিশ ও জারি। প্রতি বছর দেশের ২য় বৃহৎ এবং সিলেট বিভাগের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কুলাউড়ার পৃথিমপাশার নবাব বাড়িতে। এবছরও একই অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ১০ মহররম। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেও শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আশুরা উপলক্ষে এখানে ছুটে এসেছেন। হায় হুসেন, হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে উঠে বৃহত্তর সিলেটের নবাব আলী আমজদ এর পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত পৃথিমপাশাস্থ নিজ বাড়ির সামনে স্থাপিত ইমাম বাড়া।
গত রোববার (১০ মহররম) তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় শোক পালনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ছোট বড় প্রায় ৫০টি তাজিয়া নিয়ে মিছিল সহকারে যাওয়া হয় স্থানীয় কারবালা প্রান্তরে (কবরস্থানে)। পৃথিমপাশার শিয়া সম্প্রদায় সূত্রে জানা গেছে ১ থেকে ৯ মহরম সন্ধ্যা হতেই দলে দলে বিভক্ত হয়ে জারি, নোওয়া, মজলিশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ১ম মহররম মজলিশ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমেই শেষ হয় বরণ উদ্যাপন। ২ মহরম থেকে শুরু করে ৯ মহরম পর্যন্ত সকাল, দুপুর ও গভীর রাত পর্যন্ত চলে মজলিশ, মার্সিয়া মাতম, জারি, নোওয়া। সাথে চলে রোজা, নফল নামাজ ও ইবাদত বন্দেগী। ইমামবাড়ার মোতাওয়াল্লি সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন জানান- ১০ মহরম নবাববাড়ির ইমাম বাড়া প্রাঙ্গণসহ গোটা পৃথিমপাশা এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অনেকেই এখানে দেখতে আসেন। তিনি আরো জানান- এ বছর অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়েছে। এদিকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই চাকু ও চুরি দিয়ে শরীরে রক্ত ঝরিয়ে হায় হুসেন, হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমের মাধ্যমে কারবালার সেই শোক স্মৃতি স্মরণের দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন পৃথিমপাশার কারবালা প্রান্তরে। মিছিলের সামনে সজ্জিত তাজিয়া। কুলাউড়ার পৃথিমপাশার নবাববাড়ির ইমামবাড়া থেকে বের হয় মূল তাজিয়া মিছিল। এছাড়াও উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের পাল্লাকান্দি ও মীরপুর থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়। রোববার বিকাল হতেই হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে শুরু হয় তাজিয়া মিছিল। মিছিলে দেখা যায়, কারবালার ঘটনার শোকাবহ দৃশ্যায়ন। মিছিলে বুক চাপড়ে, মাতম করে শোক প্রকাশ করেন শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। স্থানীয়রা জানান, মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্ভুজ বহন করা হয় বিবি ফাতেমার স্মরণে। এছাড়াও মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন নিশান নিয়ে আসেন। যে যার মতো এই নিশান বহন করেন। মিছিলের মধ্যে হায় হোসেন, হায় হোসেন করে শোকের গান গাওয়া হয় সমবেত কন্ঠে। এছাড়াও অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকেন। পৃশিমপাশার শিয়া অনুসারীরা জানান, আশুরার দিনে তাজিয়া বের করা হয় শোকের আবহে। মূলত ইমাম হোসেন (রা.) এর সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে এই মিছিল হয়। তাজিয়া মিছিলের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন জানান- কারবার শোককে ধারণ করে এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাতম করে শোক প্রকাশ করি সবাই।

পোস্ট শেয়ার করুন

কুলাউড়ার পৃথিমপাশায় পবিত্র আশুরা পালিত

আপডেটের সময় : ০৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিনিধি: আশুরা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। হিজরির সাল অনুসারে ১০ মহরমকে বলা হয় আশুরা। ঘটনাবহুল এই দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ইমাম হোসেনের অনুসারী শিয়া সম্প্রদায়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত নবাববাড়ী হায় হুসেন হায় হুসেন আর মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে ওঠে।
গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় পৃথিমপাশায় (নবাব বাড়ী থেকে) কারবালার দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের বিশাল তাজিয়া মিছিল বের করে। তাজিয়া মিছিলটি ইমামবাড়া থেকে বের হয়ে স্থানীয় কারবালা প্রান্তরে (কবরস্থান) গিয়ে শেষ হয়। শিয়া সম্প্রদায় সূত্রে জানা গেছে, কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডি স্মরণে প্রতি বছর ১০ মহররম ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা আর ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমেই শোক পালন করেন বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। তবে, শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ বেশ ঘটা করেই তা পালন করেন থাকেন। ১ মহররম থেকে শুরু সাড়াদিন থেকে ছোট, বড় দলে দলে চলে মার্সিয়া মাতম, মজলিশ ও জারি। প্রতি বছর দেশের ২য় বৃহৎ এবং সিলেট বিভাগের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কুলাউড়ার পৃথিমপাশার নবাব বাড়িতে। এবছরও একই অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ১০ মহররম। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেও শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আশুরা উপলক্ষে এখানে ছুটে এসেছেন। হায় হুসেন, হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে উঠে বৃহত্তর সিলেটের নবাব আলী আমজদ এর পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত পৃথিমপাশাস্থ নিজ বাড়ির সামনে স্থাপিত ইমাম বাড়া।
গত রোববার (১০ মহররম) তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় শোক পালনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ছোট বড় প্রায় ৫০টি তাজিয়া নিয়ে মিছিল সহকারে যাওয়া হয় স্থানীয় কারবালা প্রান্তরে (কবরস্থানে)। পৃথিমপাশার শিয়া সম্প্রদায় সূত্রে জানা গেছে ১ থেকে ৯ মহরম সন্ধ্যা হতেই দলে দলে বিভক্ত হয়ে জারি, নোওয়া, মজলিশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ১ম মহররম মজলিশ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমেই শেষ হয় বরণ উদ্যাপন। ২ মহরম থেকে শুরু করে ৯ মহরম পর্যন্ত সকাল, দুপুর ও গভীর রাত পর্যন্ত চলে মজলিশ, মার্সিয়া মাতম, জারি, নোওয়া। সাথে চলে রোজা, নফল নামাজ ও ইবাদত বন্দেগী। ইমামবাড়ার মোতাওয়াল্লি সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন জানান- ১০ মহরম নবাববাড়ির ইমাম বাড়া প্রাঙ্গণসহ গোটা পৃথিমপাশা এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অনেকেই এখানে দেখতে আসেন। তিনি আরো জানান- এ বছর অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়েছে। এদিকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই চাকু ও চুরি দিয়ে শরীরে রক্ত ঝরিয়ে হায় হুসেন, হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমের মাধ্যমে কারবালার সেই শোক স্মৃতি স্মরণের দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন পৃথিমপাশার কারবালা প্রান্তরে। মিছিলের সামনে সজ্জিত তাজিয়া। কুলাউড়ার পৃথিমপাশার নবাববাড়ির ইমামবাড়া থেকে বের হয় মূল তাজিয়া মিছিল। এছাড়াও উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের পাল্লাকান্দি ও মীরপুর থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়। রোববার বিকাল হতেই হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে শুরু হয় তাজিয়া মিছিল। মিছিলে দেখা যায়, কারবালার ঘটনার শোকাবহ দৃশ্যায়ন। মিছিলে বুক চাপড়ে, মাতম করে শোক প্রকাশ করেন শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। স্থানীয়রা জানান, মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্ভুজ বহন করা হয় বিবি ফাতেমার স্মরণে। এছাড়াও মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন নিশান নিয়ে আসেন। যে যার মতো এই নিশান বহন করেন। মিছিলের মধ্যে হায় হোসেন, হায় হোসেন করে শোকের গান গাওয়া হয় সমবেত কন্ঠে। এছাড়াও অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকেন। পৃশিমপাশার শিয়া অনুসারীরা জানান, আশুরার দিনে তাজিয়া বের করা হয় শোকের আবহে। মূলত ইমাম হোসেন (রা.) এর সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে এই মিছিল হয়। তাজিয়া মিছিলের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন জানান- কারবার শোককে ধারণ করে এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাতম করে শোক প্রকাশ করি সবাই।