শিল্পকলায় লোকমেলার পার্বণ
- আপডেটের সময় : ১২:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭
- / ১৫৯৬ টাইম ভিউ
চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য লুকিয়ে রয়েছে লোক ঐতিহ্যে। সেই ঐতিহ্যের দেখা মেলে গ্রামীণ লোকমেলায়। গ্রামবাংলার সেই লোকমেলা বসেছে রাজধানীতে। দর্শকরা উপভোগ করলেন ভেলা ভাসান, লালকাছ ও গাজীর পটের পরিবেশনা। ঐতিহ্যের স্বরূপ সন্ধানে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিল উত্সবের আলোয় রঙিন। গতকাল শুক্রবার ভরা বঙ্গ নামের সংগঠন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘লোকমেলার পার্বণ উত্সব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালার ছিল প্রথম দিন।
অধ্যাপক হায়াত্ মামুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন ও বাংলা একাডেমির ফোকলোর বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দল সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন এবং বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেন তরুণ লোক গবেষক মোহাম্মদ আসাদ, ইমরান উজ-জামান ও জাহিদ হোসেন।
গতকাল পরিবেশিত হয় গাজীর পট, লালকাছ ও বেহুলার ভাসান । প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে ‘বাংলার মেলা বাংলার পার্বণ’ নামে প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন আগত অতিথিরা। এরপর আলোচনা শেষে নরসিংদী থেকে আসা ফজল আলীর দল গাজীর পট, বিক্রমপুর থেকে আসা অজিত্ গোস্মামীর দল লালকাছ ও টাঙ্গাইল থেকে আসা রহিম বাদাইমার দলের ভাসান গান পরিবেশিত হয়। আজ বিকালে একই প্রাঙ্গণে পরিবেশিত হবে দোহারের মাদার বাঁশ, মধুপুরের রে রে ও মুন্সীগঞ্জের ভেলা ভাসান।
গ্যালারি কায়ায় ‘চারকোল’ প্রদর্শনী : উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুরু হয়েছে যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘চারকোল’। গতকাল এর উদ্বোধন করেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির ও শিল্প সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। চারকোল মাধ্যমে আঁকা ১৪ জন শিল্পীর ৪৬টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে এ প্রদর্শনীতে। শিল্পীরা হলেন- সমরজিত্ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, চন্দ্র শেখর দে, নাজলি লায়লা মনসুর, মোহাম্মদ ইউনুস, জামাল আহমেদ, রণজিত্ দাস, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল হোসেন, গৌতম চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ইকবাল, শেখ রোকনুজ্জামান ও আশরাফুল হাসান। প্রদর্শনী চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
ছায়ানটের বর্ষাবন্দনা :গতকাল শুক্রবার বিকালে ছায়ানট মিলনায়তনে ছায়ানটের শিল্পীরা গানে গানে যেন বর্ষাকে নানা মাত্রায় তুলে ধরলেন। করলেন বর্ষাবন্দনা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কবি সুফিয়া কামালকে উত্সর্গ ছিল এ আয়োজন। এতে কথা, গান আর নৃত্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয় বর্ষার রূপ। আয়োজনের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথের ‘রিম্ ঝিম্ ঘন ঘন রে বরষে’ গানের সঙ্গে ছিল ছায়ানটের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা। এর পর কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। এর পর সত্যম্ কুমার দেবনাথ ‘ঝর ঝর বরিষে বারিধারা’, সেঁজুতি বড়ুয়া পরিবেশন করেন ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর-দিনে’। এর পর একক পাঠে অংশ নেন নাসিমা খান মজলিশ। এর পর ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘মেঘের হিন্দোলা দেয় পূব-হাওয়াতে দোলা গান’ গানের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন মা-মেয়ে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা তাথৈ। গান পরিবেশন করেন সংগঠনের অন্যান্য শিল্পীরা। ছিল সম্মেলক নৃত্য।
শিল্পকলায় ‘পাঠাভিনয় উৎসব’ : এবার কোনো নাটক নিয়ে উত্সব নয়, বরং নাটকের চুম্বক অংশ পাঠের উত্সব। ‘পাঠাভিনয় উত্সব’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ উত্সবের আয়োজন করেছে লোক নাট্যদল। গতকাল থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে দুই দিনব্যাপী এই উত্সব শুরু হয়েছে । যাতে ১৬টি নাট্যদলের ১৬ নাটকের নির্বাচিত অংশ পাঠ করছেন থিয়েটার অঙ্গনের প্রবীণ ও নবীন শিল্পীরা।
গতকালের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নাট্যজন সারা যাকের ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
উত্সবের প্রথম দিনে পাঠ করা হয় লোক নাট্যদলের ‘হেলেন কেলার’, ঢাকা থিয়েটারের ‘হরগজ’, অনুশীলন নাট্যদলের ‘হত্যার শিল্পকলা’, আরণ্যক নাট্যদলের ‘দি জুবলী হোটেল’, রংপুর নাট্যকেন্দ্রের ‘মেরাজ ফকিরের মা’, নাগরিক নাট্যাঙ্গন বাংলাদেশের ‘ক্রীতদাসের হাসি’, মণিপুরি থিয়েটারের ‘রুধিররঙ্গিণী’ এবং শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের ‘বধ্যভূমিতে শেষ দৃশ্য’। আজ শনিবার উত্সবের দ্বিতীয় দিনে পাঠাভিনয় শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। আজ থাকছে শিল্পকলা একাডেমির ‘হ্যামলেট’, থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, সময়’র ‘শেষ সংলাপ’, প্রাচ্যনাটের ‘দি জু স্টোরি’, মহাকাল নাট্য সমপ্রদায়ের ‘নীলাখ্যান’, নাট্যচক্রের ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ঢাকা পদাতিকের ‘কথা ৭১’ এবং নাগরিক নাট্য সমপ্রদায়ের ‘ওপেন কাপল’।