ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না, তার জন্য প্রার্থনা করি ক্রাইস্টচার্চে নিহত হোসনে আরার স্বামী

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ০১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৯
  • / ৮৯৭ টাইম ভিউ

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার পরপরই স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন হোসনে আরা আহমেদ (৪৪)। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের কক্ষে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে অন্য নারী ও শিশুদের বেরিয়ে যেতে পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ছোটেন স্বামীর খোঁজে। স্বামী ফরিদ আহমেদ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন বলে হোসনে আরার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল বেশি। তবে হামলা থেকে স্বামী বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি হোসনে আরা। হামলাকারীর গুলিতে নিহত হন তিনি। স্ত্রীর সেই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাঁর (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেন।’

বিবিসি ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদ আহমেদ এই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে হামলার এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। মুসলিম নেতারা এসব হামলার কারণে কাউকে ভয় পেতে বা ঘৃণা করতে দেবেন না।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জন নিহত হন। এর মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি।

বিবিসিকে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমি তাঁকে (হামলাকারী) ভালোবাসি। কিন্তু আমি দুঃখিত, তিনি যা করেছেন, তা আমি সমর্থন করতে পারছি না। আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি। এ কারণে তিনি ভুল কাজ করেছেন।’

ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তারা চায় লোকজন ভয় পাক। তারা এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। হয়তো তারা ভাবে, যদি তারা মুসলমানদের আঘাত করে, তাহলে মুসলমানেরা নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু আমরা মুসলিম নেতারা বলছি, এমনটা হবে না। এই সব হামলার কারণে আমরা কাউকে ভীত হতে বা অন্যদের ঘৃণা করতে দেব না।’

হামলাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তাঁর জন্য প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেন, একদিন তিনি ত্রাণকর্তা হবেন।’

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চে আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর প্রথমে সন্ত্রাসী হামলা হয়। কিছু পরে লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় হামলা হয়। আল নুর মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করেন হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ওই মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য যাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তাঁরা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। আল নুর মসজিদে আনুমানিক ৩০০ এবং লিনউড মসজিদে শ খানেক মুসল্লি নামাজ আদায় করছিলেন বলে জানা গেছে।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল নুর মসজিদে হামলার সময় হোসনে আরা অন্য নারীদের পথ দেখাচ্ছিলেন। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আপনাদের সন্তানদের হাত ধরুন, এই পথে বেরিয়ে আসুন।’

পোস্ট শেয়ার করুন

হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না, তার জন্য প্রার্থনা করি ক্রাইস্টচার্চে নিহত হোসনে আরার স্বামী

আপডেটের সময় : ০১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার পরপরই স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন হোসনে আরা আহমেদ (৪৪)। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের কক্ষে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে অন্য নারী ও শিশুদের বেরিয়ে যেতে পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ছোটেন স্বামীর খোঁজে। স্বামী ফরিদ আহমেদ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন বলে হোসনে আরার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল বেশি। তবে হামলা থেকে স্বামী বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি হোসনে আরা। হামলাকারীর গুলিতে নিহত হন তিনি। স্ত্রীর সেই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাঁর (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেন।’

বিবিসি ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদ আহমেদ এই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে হামলার এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। মুসলিম নেতারা এসব হামলার কারণে কাউকে ভয় পেতে বা ঘৃণা করতে দেবেন না।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জন নিহত হন। এর মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি।

বিবিসিকে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমি তাঁকে (হামলাকারী) ভালোবাসি। কিন্তু আমি দুঃখিত, তিনি যা করেছেন, তা আমি সমর্থন করতে পারছি না। আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি। এ কারণে তিনি ভুল কাজ করেছেন।’

ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তারা চায় লোকজন ভয় পাক। তারা এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। হয়তো তারা ভাবে, যদি তারা মুসলমানদের আঘাত করে, তাহলে মুসলমানেরা নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু আমরা মুসলিম নেতারা বলছি, এমনটা হবে না। এই সব হামলার কারণে আমরা কাউকে ভীত হতে বা অন্যদের ঘৃণা করতে দেব না।’

হামলাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তাঁর জন্য প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেন, একদিন তিনি ত্রাণকর্তা হবেন।’

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চে আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর প্রথমে সন্ত্রাসী হামলা হয়। কিছু পরে লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় হামলা হয়। আল নুর মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করেন হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ওই মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য যাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তাঁরা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। আল নুর মসজিদে আনুমানিক ৩০০ এবং লিনউড মসজিদে শ খানেক মুসল্লি নামাজ আদায় করছিলেন বলে জানা গেছে।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল নুর মসজিদে হামলার সময় হোসনে আরা অন্য নারীদের পথ দেখাচ্ছিলেন। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আপনাদের সন্তানদের হাত ধরুন, এই পথে বেরিয়ে আসুন।’