রোজা কি ব্রেইন ও মানসিক রোগের জন্যে উপকারী
- আপডেটের সময় : ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪
- / ২৫৫ টাইম ভিউ
রোজায় ( ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং) কি ব্রেইন ও মানসিক রোগের জন্যে ক্ষতিকর?
পবিত্র রোজার মাসে ব্রেইন তথা মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীর অভিভাবক’গন রোগীদের রোজা পালন নিয়ে প্রায়ই কিছু প্রশ্ন করেন। যেমন,
‘রোজা কি মানসিক রোগীর উপসর্গকে বাড়িয়ে দেবে?’
বা
‘রোজায় মানসিক রোগীরা ঔষধ বা ইনজেকশন নিতে পারবেন, কিভাবে নেবেন?’
বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, রোজা বা ফাস্টিং মানব শরীরের জন্যে উপকারী। রোজার সময় দেহে যে কিটোন উৎপন্ন এর মধ্যে বি এইচ বি (BHB- Beta hydroxybutyrate) বিষন্নতা রোগ প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। রোজা আবেগকে ( Emotion) নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
রোজার সময় আমাদের শরীর শক্তি উৎপাদনে গ্লুকোজ এর পরিবর্তে ক্ষতিকর চর্বিকে ব্যবহার করে। এর ফলে উৎপন্ন হয় কিটোন বডি। পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফীক (PET Scan) করে দেখা গেছে রোজা বা ফাস্টিং-এ ব্রেইন সেল অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৭/৮ গুণ বেশী কিটোন বডি ব্যবহার করে থাকে।
উৎপন্ন কিটোন বটি অটিজম (Autism), এলজিমার্স (Alzheimer’s) , এডিএইচডি (ADHD) ও পারকিনসন্স ডিজিজ (Perkinson’s disease) ও ডিমেনশিয়া (Dementia) রোগীদের জন্যে উপকারী।
মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তর কারন হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোক। (Ischemic stroke)। কিন্তু রোজা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। স্থুলতা কমিয়ে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে। রোজার মাধ্যমে হৃদ স্পন্দন ও ব্লাড প্রেশার কমে ফলে হৃদরোগের জটিলতা কমে যায়।
ট্রিটমেন্ট রেসিস্টেন্ট এপিলেপ্সি (Treatment Resistant Epilepsy) আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় ফাস্টিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে কিছু কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে।
রোজায় ব্রেইনের নিউরোপ্লাসটিসি’তে প্রক্রিয়া (Neroplasticity) অধিকতর সক্রিয় হয় এবং এর মাধ্যমে ব্রেইনের কোষ গুলোর মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ স্থাপন হয়।
রোজায় বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এ (Intermitten Fasting) শরীরের অটোফ্যাগী (Autophagy) প্রক্রিয়া সচল হয় এবং এর মাধ্যমে শরীর থেকে পুরোনো, অকেজো কোষ দেহ থেকে বের হয়ে যায়। অটোফ্যাগী প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্যে সম্প্রতি একজন জাপানি বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।
রোজার মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমে যায় ফলে শরীরের স্থুলতা হ্রাস পায়, ক্লান্তি বোধ কমে আসে।
মানসিক রোগের ঔষধ এবং রোজা:
মানসিক রোগের ঔষধ সাধারণত একবেলা কিংবা দুইবেলা হয়। এর জন্যে মানসিক রোগের ঔষধ সেবনে রোজাদারদের জন্যে কোন সমস্যা হয়না। ঔষধ একবেলা হলে ইফতার এর পর আর দুই বেলা হলে ইফতার এবং সাহরীর সময়ে সেবন করা যায়।
সিজোফ্রেনিয়া এর জন্যে অনেক সময় সাইকিয়াট্রিস্টরা ব্রেইনের ইঞ্জেকশন নিতে পরামর্শ দেন। ইঞ্জেকশন সহজলভ্য এবং এটি সাধারণত প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে একবার দিতে হয় ফলে আলাদা কোন দুশ্চিন্তা পোহাতে হয়না।
রোজা মুসলমানদের একটি ফরজ বিধান। আল্লাহতায়লা সুরা বাকারায় ১৮৩ নাম্বার আয়াতে বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা (তাকওয়া) অর্জন করতে পার’’।
আরেকটি আয়াতে বলেন, “কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)।
রোজা ও প্রিয় নবী সা:
রাসুল সাল্লাহুয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি সা: বলেছেন, “সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি, আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার”। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)
আসুন রোজা বা সিয়াম পালনের মাধ্যমে দেহ ও মনে সুস্থতার পাশাপাশি আমরা আজীবন সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আমল করি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি।