দেশ জুড়ে সেনা টহল অব্যাহত
- আপডেটের সময় : ০৯:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০
- / ৬৫৪ টাইম ভিউ
মহামারী করোনার কারণে জনসাধারণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সারাদেশেই কাজ করছে সেনাবাহিনী। নিশ্চিত করা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। দোকান-পাট বন্ধ থাকায় এবং গাড়ি চলাচল সীমিত হওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় জনসাধারণের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়ায় বদলে গেছে শহরগুলোর চিরচেনা ছবি। এখন পর্যন্ত পিরোজপুরে কোনো করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে পিরোজপুরে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৬৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
দেশব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় আজ যশোরের বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশন ছিল জনশূন্য। সড়কে মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। মানুষকে ঘরে রাখতে অব্যাহত রয়েছে সেনাটহল। এদিকে, বিপনন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যশোর থেকে প্রকাশিত সকল দৈনিক পত্রিকা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ ছুটি বলবৎ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে যশোর জেলা সংবাদপত্র পরিষদ।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোরে ৮ প্লাটুন সেনা সদস্য নামানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো নামবে।
এদিকে, দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি সেনাবাহিনী আর পুলিশের উপস্থিতিতে আজ ২৬ মার্চ থেকে পাল্টে গেছে দিনাজপুরের চিত্র। রাস্তাঘাট জনশূন্য,দোকানপাট বন্ধ। সেনাবাহিনী শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশে জনগনকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরবাসী।এদিকে ফায়ার সার্ভিস শহরের রাস্তাঘাট, রেলষ্টেশন, বাস টার্মিনাল জীবাণুমুক্ত করতে জীবানুনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ে জোরদার করা হয়েছে সেনাবাহিনীর টহল। বৃহস্পতিবার জেলাজুড়ে প্রচারণা, সামজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানো ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
এছাড়াও বিদেশ ফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারাইন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি একসঙ্গে দুজন ব্যাক্তি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং, দরিদ্র মানুষকে সহায়তায় কাজ করবেন বলে জানান তারা। জেলার ৫টি উপজেলায় ২৫০ জন সেনা সদস্যের দুটি কোম্পানী এখানে অবস্থান করছে।
এদিকে, পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন সড়কে পরিচ্ছন্নকর্মী দিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে প্রতিটি যানবাহনে। রংপুরে করোনা সতর্কতা হিসাবে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে। তবে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী কিছু লোকজনকে রাস্তায় দেখা গেছে। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলো কিছুকিছু খোলা আছে।
গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুপুরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নগরীর পায়রা চত্ত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়, সিটি বজারসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন কানিজ সাবিহা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় রংপুর জেলায় ১৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং একজনকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩৫ জনকে হোম কোয়ারাইনটাইনে রাখা হয়েছে
অপরদিকে, করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল বন্দর এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় বন্দর এলাকায় নামে সেনাবাহিনী,পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
এসময় আতঙ্কে অপ্রয়োজনে রাস্তায় থাকা মানুষ এলাকা ছাড়লে জনশূন্য হয় রাস্তাঘাট। বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এসময় অনুমোদিত ঔষধ ও খাদ্য দ্রবসহ অনান্য দোকান খোলা রাখা ছিল। নাটোরে দুপুর থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
সেনা সদস্যরা শহরের স্বাধীনতা চত্বর থেকে মাইকিং করে জনগণকে ঘরে থাকাসহ করোনা প্রতিরোধে নানা পরামর্শ প্রদান শুরু করে। পরে বিভিন্নে এলাকায় টহল সহ গুরুত্বপূর্ন স্থানে মাইকিং করে। এছাড়া জনসমাগম বন্ধ সহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। টানা ছুটির প্রথম দিন থেকেই রাঙামাটি পুরোটা ফাঁকা হয়ে এসেছে।
গতকাল থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর আজ থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি শুরু হওয়ায় শহরে তেমন লোকজন নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে বাসায় ফেরত পাঠাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাঙামাটি শহর ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি করছেন। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায় যাতে একের অধিক মানুষ এক সাথে না থাকতে পারে সে বিষয়ে কাজ করছে প্রশাসন।
রাঙামাটিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ফলমূল পৌঁছে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ১১২ ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের জন্য রাঙামাটি রিজিয়ন থেকে এই শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয় সেনাবাহিনী থেকে।
সমাজিক দুরত্ব তৈরী, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত এবং বাইরে জটলাকারীদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর গাঙিনারপাড়, নতুন বাজার, চরপাড়া, ব্রীজমোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের অভিযান চলে। কঠোর নির্দেশনার পরও মাস্ক ব্যবহার না করায় এবং অযথা বাইরে ঘুরাঘুরির কারণে মৃদু লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, একসাথে চলাফেরা না করা এবং অপ্রয়োজনে বাইরে না বের হতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়। পঞ্চগড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাঠে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানো ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে কাজ করছেন তারা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। খোলেনি দোকানপাট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লা ও আভ্যন্তরীণ সড়কের যান চলাচল। সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভোর থেকে সব ধরণের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। জনসমাগম এড়াতে মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। টহলে আছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৫ মার্চ) রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই যুবকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডাক্তার নুপুর কান্তি দাশ।
তিনি বলেন, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩০ বছরের এক যুবক। লক্ষণ দেখে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। একইদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে মারা যান ঐ যুবক। করোনা সন্দেহ হওয়ায় নিহত যুবকের সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে করোনা নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহবান জানান তিনি।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বদলে গেছে কিশোরগঞ্জের চির চেনা দৃশ্য। শহরের সব দোকান-পাট বন্ধ। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যানবাহন। চারদিকে অজানা আতংক-উদ্বেগ। মাঝে মাঝে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। কিশোরগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৩ জনসহ কোয়ারিন্টিনে আছেন ৩৮৮ জন। জেলার ১৩টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৮৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে শেষ করেছেন ৪৪৭ জন। তবে এখন এ জেলায় করোনা আক্রান্ত কোন রোগী সনাক্ত হয়নি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম রোধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য,ওষুধের দোকান ব্যতিত সকল দোকান পাট বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে নরসিংদীতে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে নরসিংদী জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গণপরিবহনসহ সদর, মাধবদী, পলাশ, শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হয়।
এসময় সরকারী নির্দেশ অমান্য করে যাত্রী পরিবহন করায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কে দুটি বাস ও দুটি পিকাপ আটক করা হয়। পাশাপাশি অকারণে বাড়ির বাইরে না আসার জন্য সতর্ক করে মাইকিং করা হয়।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সহযোগিতায় মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা। এসময় সেনাসদস্যরা মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ করে এবং বাইরে অবস্থানরত লোকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেন।
এছাড়া রাস্তাঘাটসহ যে কোনো জায়গায় বেশি লোকজন যেন সমবেত হতে না পারে, সবাই যেন নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা করে এবং যথাযথভাবে সরকারী নির্দেশনাসমূহ মেনে চলে সেনাবাহিনী এই বিষয়গুলো নিশ্চিতের কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। সীমিত করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয়ভাবে সাধারণ মানুষের চলাচল।
করোনা প্রতিরোধে নাটোরে রাস্তায় একজনের বেশী চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। করোনা প্রতিরোধে জনসমাগম ঠেকাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার।