সাফল্য, আভিজাত্য এবং ঐতিহ্যে কুলাউড়ার সেরা প্রাচিনতম সংগঠন জাতীয় তরুণ সংঘ
- আপডেটের সময় : ১২:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০
- / ১৩৪৪ টাইম ভিউ
ফুটবল এমন একটা খেলা যা একটা জাতি, গোষ্ঠী কিংবা দেশকে একই বিন্দুতে নিয়ে আসার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। আর জনপ্রিয়তার বিচারে ফুটবলের আশেপাশেও অন্য কোন খেলা এখন পর্যন্ত আসতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও আসার সম্ভবনা নেই বলতেই চলে। বিশ্বব্যাপী একছত্র অধিপত্য বিস্তারকারী এই খেলাটিকে বিভিন্ন সময়ে আরো বেশী জনপ্রিয় করে তোলেছে স্বনামধন্য কিছু ক্লাব কিংবা সংগঠন। আর আমাদের প্রাণের শহর কুলাউড়ায় ফুটবলকে আরো বেশী উপভোগ্য এবং প্রাণবন্ত করে তোলার পাশাপাশি ফুটবলারদের আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠত করেছিল যে সংগঠন তার নাম জাতীয় তরুণ সংঘ।
কুলাউড়ার মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মাঠ হলো নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ আর এই মাঠেই কিছু সমমনা তরুণদের ঐতিহাসিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো জাতীয় তরুণ সংঘ কুলাউড়া শাখার। ১৯৭৮ সালের ৮ই মার্চ পড়ন্ত বিকেলে হাবিবুর রহমান টুটুর আহবানে কুলাউড়ার কিছু তরুণ জড়ো হোন এনসি স্কুল মাঠে। সর্ব সম্মতিতে গঠন করা হয় জাতীয় তরুণ সংঘের কমিটি। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মনোনীত হোন মাহবুবুল আলম মাক্কু আর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান টুটু। শুরু হয় জাতীয় ভিত্তিক সমাজ সেবা এবং খেলাধুলার সংগঠন জাতীয় তরুণ সংঘ কুলাউড়া শাখার পথ চলা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় তরুণ সংঘ কুলাউড়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাঙ্গন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের একছত্র অধিপত্য বিস্তার করে। বিশেষ করে এনসি স্কুল মাঠে বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় তরুণ সংঘের টীম মানে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে দল গঠন যা টুর্নামেন্টের আকর্ষণ অনেকটা বাড়িয়ে দিতো। একটা ভালো টিম করার জন্য জাতীয় তরুণ সংঘ যে পরিমাণ বাজেট করতো তা অন্য কোন সংগঠনের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। স্থানীয়দের মধ্যে যেসব তারকা খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে তরুণ সংঘের হয়ে এনসি স্কুল মাঠে আলো ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নিজামুল ইসলাম নিজাম, আবুল খায়ের ফয়সাল,আব্দুল হাই মন্টু, কেফায়েত খাঁন, ফরহাদ, নাসির , লিটন, তারহাম, কুতুব, বজলু, বাছিদ , তারেক, কাবুল পাল,তমাল, চুড়ামনি, ফয়জুর রহমান সুরুক এবং মো: আব্দুস সালাম। অন্যতম সাফল্য ১৯৮৮ সালে সোহরাওয়ার্দী গোল্ড কাপ এবং ১৯৯২ সালে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির প্রথম টূর্ণামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
ফুটবল ছাড়াও ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, ক্রিকেট, এ্যাথলেটিক্সেও তরুণ সংঘের অাধিপত্য চোখে পড়ার মতো। খেলাধুলা সহ অন্য সেক্টরেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি তরুণ সংঘের সাফল্যের কিছু হাইলাইটস :
১. বিভাগীয় পর্যায়ে অ ১৯ ব্যাডমিন্টন একক রানার্সআপ ১৯৮২ সাল।
২. জাতীয় পর্যায়ে একক অভিনয়ে রানার্সআপ ১৯৮৮।
৩. বিভাগীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক গানে রানার্সআপ ১৯৮৩।
৪. জেলা পর্যায়ে সাইক্লিং (মহিলা) চ্যাম্পিয়ন ১৯৮৪।
৫. ১৯৯০ সালে সংগঠনের যুগ পূর্তির বছরে কুলাউড়ায় প্রথম বারের মতো সন্ধানীর সহযোগিতায় রক্তদান কর্মসূচি।
৬. কুলাউড়ায় প্রথম বারের মতো দর্শনীয় গীতি নাট্য “পালকী চলে” মঞ্চায়ন।
৭. কুলাউড়ায় প্রথম বারের মতো শিশু কিশোর সমাবেশ আয়োজন ২৫,২৬,২৭ মার্চ ১৯৭৮ সাল, স্থান : এনসি স্কুল। ইত্যাদি
সত্যি কথা বলতে জাতীয় তরুণ সংঘের নিয়মিত কার্যক্রমের কথা আমি এখানে বলে শেষ করতে পারবো না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠনটি কুলাউড়ার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভুমিকা পালন করে আসছে। তরুণ সংঘকে বাদ দিয়ে কুলাউড়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়াঙ্গন বিশেষ করে ফুটবলের ইতিহাস লেখা অসম্ভব। ফুটবল এবং ফুটবলারদের প্রতি যে তরুণ সংঘের হৃদতা সবচেয়ে বেশী তার প্রমান বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ফুটবলারদের দেখেই বুঝা যায়।
সংগঠনের বর্তমান সভাপতি কুলাউড়ার ইতিহাসের সেরা গোলকিপার আবুল খায়ের ফয়সাল এবং সাধারণ সম্পাদক কুলাউড়ার আরেকজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব জ্যোতি বিকাশ। এছাড়াও একসময়ের মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় কুলাউড়ার ফুটবলের বরপুত্র নিজামুল ইসলাম নিজাম, কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনের সুপার আইডল ইমাদুল মান্নান চৌধুরী তারহাম এবং আরেক জন খ্যাতিমান ফুটবলার ডাকবাংলোর Liton Ahmed বিভিন্ন সময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও আরেকজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব যাকে অনেকে জাতীয় তরুণ সংঘের প্রাণ মনে করে থাকেন সেই মুহিবুর রহমান বুলবুল এই সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭৮ থেকে ২০২০, জাতীয় তরুণ সংঘের দীর্ঘ ৪২ বছরের যাত্রা পথ একদম সহজ ছিলো না। আবার সবসময় যে সংগঠনের কার্যক্রম সমান তালে চলেছে এমনও নয়। তবে সংগঠনটি কখনে থমকে যায়নি। শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় তরুণ সংঘ নিঃসন্দেহে এখনো কুলাউড়ার সেরা সংগঠন। আমরা আশা করবো বর্তমান নেতৃত্বের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষকরে ফুটবল মাঠে অতীতের মতে দাপটের সাথে রাজত্ব করবে এবং কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে।