আপডেট

x


সাপের ছোঁবলে নয়, হত্যা করা হয়েছে সাইফুরকে’তদন্ত করে দেখবে পুলিশ

মঙ্গলবার, ০৪ আগস্ট ২০২০ | ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | 365 বার

সাপের ছোঁবলে নয়, হত্যা করা হয়েছে সাইফুরকে’তদন্ত করে দেখবে পুলিশ

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় কলেজ শিক্ষার্থী মো. সাইফুর রহমানের (২৭) মৃত্যু সাপের ছোঁবলে হয়নি বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। সাইফুরের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, সাইফুরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতে সাপে কাটার নাটক সাজিয়ে তা প্রচার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে গত রবিবার (২ আগস্ট) বিকেলে সাইফুরের লাশ দাফন করা হয়েছে।

গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাতে ঘরের মেঝে থেকে সাইফুরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় তাঁর কোমরের পাশে সাপে কাটার মতো দাগ দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা ছিল, রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের ছোঁবলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সাইফুর রহমান উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে। তিনি সিলেট পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।



নিহত সাইফুর রহমানের চাচা সৎপুর গ্রামের বলাই মিয়া আজ সোমবার (৩ আগস্ট) বিকেলে বলেন, ‘আমার ভাতিজা সাইফুর পরিবারের সাথে সিলেটে থাকে। সে সেখানে একটি কলেজে লেখাপড়া করে। দীর্ঘদিন পর ঈদ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে সে বাড়িতে বেড়াতে এসে প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসে। রাতে তাকে আমাদের বাড়িতে থাকার জন্য বলি। সে থাকেনি, বলেছে তাঁর মামার বাড়ি যাবে। রাতে সে তাঁর মামার বাড়ি মুদৎপুর গ্রামে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। এসময় সে জানায় যে কয়েকদিন থেকে একটি ফোন নম্বর থেকে তাকে বিরক্ত করা হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আমরা জানতে পারি যে, সে নাকি তাঁর বাড়িতে সাপের কামড়ে মারা গেছে। পরে আমরা সেখানে যাই। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পরে পুলিশের নির্দেশে আমরা তাকে বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান যে তাকে সাপে কাটেনি। হত্যা করা হয়েছে। পরে আমরা তাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরাও বলেছেন যে তাকে সাপে কাটেনি, হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরের কয়েক জায়গায় তারা আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই-ভাবি (সাইফুরের বাবা-মা) কেউই বাড়িতে থাকেন না। আর সাইফুরের কাছে এই (যে বাড়িতে তার লাশ পাওয়া গেছে) বাড়ির চাবিও থাকার কথা নয়। আমার ভাই তাঁর এক প্রতিবেশীর কাছে বাড়ির চাবিটি দিয়েছিলেন। যিনি বাড়িটি দেখাশোনা করেন।’ তাহলে সাইফুর এই ঘরে ঢুকলো কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই কেউ পূর্ব পরিকলল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যার পর তার লাশ ঘরের মেঝেতে রেখেছে। এখন ঘটনা আড়াল করতেই সাপে কাটার নাটক সাজানো হয়েছে। আমরা থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ বলেছে তারা ঘটনাটি তদন্ত করে মামলা গ্রহণ করবে।’ ‘আমরা চাই, পুলিশ এই ঘটনা তদন্ত করে এর সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টামূলক বিচার করা করুক।’ –বলেন তিনি।

নিহত সাইফুর রহমানের মামা মুদৎপুর গ্রামের সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে সে আমাদের বাড়িতে আসে। রাত এগোরাটা পর্যন্ত ছিল। রাতে তাকে আমাদের বাড়িতে থাকার জন্য বলা হলেও সে থাকেনি। এসময় তাঁর ফোনে বার বার কল আসছিল। তখন সে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়। এখন কে তাকে কল দিয়েছে। কেন দিয়েছে। সেটা যদি পুলিশ তদন্ত করে তবে তা বেরিয়ে আসবে। তখন বোঝা যাবে আসলে কে আর কেন হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সাইফুরের বাড়ির কাছে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সাথে তাঁর পূর্ববিরোধ ছিল বলে জানতে পেরেছি। হয়তো তারা তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে লাশ ঘরে রেখেছে। পরে সাপে কেটে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করছে।’

সাইফুর রহমানের ছোট ভাই এমদাদুর রহমান বলেন, ‘সাপের ছোঁবলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। যে বা যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক সোমবার বিকেলে বলেন, ‘আমরা সাইফুরের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। এরপরও ঘটনাটি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য করতে পারেন...

comments

deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত

design and development by : http://webnewsdesign.com