ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনে বড়লেখার সোয়েব আহমেদের সমর্থনে মতবিনিময় সভা ইতালির ভেনিসে গ্রিন সিলেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ইতালির ভেনিসে এনটিভির ইউরোপের ডিরেক্টর সাবরিনা হোসাইন কে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা

১২ দিনেও খোঁজ পাওয়া গেলো না এসআই আকবরের

দেশদিগন্ত সিলেট ডেক্স:
  • আপডেটের সময় : ০২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ৩৬১ টাইম ভিউ

গত ১১ অক্টোবর সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যান রায়হান আহমদ (৩৪)। সেসময় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া। আকবরের নেতৃত্বেই রায়হানের উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ১২ অক্টোবর আকবরসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিস্কার ও ৪ জনকে প্রত্যাহার করা হয়।

বহিস্কার দিন থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন আকবর হোসেন। সিলেট মহানগর পুলিশের দাবি, আকবর পালিয়ে গেছেন। নিখোঁজ হওয়ার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তার। আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললেও এখন পর্যন্ত তার সন্ধানই বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে রায়হানের পরিবারও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ছে।

১২দিনেও আকবরের সন্ধান না পাওয়ায় তিনি দেশে আছেন তা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন এনিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। আকবর ইতোমধ্যে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।

যদিও গত ২০ অক্টোবর রায়হানের বাড়িতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমার ধারণা আকবর এখনও দেশে ছেড়ে পালিয়ে যায় নি। তবে দেশ ছেড়ে চলেও গেলেও তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

রায়হান হত্যার ঘটনায় ১১ অক্টোবর রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই)।

গত ২০ অক্টোবর এই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রায়হানকে নির্যাতনের সময় টিটু বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত একমাত্র টিটুকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার এসএম খালেদুজ্জামান বলেন, আমরা আকবরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাইনি। তিনি বলেন, এই মামলাটির সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে কোনো তাড়াহুড়া করতে চাচ্ছি না। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তাকে গ্রেপ্তার করছি।

এদিকে আকবর গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
আকবরসহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) পিবিআই’র সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথেও দেখা করছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, তিনি বলেন, আজ যদি পুলিশ না হয়ে কোনো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ থাকত, তাহলে কি গাফিলতি করতে পারত পুলিশ? গণদাবির মুখে আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতেই তো পুলিশকে আমরা দেখি। এখন পুলিশের কাছ থেকে পুলিশের অপরাধের বিচার পাব না।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।

ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।#

পোস্ট শেয়ার করুন

১২ দিনেও খোঁজ পাওয়া গেলো না এসআই আকবরের

আপডেটের সময় : ০২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

গত ১১ অক্টোবর সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যান রায়হান আহমদ (৩৪)। সেসময় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া। আকবরের নেতৃত্বেই রায়হানের উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ১২ অক্টোবর আকবরসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিস্কার ও ৪ জনকে প্রত্যাহার করা হয়।

বহিস্কার দিন থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন আকবর হোসেন। সিলেট মহানগর পুলিশের দাবি, আকবর পালিয়ে গেছেন। নিখোঁজ হওয়ার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তার। আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললেও এখন পর্যন্ত তার সন্ধানই বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে রায়হানের পরিবারও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ছে।

১২দিনেও আকবরের সন্ধান না পাওয়ায় তিনি দেশে আছেন তা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন এনিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। আকবর ইতোমধ্যে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।

যদিও গত ২০ অক্টোবর রায়হানের বাড়িতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমার ধারণা আকবর এখনও দেশে ছেড়ে পালিয়ে যায় নি। তবে দেশ ছেড়ে চলেও গেলেও তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

রায়হান হত্যার ঘটনায় ১১ অক্টোবর রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই)।

গত ২০ অক্টোবর এই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রায়হানকে নির্যাতনের সময় টিটু বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত একমাত্র টিটুকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার এসএম খালেদুজ্জামান বলেন, আমরা আকবরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাইনি। তিনি বলেন, এই মামলাটির সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে কোনো তাড়াহুড়া করতে চাচ্ছি না। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তাকে গ্রেপ্তার করছি।

এদিকে আকবর গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
আকবরসহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) পিবিআই’র সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথেও দেখা করছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, তিনি বলেন, আজ যদি পুলিশ না হয়ে কোনো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ থাকত, তাহলে কি গাফিলতি করতে পারত পুলিশ? গণদাবির মুখে আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতেই তো পুলিশকে আমরা দেখি। এখন পুলিশের কাছ থেকে পুলিশের অপরাধের বিচার পাব না।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।

ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।#