রাজনগরে তাম্রলিপির সন্ধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের
- আপডেটের সময় : ০৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০২০
- / ৪৮৫ টাইম ভিউ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান চালিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি সরেজমিনে ওই বিশ্ববিদ্যালয় অনুসন্ধান চালালে জেলার রাজনগর উপজেলায় উদ্ধারকৃত পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি উদঘাটন স্থলের সন্ধান পায় দলটি।
অনুসন্ধানের শেষ দিনে উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামের পরেশ পালের বাড়ি থেকে তাম্রলিপি উদ্ধারের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে প্রতিনিধি দল। এ দিকে রাজনগর সদর ইউনিয়নের কমলা রাণীর দীঘির হাজার বছরের পুরনো ঘাটের সন্ধান ও ইট উদ্ধার এবং বেশ কিছু সমাধির সন্ধান পেয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র যায়, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উত্তর সাগরনাল গ্রাম ও রাজনগরের পাঁচগাঁও এলাকায় প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থান রয়েছে এমন খবর প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধি দল গত ২৫ জুলাই থেকে জেলার ভাটেরাটিলা, জুড়ীর সাগরনাল এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামে অনুসন্ধান ও সার্ভে শুরু করে। অনুসন্ধানী টিম প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাঁচগাঁও কিংবা সাগরনাল রয়েছে এমনটি নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে কুলাউড়া উপজেলার কলিমাবাদ গ্রামের ভাটেরা টিলা ও রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে আদি ঐতিহাসিক নির্দশন রয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভাটেরাটিলা এবং পশ্চিমভাগ গ্রাম থেকে মাটির পাতিলের কিছু পুরানো ভাঙ্গা অংশ সংগ্রহ করেছেন। কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরের খনন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নির্দশন পাওয়া যেতে পারে বলে প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. আতাউর রহমান আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন আগামী শুস্ক মৌসুমে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এ দু’টি স্থানে খনন কার্যক্রম চালানো হবে। রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামের বৃদ্ধ পরেশ পাল জানান, ৬০’র দশকের প্রথম দিকে পুকুর খননের সময় সংস্কৃত ভাষায় লেখা পশ্চিমভাগ শিলালিপি উদ্ধার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সিলেট থেকে প্রকাশিত যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক আমিনূর রশীদ চৌধুরী শিলালিপিটি সেখান থেকে সংগ্রহ করে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর শিলালিপিটি জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়।
এ দিকে রাজনগর সদর ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে শাহ কুতুব (র.) এর মাজারের পাশে রাজা সুবিদ নারায়ণ চৌধুরীর খনন করা কমলা রাণীর দীঘির পুরানো ঘাটের কিছু অংশে ইটের কারুকাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ওই দীঘির পশ্চিম ও দক্ষিণপাড়ে একাধিক পুরোনো কবর রয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ শৌকর্যপূর্ণ দু’টি কবরের সন্ধান পেয়েছেন অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা। এ কবর দু’টি রাজ পরিবারের কতিপয় সদস্যদের সমাধিস্থল হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। কমলা রাণীর দীঘিটি দেড়শতাধিক বিঘা ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই দীঘির আদী নিদর্শন আবিস্কার করে একটি পর্যটন স্পট এবং রাজপরিবারের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে তারা জানিয়েছেন।
রাজনগরের গড়গাঁও গ্রামের ফজলুল হক নীরু জানান কমলা রাণীর দীঘি কেন্দ্রিক অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতি রয়েছে। রাজা সুবিদ নারায়ণ চৌধুরীর স্মৃতি বিজরিত কমলা রাণীর দীঘিটি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে বসে আছে। দীঘির চার পাশের পাড়ে খনন কার্যক্রম চালানো হলে আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন বেরিয়ে আসতে পারে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামতে অনুমান করা যাচ্ছে কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান কাঙ্খিত প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সন্ধান এখনো পাইনি আমরা।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সাথে আরও ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার শাহীন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গষেণা সহকারী ওমর ফারুক ও সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা। প্রতিনিধি দল গত ২৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তবর্তী উত্তর সাগরনাল, কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা ও রাজনগর উপজেলার গড়গাঁও এবং পশ্চিমভাগ গ্রামে অনুসন্ধান সার্ভে পরিচালনা করেন।