ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

দেশে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ সংযোজনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা: রাষ্ট্রপতি

দেশদিগন্ত :
  • আপডেটের সময় : ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৭
  • / ১২২৯ টাইম ভিউ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশে নির্মিত সর্ববৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নৌবাহিনীতে সংযোজনের ফলে এ বাহিনী আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অগ্রযাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরের নেভাল বার্থে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘দুর্গম ও নিশান এবং সাবমেরিন টাগ হালদা ও পশুর’ আনুষ্ঠানিক কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের এ মাসেই নৌবাহিনীর জন্য সংগৃহীত ‘পদ্মা ও পলাশ’ নামে দুটি যুদ্ধ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্লিটের যাত্রা শুরু করে। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এর মাধ্যমে সমুদ্রপথে হানাদার বাহিনীর রসদ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যে পশুর নদীর অভিযান শুরু হয়। এরফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
কমিশনিংয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী নৌসদস্য বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আকতারউদ্দিনসহ সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌবাহিনীর জোয়ানদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জাতির পিতা একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের জন্য তার রূপকল্প বাস্তবায়নে ছিলেন বদ্ধপরিকর। সে কারণে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ত্বরিৎ উন্নয়নে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন। একইভাবে বর্তমান সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি মর্যাদাশীল নৌবাহিনীতে পরিণত এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন অবদানের জন্য সুপরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন করে ৬দফা দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর সদর দফতর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তিনি নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদানের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই মহান নেতার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আজ আমরা নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতার পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নৌবহরে দুটি আধুনিক সাবমেরিন ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ে একটি নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
এছাড়া গণচীনে আরো দুটি করভেট নির্মাণের কাজ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডে দেশিয় প্রযুক্তিতে জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে এখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ও ঢাকার খিলক্ষেতে পূর্ণাঙ্গ নৌঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌবাহিনীর জন্য আকাশ সীমানা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে দুটি হেলিকপ্টার, দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে বিভন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যাধুনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরোও দুটি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট শিগগিরই নেভাল এভিয়েশনে যুক্ত হবে। এ সকল এয়ারক্রাফট সংযোজনের ফলে নৌবাহিনী স্বল্প সময়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় টহল এবং পর্যক্ষেণে সক্ষমতা অর্জন করবে। যা সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমুদ্রসম্পদের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে স্থলভাগের সম্পদ সীমিত হয়ে পড়ায় সারা বিশ্বের নজর আজ সমুদ্র সম্পদের দিকে। সমুদ্রপথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় আমাদের জন্য রয়েছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া আমাদের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল এলাকা যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিনকোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যের ৯০ভাগেরও বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য।
তিনি নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় শূন্য থেকে যে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ একটি পেশাদার ও বহুমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আপনার এক দুঃসাহসিক পেশায় নিয়োজিত। বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা, চোরাচালান ও জলদস্যু দমন এবং জাহাজ চলাচলে ব্যবহৃত সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, কর্মদক্ষতা এবং উঁচুমানের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতেও সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। নতুনভাবে চারটি জাহাজের কমিশনিং ও সংযোজন আপনাদের দায়িত্বেও পরিধিকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। এতে সামুদ্রিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ষ্ট্রপতি বানৌজা ‘দুর্গম ও নিশান’ এবং বানোটা ‘হালদা ও পশুর’ এর সদস্য ও ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নৌবাহিনীতে সদ্য সংযোজিত এ চারটি জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীলতা আনবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন জাহাজগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নৌবাহিনী আরো সফলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।
চীন ও মালেশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কারিগরিভাবে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে এই দুই দেশ আমাদের নৌবাহিনীর নাবিকদের দক্ষ করে তুলেছে। যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এবং সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতি কমান্ডিং অফিসারদের মধ্যে কমিশনিং ফরমান প্রদান করেন।
এরআগে দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতি খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, এবং কমডোর কমান্ডিং খুলনার কমডোর সামসুল আলম তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বানৌজা ‘দুর্গম’ পরিদর্শন এবং নৌমহড়া উপভোগ করেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড সূত্র জানায়, প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজের দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ ৯ মিটার ও গভীরতা ৫ দশমিক ২৫ মিটার। জাহাজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। ২৫ নটিক্যাল বা ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম জাহাজ দুটিতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। শত্রুর সাবমেরিন শনাক্ত ও বিধ্বংসী টর্পেডো নিক্ষেপ করতেও সক্ষম জাহাজ দুটি। স্বাভাবিক সময়ে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হবে এই জাহাজ। এই জাহাজের লাইফ টাইম ২৫ বছর। প্রতিটি জাহাজে ৭৬ দশমিক ২ মিলিমিটারের একটি গান, ৩০ মিলিমিটারের একটি গান ও ২টি করে টর্পোডো লাঞ্চার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ২টি নেভিগেশন রাডার, একটি এয়ার অ্যান্ড সারফেস রাডার, একটি ট্রাকিং রাডার ও একটি সোনার। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত হালদা ও পশুর নামের টাগ বোটের দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। এই টাগবোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা।

পোস্ট শেয়ার করুন

দেশে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ সংযোজনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা: রাষ্ট্রপতি

আপডেটের সময় : ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশে নির্মিত সর্ববৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নৌবাহিনীতে সংযোজনের ফলে এ বাহিনী আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অগ্রযাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরের নেভাল বার্থে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘দুর্গম ও নিশান এবং সাবমেরিন টাগ হালদা ও পশুর’ আনুষ্ঠানিক কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের এ মাসেই নৌবাহিনীর জন্য সংগৃহীত ‘পদ্মা ও পলাশ’ নামে দুটি যুদ্ধ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্লিটের যাত্রা শুরু করে। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এর মাধ্যমে সমুদ্রপথে হানাদার বাহিনীর রসদ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যে পশুর নদীর অভিযান শুরু হয়। এরফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
কমিশনিংয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী নৌসদস্য বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আকতারউদ্দিনসহ সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌবাহিনীর জোয়ানদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জাতির পিতা একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের জন্য তার রূপকল্প বাস্তবায়নে ছিলেন বদ্ধপরিকর। সে কারণে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ত্বরিৎ উন্নয়নে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন। একইভাবে বর্তমান সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি মর্যাদাশীল নৌবাহিনীতে পরিণত এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন অবদানের জন্য সুপরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন করে ৬দফা দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর সদর দফতর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তিনি নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদানের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই মহান নেতার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আজ আমরা নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতার পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নৌবহরে দুটি আধুনিক সাবমেরিন ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ে একটি নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
এছাড়া গণচীনে আরো দুটি করভেট নির্মাণের কাজ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডে দেশিয় প্রযুক্তিতে জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে এখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ও ঢাকার খিলক্ষেতে পূর্ণাঙ্গ নৌঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌবাহিনীর জন্য আকাশ সীমানা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে দুটি হেলিকপ্টার, দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে বিভন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যাধুনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরোও দুটি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট শিগগিরই নেভাল এভিয়েশনে যুক্ত হবে। এ সকল এয়ারক্রাফট সংযোজনের ফলে নৌবাহিনী স্বল্প সময়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় টহল এবং পর্যক্ষেণে সক্ষমতা অর্জন করবে। যা সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমুদ্রসম্পদের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে স্থলভাগের সম্পদ সীমিত হয়ে পড়ায় সারা বিশ্বের নজর আজ সমুদ্র সম্পদের দিকে। সমুদ্রপথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় আমাদের জন্য রয়েছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া আমাদের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল এলাকা যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিনকোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যের ৯০ভাগেরও বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য।
তিনি নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় শূন্য থেকে যে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ একটি পেশাদার ও বহুমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আপনার এক দুঃসাহসিক পেশায় নিয়োজিত। বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা, চোরাচালান ও জলদস্যু দমন এবং জাহাজ চলাচলে ব্যবহৃত সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, কর্মদক্ষতা এবং উঁচুমানের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতেও সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। নতুনভাবে চারটি জাহাজের কমিশনিং ও সংযোজন আপনাদের দায়িত্বেও পরিধিকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। এতে সামুদ্রিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ষ্ট্রপতি বানৌজা ‘দুর্গম ও নিশান’ এবং বানোটা ‘হালদা ও পশুর’ এর সদস্য ও ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নৌবাহিনীতে সদ্য সংযোজিত এ চারটি জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীলতা আনবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন জাহাজগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নৌবাহিনী আরো সফলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।
চীন ও মালেশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কারিগরিভাবে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে এই দুই দেশ আমাদের নৌবাহিনীর নাবিকদের দক্ষ করে তুলেছে। যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এবং সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতি কমান্ডিং অফিসারদের মধ্যে কমিশনিং ফরমান প্রদান করেন।
এরআগে দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতি খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, এবং কমডোর কমান্ডিং খুলনার কমডোর সামসুল আলম তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বানৌজা ‘দুর্গম’ পরিদর্শন এবং নৌমহড়া উপভোগ করেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড সূত্র জানায়, প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজের দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ ৯ মিটার ও গভীরতা ৫ দশমিক ২৫ মিটার। জাহাজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। ২৫ নটিক্যাল বা ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম জাহাজ দুটিতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। শত্রুর সাবমেরিন শনাক্ত ও বিধ্বংসী টর্পেডো নিক্ষেপ করতেও সক্ষম জাহাজ দুটি। স্বাভাবিক সময়ে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হবে এই জাহাজ। এই জাহাজের লাইফ টাইম ২৫ বছর। প্রতিটি জাহাজে ৭৬ দশমিক ২ মিলিমিটারের একটি গান, ৩০ মিলিমিটারের একটি গান ও ২টি করে টর্পোডো লাঞ্চার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ২টি নেভিগেশন রাডার, একটি এয়ার অ্যান্ড সারফেস রাডার, একটি ট্রাকিং রাডার ও একটি সোনার। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত হালদা ও পশুর নামের টাগ বোটের দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। এই টাগবোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা।