ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা রিডানডেন্ট ক্লোথিং আর মজুর মামার ‘বিশ্বকাপ’ ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের নামাজ পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্তুগাল বাংলা প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন

সময়েরে সাথে সাথে আড্ডা পরিবর্তনশীল

দেশদিগন্ত :
  • আপডেটের সময় : ০১:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭
  • / ২০৬৯ টাইম ভিউ

কালের পরিক্রমায় আড্ডার রূপ নাকি খুব দ্রুত পাল্টে যায়। আজও কখনো ছুটন্ত গতিতে নয়তো ধীর গতিতে আড্ডার চরিত্র ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। তবে এর আবেদন কিংবা আকর্ষণ কমেনি। এত সহজে কমে যাওয়ার কথা নয়। কেননা আড্ডার প্রতি আকর্ষণ চিরকাল ছিল সব শ্রেণির সহজাত এক কাম্য বিষয়।
আড্ডার স্থান কাল দুটোই বড্ড বেশি পরিবর্তনশীল। কালের পরিবর্তনের শুরুর উদাহরণ আমরা টানতে পারি বাদশাহি আমল থেকে শ্রেণি সামন্তের পরিচায়ক জমিদার আমল পর্যন্ত। নির্দিষ্ট কতক মোসাহেবদের নিয়ে জি হুজুর বলার প্রতিযোগিতামূলক আড্ডা। তা কখনো মূল দরবার শরিফে বসাতে কোনো কোনো রাজার পছন্দের বিষয় ছিল। সেটাই ক্রমে হাওয়া খানা হয়ে বাগান বাড়ি পর্যন্ত শেষ সীমা টেনেছে। তবে অন্দর মহলের বেশির ভাগ আড্ডা ছিল সম্পূর্ণ পুরুষ বিবর্জিত। সেই আড্ডার চরিত্রের মাঝে অনেক বৈচিত্র্য বিদ্যমান ছিল বৈকি।
পরে আরও কিছু কাল চলল ক্ষয় হতে যাওয়া এক শ্রেণির সামন্ত প্রভুদের, উচ্চ শ্রেণির নামে সাধারণ কাউকে অলংকৃত করে নিজেদের আড্ডা স্থলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বুদ্ধিমত্তার চর্চা পূরণের আড্ডা। এ সব আড্ডার জায়গা নির্ধারণে এল ভিন্নতা। বেশির ভাগ সময়ে আড্ডার সর্ব প্রস্তাবিত স্থান হতো বাড়ির ভেতরে দিঘির ঘাট সংলগ্ন চত্বরে। বহুলাংশে সেই আড্ডার মধ্যমণি হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্তদের মাঝে কবি সাহিত্যিকদের প্রাধান্য দেখা যেত। তবে মোসাহেবশূন্য কখনোই ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে সেকালের আড্ডায় রাজা বা বাদশাদের খেয়ালীপনাকে আড্ডার মূল আকর্ষণ হিসাবে ধরা হতো বলে বোধকরি সে আড্ডা কোনো অবস্থায় সর্বজনীন হয়ে থাকেনি। এসবের বাইরেও সর্বজনীন আড্ডার স্থান চিত্র দুই ছিল ভিন্ন। এ ধরনের আড্ডার স্থান পাড়ার পূজামণ্ডপ থেকে মোড়ের কফি হাউস পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। কখনো নিয়মিত পাঞ্জেগানা মসজিদ সংলগ্ন পুকুর ঘাটে ও অবিরাম চলতে দেখা যেত।
আজও অবধি আড্ডার কালের রূপ ও রকমে ক্রমান্বয়ে ঘটে চলছে অন্তহীন পরিবর্তন। আড্ডার আবার স্থানিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। সমাজ সাহিত্য ও পরিবেশ যেমন স্থানিক প্রভাব মুক্ত নয়। তেমনি সমাজের নানা শ্রেণির আড্ডাতে ও স্থানিক প্রভাব একেবারে ঝলঝলে রোদের মতোই পরিষ্কার। দেশীয় আড্ডার যেমন এক ধরনের মেজাজ।  20727955_1648833601816351_7257235799371578730_n

তেমনি  আড্ডার মেজাজ বা চারিত্রিক চিত্র অনেক ক্ষেত্রে অন্য কোনো ভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে। কোনো কোনো সময় সেই চারিত্রিক চরিত্রকে শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে রাখা সম্ভব নয়। তা বদলাতে পারে। আর তা বদলাবেই। প্রবাসের পুরো সমাজটি থাকে ভিন্ন ভিন্ন এলাকাবাসী সহ নানা ধরনের অভিবাসীদের একটি জোটবদ্ধ অবস্থানে থাকবার অভিপ্রায় নিয়ে সৃষ্ট, এক সুনির্দিষ্ট ফর্মুলার অধীনে।
মানুষের মনের খোরাক মানুষই জোগান দেয়। তা কখনো শিল্প রূপে কখনে বা আমোদ আপ্যায়নের রকমে। যার তাগিদে মানবকুলের বসবাস হয় মানব সৃষ্ট মানব জগতে। আর সেই মানব সৃষ্ট জগতের একটি অংশে আমাদের বসবাস। যাকে প্রতিনিয়ত নিজেদের মাঝে আমরা আপন প্রয়োজনে ধারণ করে আছি।
আর সেই স্থানটি হলো এই নগরী। যেখানে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের নিত্য আনাগোনাতে পুরো শহর মুখরিত। যারাই বেশ কিছুকাল থেকে এই শহরে আছেন তাদের অনেকের চোখে ধরা পড়ছে আড্ডার ক্রম রূপ পাল্টানোর সবাক চিত্র।
আজকাল আড্ডার রূপ চিত্রে অনেক আধুনিক চিন্তা চেতনার প্রকাশ স্পষ্ট। নিকট অতীতে সুনির্দিষ্ট পেশাজীবীর আড্ডার চাইতে সম্মিলিত আড্ডা বেশি চোখে পড়ত। একেবারে স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে সকল পেশাজীবী সহ নানা মত ও পথের লোকজন একই টেবিলে বসে রাজা উজির মেরে দিত।
এখন সেখানে ভিন্নতা স্পষ্ট। প্রত্যেকেই যেন এক একটি ধ্যান ধারণার প্রবর্তক হয়ে এই ক্ষুদ্র পরিসরে সর্বদা বিরাজমান। রাজনৈতিক আড্ডাতে যেমন ব্যক্তি
প্রাধান্যটা হয়ে যায় মুখ্য। তেমনি সাহিত্য কিংবা শিল্পে ও ব্যক্তি কখনো গোষ্ঠী প্রাধান্য প্রবণতা মূল বিষয়ে রূপ নেয়। আঞ্চলিক সমাজ সেবার ক্ষেত্রে আরও বেশি আধুনিকতার (?) চর্চা চলছে। বই পুস্তকে গণতন্ত্র কে বন্দী করে অধিক সময়কাল ধরে পদ কিংবা চেয়ার আঁকড়ে ধরে অন্যদের নসিহত দান করবার কাজটি আজকাল অনেকে করে থাকেন। আরও আধুনিকতা হলো পদ না পেলে, আরও বেশি সমাজ সেবার উদ্দেশ্য গোটা পাঁচেক সদস্যের উদ্যোগে আরও এক সংগঠনের জন্ম দেওয়া।
সেখানেও আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। সৃষ্টিকে যতই ভাঙবে ততই আসবে আরও বেশি বেশি নব উদ্দামের জোয়ার। সবই দুই, তিন কিংবা পাঁচ সংখ্যার ভেতর সীমাবদ্ধ।
আধুনিক সমাজের অপরিহার্য অংশ হলো প্রচারমাধ্যম। যার অবয়ব কখনো পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে সাদা কালো অক্ষরে। কখনো বা চলমান টিভির পর্দাতে। এই দুটো শক্তিশালী মাধ্যমে বিজ্ঞ আর জ্ঞানীদের অবাধ বিচরণে আজ জনপদ মুখরিত।
তথাকথিত মুখরিত জনপদেও ব্যাপক বদলের চর্চা চলছে বিরামহীন। পেশাতে সমতা থাকলে ও এক সঙ্গে চলতে হবে কিংবা একটি প্লাটফরমের ছায়াতলে বসবাস করে নিজেদের চল্লিশ শতকের প্রমাণ করবার চাইতে ধরন পাল্টে দিতে বেশি অঙ্গীকার বদ্ধ। একত্রে থাকবার চাইতে আধুনিক হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাটাই শ্রেয়। সাহিত্য এসেছে অনেক অনেক নতুন নতুন ধ্যান ধারণা সহ বেশি বেশি উৎকর্ষের আধুনিক রূপ। আপন সৃষ্টিকে তড়িৎ একটি আধুনিক প্রকাশ মার্কেটিং এর আওতায় নিয়ে আসা বেশি জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবের আদলে সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ডান বাম বলয়ের রসায়ন পাঠ আরও বেশি জরুরি। তা যেন জ্ঞান গর্ভ কোনো আনকোরা পুস্তক পাঠের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। আড্ডার আসল দর্শন নির্মল হাসি আনন্দ না খুঁজে বিশেষণ প্রয়োগ ও আপন প্রদর্শন থিওরির বেশি অনুশীলন জরুরি বলে আজকাল গণ্য হয়ে থাকে।
উপরন্তু রয়েছে শাবাশ নামের রাগ সংগীতের প্রতি বিশেষ খেয়াল। জরুরি নয় যে জ্ঞানীদের সাহচর্যে ওঠবস করে জ্ঞান নেওয়া। বরং কৌশলে নিজের জ্ঞানের ঘনত্ব প্রয়োজনে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে হলে ও প্রমাণ করা আমরা সাহিত্য ও শিল্প সেবিকা সত্যি আধুনিক।
তাই সর্বক্ষেত্রে পুরোনো ধ্যান ধারণার আদলে যে ধরনের রাজনৈতিক বা সাহিত্য শিল্পের আদিম ও অকৃত্রিম রূপে চর্চা হয়েছে। তা আজকাল পুরো বদলে গিয়ে নতুন আঙ্গিকে সর্বত্র শক্তিমান হয়ে বিরাজমান। হ্যা। আমরা ক্রমশ আরও বেশি বেশি করে নিজেদের আধুনিক করে একুশ শতকের জন্য তৈরি করতে সদা সচেষ্ট। তবে তা নিজ নিজ মতবাদ আর ধ্যান ধারণার অশুভ ও জবরদস্তিমূলক প্রয়োগের একক সিদ্ধান্তে।–

পোস্ট শেয়ার করুন

সময়েরে সাথে সাথে আড্ডা পরিবর্তনশীল

আপডেটের সময় : ০১:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭

কালের পরিক্রমায় আড্ডার রূপ নাকি খুব দ্রুত পাল্টে যায়। আজও কখনো ছুটন্ত গতিতে নয়তো ধীর গতিতে আড্ডার চরিত্র ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। তবে এর আবেদন কিংবা আকর্ষণ কমেনি। এত সহজে কমে যাওয়ার কথা নয়। কেননা আড্ডার প্রতি আকর্ষণ চিরকাল ছিল সব শ্রেণির সহজাত এক কাম্য বিষয়।
আড্ডার স্থান কাল দুটোই বড্ড বেশি পরিবর্তনশীল। কালের পরিবর্তনের শুরুর উদাহরণ আমরা টানতে পারি বাদশাহি আমল থেকে শ্রেণি সামন্তের পরিচায়ক জমিদার আমল পর্যন্ত। নির্দিষ্ট কতক মোসাহেবদের নিয়ে জি হুজুর বলার প্রতিযোগিতামূলক আড্ডা। তা কখনো মূল দরবার শরিফে বসাতে কোনো কোনো রাজার পছন্দের বিষয় ছিল। সেটাই ক্রমে হাওয়া খানা হয়ে বাগান বাড়ি পর্যন্ত শেষ সীমা টেনেছে। তবে অন্দর মহলের বেশির ভাগ আড্ডা ছিল সম্পূর্ণ পুরুষ বিবর্জিত। সেই আড্ডার চরিত্রের মাঝে অনেক বৈচিত্র্য বিদ্যমান ছিল বৈকি।
পরে আরও কিছু কাল চলল ক্ষয় হতে যাওয়া এক শ্রেণির সামন্ত প্রভুদের, উচ্চ শ্রেণির নামে সাধারণ কাউকে অলংকৃত করে নিজেদের আড্ডা স্থলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বুদ্ধিমত্তার চর্চা পূরণের আড্ডা। এ সব আড্ডার জায়গা নির্ধারণে এল ভিন্নতা। বেশির ভাগ সময়ে আড্ডার সর্ব প্রস্তাবিত স্থান হতো বাড়ির ভেতরে দিঘির ঘাট সংলগ্ন চত্বরে। বহুলাংশে সেই আড্ডার মধ্যমণি হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্তদের মাঝে কবি সাহিত্যিকদের প্রাধান্য দেখা যেত। তবে মোসাহেবশূন্য কখনোই ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে সেকালের আড্ডায় রাজা বা বাদশাদের খেয়ালীপনাকে আড্ডার মূল আকর্ষণ হিসাবে ধরা হতো বলে বোধকরি সে আড্ডা কোনো অবস্থায় সর্বজনীন হয়ে থাকেনি। এসবের বাইরেও সর্বজনীন আড্ডার স্থান চিত্র দুই ছিল ভিন্ন। এ ধরনের আড্ডার স্থান পাড়ার পূজামণ্ডপ থেকে মোড়ের কফি হাউস পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। কখনো নিয়মিত পাঞ্জেগানা মসজিদ সংলগ্ন পুকুর ঘাটে ও অবিরাম চলতে দেখা যেত।
আজও অবধি আড্ডার কালের রূপ ও রকমে ক্রমান্বয়ে ঘটে চলছে অন্তহীন পরিবর্তন। আড্ডার আবার স্থানিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। সমাজ সাহিত্য ও পরিবেশ যেমন স্থানিক প্রভাব মুক্ত নয়। তেমনি সমাজের নানা শ্রেণির আড্ডাতে ও স্থানিক প্রভাব একেবারে ঝলঝলে রোদের মতোই পরিষ্কার। দেশীয় আড্ডার যেমন এক ধরনের মেজাজ।  20727955_1648833601816351_7257235799371578730_n

তেমনি  আড্ডার মেজাজ বা চারিত্রিক চিত্র অনেক ক্ষেত্রে অন্য কোনো ভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে। কোনো কোনো সময় সেই চারিত্রিক চরিত্রকে শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে রাখা সম্ভব নয়। তা বদলাতে পারে। আর তা বদলাবেই। প্রবাসের পুরো সমাজটি থাকে ভিন্ন ভিন্ন এলাকাবাসী সহ নানা ধরনের অভিবাসীদের একটি জোটবদ্ধ অবস্থানে থাকবার অভিপ্রায় নিয়ে সৃষ্ট, এক সুনির্দিষ্ট ফর্মুলার অধীনে।
মানুষের মনের খোরাক মানুষই জোগান দেয়। তা কখনো শিল্প রূপে কখনে বা আমোদ আপ্যায়নের রকমে। যার তাগিদে মানবকুলের বসবাস হয় মানব সৃষ্ট মানব জগতে। আর সেই মানব সৃষ্ট জগতের একটি অংশে আমাদের বসবাস। যাকে প্রতিনিয়ত নিজেদের মাঝে আমরা আপন প্রয়োজনে ধারণ করে আছি।
আর সেই স্থানটি হলো এই নগরী। যেখানে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের নিত্য আনাগোনাতে পুরো শহর মুখরিত। যারাই বেশ কিছুকাল থেকে এই শহরে আছেন তাদের অনেকের চোখে ধরা পড়ছে আড্ডার ক্রম রূপ পাল্টানোর সবাক চিত্র।
আজকাল আড্ডার রূপ চিত্রে অনেক আধুনিক চিন্তা চেতনার প্রকাশ স্পষ্ট। নিকট অতীতে সুনির্দিষ্ট পেশাজীবীর আড্ডার চাইতে সম্মিলিত আড্ডা বেশি চোখে পড়ত। একেবারে স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে সকল পেশাজীবী সহ নানা মত ও পথের লোকজন একই টেবিলে বসে রাজা উজির মেরে দিত।
এখন সেখানে ভিন্নতা স্পষ্ট। প্রত্যেকেই যেন এক একটি ধ্যান ধারণার প্রবর্তক হয়ে এই ক্ষুদ্র পরিসরে সর্বদা বিরাজমান। রাজনৈতিক আড্ডাতে যেমন ব্যক্তি
প্রাধান্যটা হয়ে যায় মুখ্য। তেমনি সাহিত্য কিংবা শিল্পে ও ব্যক্তি কখনো গোষ্ঠী প্রাধান্য প্রবণতা মূল বিষয়ে রূপ নেয়। আঞ্চলিক সমাজ সেবার ক্ষেত্রে আরও বেশি আধুনিকতার (?) চর্চা চলছে। বই পুস্তকে গণতন্ত্র কে বন্দী করে অধিক সময়কাল ধরে পদ কিংবা চেয়ার আঁকড়ে ধরে অন্যদের নসিহত দান করবার কাজটি আজকাল অনেকে করে থাকেন। আরও আধুনিকতা হলো পদ না পেলে, আরও বেশি সমাজ সেবার উদ্দেশ্য গোটা পাঁচেক সদস্যের উদ্যোগে আরও এক সংগঠনের জন্ম দেওয়া।
সেখানেও আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। সৃষ্টিকে যতই ভাঙবে ততই আসবে আরও বেশি বেশি নব উদ্দামের জোয়ার। সবই দুই, তিন কিংবা পাঁচ সংখ্যার ভেতর সীমাবদ্ধ।
আধুনিক সমাজের অপরিহার্য অংশ হলো প্রচারমাধ্যম। যার অবয়ব কখনো পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে সাদা কালো অক্ষরে। কখনো বা চলমান টিভির পর্দাতে। এই দুটো শক্তিশালী মাধ্যমে বিজ্ঞ আর জ্ঞানীদের অবাধ বিচরণে আজ জনপদ মুখরিত।
তথাকথিত মুখরিত জনপদেও ব্যাপক বদলের চর্চা চলছে বিরামহীন। পেশাতে সমতা থাকলে ও এক সঙ্গে চলতে হবে কিংবা একটি প্লাটফরমের ছায়াতলে বসবাস করে নিজেদের চল্লিশ শতকের প্রমাণ করবার চাইতে ধরন পাল্টে দিতে বেশি অঙ্গীকার বদ্ধ। একত্রে থাকবার চাইতে আধুনিক হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাটাই শ্রেয়। সাহিত্য এসেছে অনেক অনেক নতুন নতুন ধ্যান ধারণা সহ বেশি বেশি উৎকর্ষের আধুনিক রূপ। আপন সৃষ্টিকে তড়িৎ একটি আধুনিক প্রকাশ মার্কেটিং এর আওতায় নিয়ে আসা বেশি জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবের আদলে সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ডান বাম বলয়ের রসায়ন পাঠ আরও বেশি জরুরি। তা যেন জ্ঞান গর্ভ কোনো আনকোরা পুস্তক পাঠের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। আড্ডার আসল দর্শন নির্মল হাসি আনন্দ না খুঁজে বিশেষণ প্রয়োগ ও আপন প্রদর্শন থিওরির বেশি অনুশীলন জরুরি বলে আজকাল গণ্য হয়ে থাকে।
উপরন্তু রয়েছে শাবাশ নামের রাগ সংগীতের প্রতি বিশেষ খেয়াল। জরুরি নয় যে জ্ঞানীদের সাহচর্যে ওঠবস করে জ্ঞান নেওয়া। বরং কৌশলে নিজের জ্ঞানের ঘনত্ব প্রয়োজনে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে হলে ও প্রমাণ করা আমরা সাহিত্য ও শিল্প সেবিকা সত্যি আধুনিক।
তাই সর্বক্ষেত্রে পুরোনো ধ্যান ধারণার আদলে যে ধরনের রাজনৈতিক বা সাহিত্য শিল্পের আদিম ও অকৃত্রিম রূপে চর্চা হয়েছে। তা আজকাল পুরো বদলে গিয়ে নতুন আঙ্গিকে সর্বত্র শক্তিমান হয়ে বিরাজমান। হ্যা। আমরা ক্রমশ আরও বেশি বেশি করে নিজেদের আধুনিক করে একুশ শতকের জন্য তৈরি করতে সদা সচেষ্ট। তবে তা নিজ নিজ মতবাদ আর ধ্যান ধারণার অশুভ ও জবরদস্তিমূলক প্রয়োগের একক সিদ্ধান্তে।–