সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে “অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো আই.এম.এল.ডি মনুমেন্ট ইনক এর মতবিনিময় সভা
- আপডেটের সময় : ১১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
- / ১৩৩৩ টাইম ভিউ
টরন্টো সিটি কাউন্সিল এর সহযোগিতায় টরন্টোতে প্রথম স্থায়ী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সৌধ (ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংণ্ডয়েজ ডে মনুমেন্ট) নির্মাণের জন্য গঠিত সংগঠন “অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো আই.এম.এল.ডি মনুমেন্ট ইনক” এর নেতৃবৃন্দ স্থানীয় বাংলা সংবাদপত্রণ্ডলোর সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। ক্যাফে ডি তাজ রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ভোরের আলো সম্পাদক আহাদ খন্দকার, সিবিএন২৪ সম্পাদক মাহবুবুল হক ওসমানী, বাংলা কাগজ সম্পাদক এম. আর. জাহাঙ্গীর, প্রবাসী কণ্ঠ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সাংবাদিক খুরশিদ শাম্মী, নন্দন টিভির মার্কেটিং ডিরেক্টর ফারহানা খান প্রমুখ। আয়োজক সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এর বোর্ড অফ ডিরেক্টর এর সদস্য ম্যাক আজাদ, রিজওয়ান রহমান, প্রকৌশলী মির্জা শহীদুর রহমান, প্রকৌশলী সৈয়দ আবদুল গফ্ফার, ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, মালিহা মনসুর, কৃষিবীদ ফয়জুল করিম, সবিতা সোমানী, অরুণা হায়দার এবং হাবীবুল্লাহ দুলাল। মতবিনিময় সভার শুরুতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এর কার্যক্রমের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব রিজওয়ান রহমান।
রিজওয়ান বলেন “প্রাক্তন সিটি অফ টরন্টো কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিস এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আর সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ধৈর্যশীল নেতৃত্বে বিগত প্রায় ৪ বছর ধরে নিরলস কাজ করে বর্তমানে এই প্রজেক্টটি একটি চমৎকার জায়গায় পৌঁছেছে। সিটি কাউন্সিলের হাজারো নিয়ম মেনে তৈরী নকশাটি নানান বুরোক্রেসী পেরিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। স্থাপনাটির উচ্চতা, ওজন থেকে শুরু করে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, চারিদিকের গাছণ্ডলো রক্ষা করা, এমন কত শত নিয়ম মেনে কাজ করতে হয় তা কানাডাতে নির্মাণকাজে জ্ঞান আছে এমন যে কেউই বুঝবেন। সিটি অফ টরন্টো তাঁদের কথা অনুযায়ী সয়েল টেস্ট থেকে শুরু করে প্রাক-নির্মাণ পর্যায়ের বেশ কিছু কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী এই কাজণ্ডলোর যে খরচ, তা এই প্রকল্পে সিটি অফ টরন্টোর অনুদান হিসাবে নথিভুক্ত হবে এবং এর পরিমান আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার। আর কানাডিয়ান একটি বিল্ডিং কন্ট্রাক্টর এর হিসাব অনুযায়ী মূল সৌধটির কাঠামো নির্মাণের আনুমানিক খরচ ১৫০,০০০ ডলার। এই ১৫০,০০০ ডলার জোগাড় করার দায়িত্ব এই সংগঠনের। মূল সৌধটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সিটি অফ টরন্টো আবার সৌধটির চারিদিকে বাগান, বসার স্থান ইত্যাদি সহ যাবতীয় ল্যান্ডস্ক্যাপিং এর কাজ শেষ করবেন এবং সৌধটি সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেবেন। নির্মাণকাজ সমাপ্তির পর সৌধটি রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও সিটি অফ টরন্টোর থাকবে।”
সৌধটির নকশা কেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে হুবহু করা হলোনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয় যে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে সাথে যতটা সম্ভব সাদৃশ্য রেখে এই সৌধটি নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বেশকিছু নিয়মকানুন মানতে গিয়ে নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এই পরিবর্তনের পরও বর্তমানের নকশাটি কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে কথাই মনে করিয়ে দেবে। এ প্রসঙ্গে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদমিনার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদমিনার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদমিনার, কুয়েট শহীদমিনার সহ বাংলাদেশের আরো বেশ কিছু শহীদমিনারে উদাহরণ দিয়ে বলা হয় যে এর কোনোটিই কিন্তূ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদমিনারের নকশায় তৈরী হয়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনী এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উন্মোচিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সৌধের নকশা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সবই হয়তো করতে হয়েছে নানান বাধ্যবাধকতার ফলে, অথবা মাতৃভাষার প্রতি আবেগকে বিভিন্নরূপে প্রকাশের উদেশ্য নিয়ে। কিন্তু এতে মাতৃভাষা সৌধ বা শহীদমিনারে আবেগ কিন্তু একবিন্দুও কমেনি।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এই মুহূর্তে তাঁদের মূল কাজ হচ্ছে নির্মাণকার্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। এই ব্যাপারে বক্তব্য দেন সংগঠনের ফান্ডরাইজিঙ টীম এর প্রধান ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত। ব্যারিস্টার দত্ত জানান যে ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় অর্থের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জোগাড় হয়ে গেছে। আর উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো যে এই অর্থের একটা বড় অংশ এসেছে অবাঙালীদের কাছ থেকে। আমরা এখন আমাদের বাংলাদেশী-কানাডিয়ান কমিউনিটির সদস্যদের আন্তরিক আহ্বান জানাবো যে যতটুকু পারেন এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করুন। আমরা অল্প কজন মানুষের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের অনুদান না নিয়ে বরং হাজারো মানুষের ভালোবাসায় ভরা ছোট ছোট অংকের অনুদান বেশি চাই, কারণ শুধুমাত্র তখনি এই সৌধটি প্রকৃতই সাধারণ মানুষের সৌধ হবে।
সৌধটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব কার হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয় যে সিটি অফ টরন্টোর নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে উম্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। তবে আমাদের কমিউনিটির কোনো বিল্ডিং কন্ট্রাক্টর যদি এই সৌধ নির্মাণে নিজের অবদান রাখার উদ্যেশ্যে অল্প খরচে এই কাজ করে দিতে চান, তবে আমরা নিশ্চই সিটি অফ টরন্টোর সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপারটি তুলে ধরবো।
প্রকল্পটির অনুদান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয় যে প্রতিটি অনুদান যথাযথ রিসিট এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে এবং অনুদানের নথি যথাসময়ে সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশিত হবে। সংগঠনের আয়/ব্যায় এর বিস্তারিত হিসাবও প্রকাশিত হবে যাতে কমিউনিটির প্রতিটি সদস্য দেখতে পারেন যে অনুদানের প্রতিটি ডলার এই সৌধ নির্মাণের জন্যই খরচ করা হয়েছে। সংগঠনের মহাসচিব রিজওয়ান জানান যে এই সংগঠনের পরিচালকদের প্রত্যেক পরিচালকেরই এই সংগঠনের বাহিরেও বিভিন্ন সমাজসেবা এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আর তাই স্বচ্ছতার ব্যাপারে আমরা নিজেদের সুনামের স্বার্থেই অনেক বেশি সচেতন।
এই প্রকল্পে কেউ অনুদান দিতে চাইলে কি কি উপায়ে তা করা যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয় যে, এই মুহূর্তে সংগঠনের যে কোনো পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে, অথবা ব্যাংক একাউন্ট এ ইমেইল ট্রান্সফার এর মাধ্যমে অনুদান দেয়া যাবে। এছাড়াও শিগগিরই একটি GOFUNDME পেজ খোলা হচ্ছে আর সংগঠনের ওয়েবসাইটে (www.imldmonument.com) এবং ফেইসবুক পেজ (www.facebook.com/torontoIMLD) এ ও অনুদানের একটি লিংক সংযোজন করা হচ্ছে। সাপ্তাহিক ভোরের আলো, বাংলা কাগজ, সিবিএন২৪ এবং প্রবাসীকণ্ঠ পত্রিকায় এই ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করা হবে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে।
ভোরের আলো সম্পাদক আহাদ খন্দকারের পূর্বেকার একটি প্রস্তাবের সূত্র ধরে সিবিএন সম্পাদক মাহবুব ওসমানী প্রস্তাব করেন যে এখন থেকে উপস্থিত ৪ টি সংবাদপত্রে প্রতি সপ্তাহে মাতৃভাষা সৌধের সর্বশেষ সংবাদ এবং অনুদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশিত হোক। এই প্রস্তাবে উপস্থিত সম্পাদকগণ সানন্দে সম্মতি দেন।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ম্যাক আজাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত চার বছর ধরে চরম ধৈর্য আর সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আমরা কাজ করে এসেছি। এই পথ নির্ঝঞ্ঝাট ছিলোনা। কিন্তু আমাদের দৃঢ় সংকল্প ছিলো। আমরা একশতভাগ সততা আর আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা আশাবাদী যে ২০২০ এর জুন/জুলাই মাসেই সৌধের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো।
সভার শেষ পর্যায়ে সংগঠনের মহাসচিব রিজওয়ান বলেন যে আমরা সবাই এই কমিউনিটির সাধারণ মানুষ। আমাদের আবেদনটাও তাই বাংলাদেশী-কানাডিয়ান সমাজের ওই ৮০ হাজার সাধারণ মানুষেরই কাছে। বিভিন্ন সময় বাধা এসেছে, নানান মুনির নানান মতের ছোঁড়া তীরে আমরা বিদ্ধ হয়েছি। তবুও সাধারণ হয়েও অসাধারণ একটি কাজ করবার দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছি ওই ৮০ হাজার মানুষেরই ভরসায়। প্রতিটি পরিবার থেকে যদি মাত্র ১০ ডলার করেও পাই, তাতেই অনায়াসে এই সৌধটি নির্মাণ সম্ভব। সর্বোচ্চ সততা, আন্তরিকতা আর ধৈর্য, এই আমাদের মূলধন। আমরা অপেক্ষায় রইলাম সবার সমর্থনের।