বিশ্ব ইজতেমায় চলছে আ’ম বয়ান, রোববার আখেরি মোনাজাত

- আপডেটের সময় : ১২:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০
- / ৩৬৫ টাইম ভিউ
কনকনে শীত আর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যদিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমা। এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমীপন্থী তাবলীগ লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিনদিন ব্যাপী প্রথম ধাপের এজতেমা। প্রথমপর্বের পর আগামী ১৭ জানুয়ারি হতে শুরু হবে দ্বিতীয়পর্বেও বিশ্ব এজতেমা। দ্বিতীয় ধাপের এজতেমায় মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীরা অংশ নিবেন।
বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। প্রথমপর্বে এজতেমা ময়দান পূর্ণ হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দান পার্শ্ববর্তী কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাত এবং আশপাশের খালি জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন।
এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে শুক্রবার টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। প্রথম দিন জুমাবার হওয়ায় সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। এজতেমা মাঠে জুম্মার নামাজে অংশ নিতে এজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও অনেক মুসল্লি আগেই ইজতেমাস্থলে এসেছেন।
নামাজের আগেই ইজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অবস্থান নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক, গলি ও ফুটপাথগুলোর ওপরে। এজতেমা ময়দান এবং এর আশ পাশ এলাকায় যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাঞ্জাবি আর টুপি পড়া মানুষ আর মানুষ। এজতেমার এ পর্বে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে কনকনে শীত, কুয়াশা আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, পিকআপ, ট্রেন, লঞ্চসহ ইত্যাদি যানবাহনে করে গত মঙ্গলবার থেকে ময়দানে এসেছেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকে। মুসল্লিদের আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আগত দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পদচারণনায় শিল্প শহর টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকে জোবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব এজতেমার বয়ান শুরু হয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সরেজমিনে ইজতেমা ময়দানের গিয়ে দেখা যায় লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে যথারীতি তাবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আ’ম বয়ান চলছে।
এজতেমা ময়দানের মুরব্বী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ান বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের। এবারের প্রথমপর্বের এজতেমার প্রথমদিনে এজতেমায় আগত মুসুল্লীরা ছাড়াও গাজীপুর ও আশেপাশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা
বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, শুক্রবার বাদ ফজর থেকে উর্দুতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠাণিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশীদ আম বয়ান করেন। আর বাংলাদেশের মাওলানা মোঃ আব্দুল মতিন তা বাংলায় তরজমা করেন। ইজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ২৪টি ভাষায় তা তরজমা করা হয়। পরে তাবলিগ মারকাজের শূরা সদস্য ও বুর্জুগরা ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়।
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছূলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে। তবে এ বছরও যৌতুকবিহীন বিয়ে হবে না।
রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথমপর্ব।
মোনাজাত শেষে মাওলানা জোবায়ের অনুসারিগণ ময়দান ছেড়ে চলে গেলে মাওলানা সা’দ অনুসারিদের পরিচালনায় ১৭ জানুয়ারি হতে দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা ফের শুরু হবে। ১৯ জানুয়ারি মাওলানা সাদপন্থীদের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ পর্বের বিশ্ব এজতেমা।
যারা বয়ান করলেন
আ’ম বয়ান করেন শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশীদ, শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ, পাকিস্তানের মাওলানা ইহসান। এছাড়াও মাওলানা সা’দ বিরোধী হিসেবে পরিচিত তাবলীগের একটি অংশ মাওলানা আহম্মেদ লা’টসহ তার সফরসঙ্গীরা ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছেছেন।
বিদেশী মুসল্লি
পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এজতেমার পর্বের প্রথম দিন আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৫১টি দেশের প্রায় এক হাজার ৬শ’রও বেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষনিকভাবে বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিদেশী মুসল্লিদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লীরা আলাদা আলাদা স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
তিনদিন ব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামি ১২ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। পরে চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। ওই ইজতেমায় মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিগণ অংশ নেবেন।
এজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো। তাবলিগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীর বিরোধের কারণে গত বছর থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমার আয়োজন করতে শুরু করে।