বাজেটের প্রভাবে চায়ের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৬ টাকা
- আপডেটের সময় : ০১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭
- / ১৩০৬ টাইম ভিউ
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে এমনিতেই চা বিক্রি কমে যায়। উপরন্তু এক মাস ধরে দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের কারণে কিছুটা অস্বাভাবিক পতন দেখা গেছে চায়ের চাহিদায়। এ কারণে গত কয়েকটি নিলামেই চায়ের বাজার ছিল নিম্নমুখী। ক্রেতা সংকটে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ চা-ই অবিক্রীত থেকে গেছে। কিন্তু নতুন বাজেট ঘোষণার পর প্রথম নিলামে চায়ের দামে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। এ নিলামে চায়ের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৬ টাকা। চা আমদানিতে ট্যারিফ ও শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা পণ্যটির দামে তেজি ভাব এনেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চা-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই চায়ের দাম ছিল নিম্নমুখী। প্রথমে সামান্য বেশি থাকলেও পরবর্তীতে প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম কমতে থাকে। তবে সর্বশেষ গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত ৬ নম্বর আন্তর্জাতিক নিলাম থেকে চায়ের বাজার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। বাজেটে চায়ের শুল্ক বাড়তে পারে, এমন গুজবে ক্রেতা চাহিদাও ছিল বেশি।
১ জুন বাজেট প্রস্তাবনার পর থেকে চায়ের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আগে থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল। গতকাল অনুষ্ঠিত মৌসুমের সপ্তম নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় ২০৪ টাকায়। যদিও আগের নিলামে চায়ের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮৭-১৮৮ টাকা।
আগামী অর্থবছরে চা আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য ১ দশমিক ৬০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ ডলার করা এবং সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা আসার পর থেকে পণ্যটির বাজার অস্থির হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাজেটে ঘোষিত কর প্রস্তাবনা সংশোধন না করলে প্রতি কেজি চায়ের দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
নিলাম বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকালের নিলামে মোট ২৫ হাজার ৭৪৪ প্যাকেটে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩৬৩ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে ২১ হাজার ৮১০ প্যাকেটে ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯০ কেজি দানাদার চা ও ৩ হাজার ৯৩৪ প্যাকেটে ২ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৪ কেজি গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করে বাগান মালিকদের সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে ক্রেতাদের প্রতিনিধিরা প্রায় ৮৮-৯০ শতাংশ চা-ই কিনে নেন। এর আগের নিলামগুলোয় গড়ে ৬৫-৭০ শতাংশ চা বিক্রি হলেও বাজেট-পরবর্তী নিলামে প্রস্তাবিত চায়ের মাত্র ১০ শতাংশ অবিক্রীত ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএ) সভাপতি শান্তনু বিশ্বাস বণিক বার্তাকে বলেন, দেশীয় উৎপাদনের প্রায় সমপরিমাণ চা উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। এর আগে দেশে উৎপাদিত চায়ের সঙ্গে ভোগের ব্যবধান ছিল। পর পর দুই বছর বাজেটে চা আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হলে চা সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে চা আমদানি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর নিলামে দেশীয় চায়ের দাম বাড়লেও গুণগত মানসম্পন্ন চায়ের ঘাটতি থাকবে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে দেশে প্রায় সাড়ে আট কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি চায়ের চাহিদা ছিল ৮ কোটি ২০ লাখ কেজি। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানিও হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি চা মজুদ না থাকলে সরবরাহ চেইন ভেঙে যায়। সেক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। দেশীয় বাগান মালিকরা মানসম্পন্ন ও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদনে মনোযোগী না হলেও চা খাতের সুরক্ষার কথা বলে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশে নিত্যপণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে পড়বে। চায়ের দাম বাড়লে অতিরিক্ত মূল্যের চাপ ভোক্তার ওপরই পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
–বনিক বার্তা