পোপ ফ্রান্সিস আজ ঢাকায় আসছেন
- আপডেটের সময় : ১২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
- / ১১৮৫ টাইম ভিউ
ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতা পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের এক সফরে আজ ঢাকায় আসছেন। শান্তি ও সংহতির বার্তা নিয়ে মিয়ানমার সফর শেষে তিনি বাংলাদেশে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে এটি তার রাষ্ট্রীয় সফর। তবে তার এ সফর চলমান রোহিঙ্গা সংকটের ওপর কী প্রভাব ফেলে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। যদিও তিনি মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ করেননি, তবে ঢাকায় সফরকালে একদল রোহিঙ্গাকে পোপের সঙ্গে দেখা করতে আনা হচ্ছে। তিনি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নিষ্ঠুরতার বর্ণনা সরাসরি তাদের কাছ থেকে শোনবেন।
পোপ মিয়ানমার সফরকালে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে পোপের আগমন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় কাকরাইলে আর্চবিশপ হাউসকে পোপের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় প্রার্থনায় অংশ নিতেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ঢাকায় নিযুক্ত ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচারিও বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘পোপের সফরের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা এখন তাকে স্বাগত জানানের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি’। এদিকে পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার ও স্থানীয় ক্যাথলিকমণ্ডলীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সফর করার কর্মসূচি গ্রহণ করায় আমি মহামান্য পোপের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকানের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার ও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
পোপের আগমন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পোপের বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল এবং চলাচলের পথে থাকবে কয়েক স্তরে নি-িদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী। বিশেষ বিমানে আজ বিকাল ৩টায় ইয়াঙ্গুন থেকে সরাসরি হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তারপর তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে তিনি স্মৃতিগ্রন্থে স্বাক্ষর করবেন।
পোপ প্রথম দিনেই বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজ ও কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পোপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিকালে ক্যাথিড্রাল পরিদর্শন করবেন এবং রমনায় প্রবীণ যাজক ভবনে পোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশপদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তারপর আর্চবিশপ হাউসের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমান্ডলিক সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন।
পোপ তার সফরের শেষদিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসা ভবন ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করবেন। তারপর তেজগাঁও গির্জায় যাজকবর্গ, ব্রাদার-সিস্টার, সেমিনারিয়ান ও নবিশদের সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তিনি তেজগাঁওয়ে পুরনো গির্জা পরিদর্শন করবেন। বিকালে নটর ডেম কলেজে যুব সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখবেন। শনিবার ৫টার দিকে রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফরকালে পোপ লা মেরিডিয়ান হোটেলে থাকবেন। ওই হোটেলে বিশাল মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পোপের সফর কভার করার জন্য প্রায় ৩০০ বিদেশি সাংবাদিক ঢাকায় আসছেন। রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পোপের এবারের ঢাকা সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ভ্যাটিকান থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তখন তিনি রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তিনি মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেন। মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ না করলেও ঢাকায় এসে রোহিঙ্গা শব্দ আবার ব্যবহার করেন কিনা, সেদিকেই এখন আগ্রহ থাকবে। বাংলাদেশের খ্রিস্টান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও যুগান্তরকে বলেছেন, পোপ বাংলাদেশ সফরকালে রাখাইন থেকে বিতাড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর দমনপীড়নের নিন্দা জানাবেন। প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে পোপ ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার সফরের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করার সিদ্ধান্ত নেন।