দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির হয়ে কুলাউড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছেন মাসুদুর রহমান শ্যামল
- আপডেটের সময় : ১০:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০
- / ৭১০ টাইম ভিউ
দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির হয়ে কুলাউড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছেন মাসুদুর রহমান শ্যামল
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ আদায় করে নেয়া এই তারকা অলরাউন্ডারের ভিত্তি কিন্তু গড়ে দিয়েছিলো বিকেএসপি। সাকিবের মতো অসংখ্য তারকা খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অবিসংবাদিত এই প্রতিষ্ঠানটি। আমাদের নতুন প্রজন্ম হয়তো এখনো জানেনা নব্বই দশকের প্রথম দিকে আমাদের কুলাউড়ারই একজন কৃতি এ্যাথলেট বিকেএসপির তীব্র প্রতিযোগীতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের কুলাউড়াবাসী মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন।
যার কথা বলছিলাম মাসুদুর রহমান শ্যামল কুলাউড়ার লৈয়ারহাই গ্রামের বাসিন্দা। বাবা মহিউর রহমন যিনি কুলাউড়ায় মানিক মিয়া চেয়ারম্যান নামে পরিচিত, একসময় কুলাউড়ার কৃতি ফুটবলার যিনি পৃথিমপাশার কিংবদন্তী রাজা সাহেবের টীমের হয়ে ঝাড়ু ভাইর নেতৃত্বে সিলেটের বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলতেন। বড় ভাই সোহেল এবং মেঝ ভাই বাবু দুজনই খেলার সাথে সম্পৃক্ত। বাবা এবং ভাইদের দেখেই ফুটবলের প্রতি আসক্তি জন্মে শ্যামল রহমানের যদিও তিনি ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনও খুব ভালো খেলতেন। রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হোন এনসি স্কুলে। নব্বই দশকে কুলাউড়ায় খুব জনপ্রিয় ছিলো ৪ ফুট ৬ ইঞ্চির ফুটবল টুর্ণামেন্ট। এসব টুর্নামেন্টে কুলাউড়ার বিভিন্ন মাঠে সহপাঠী নাজমুল,সাকেল, রব এবং বিশেষ করে প্রয়াত টিটুকে সাথে নিয়ে ফুটবল খেলে বেড়াতেন শ্যামল রহমান।
১৯৯১ সালে সুইডেন এবং ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত ডানা এবং গোথিয়া কাপে বিকেএসপির প্লেয়ারদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ দল বখতিয়ার নয়নদের নেতৃত্বে অনেকটা আলোড়ন সৃষ্টি করেই চ্যাম্পিয়ন হয়। ঠিক একই বছরে বিকেএসপিতে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হোন কুলাউড়ার ক্ষুদে তারকা শ্যামল রহমান।
বৃহৎ পরিসরে ৪,২০০ প্রতিযোগীকে দেখে একদম সাহস হারাননি। তৎকালীন সময় বিকেএসপির ভর্তি পরীক্ষা ছিলো খুবই কঠিন। একে একে মেডিক্যাল টেস্ট, ফিজিক্যাল টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, স্পোর্টস পরীক্ষা এবং ভাইবায় উত্তীর্ণ হয়ে ৬০ জনের মধ্যে টিকে যান শ্যামল রহমান। মোট চারটি ডিসিপ্লিন ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এবং সুইমিংএ সুযোগ পান তিনি। অপশন দেয়া হয় যেকোন একটি বেছে নিতে। হকি বেছে নিলে জাতীয় দলে খেলা খুবই সহজ হয়। কারণ এই ডিসিপ্লিনে প্রতিযোগীতা কম এবং জাতীয় দলের প্রায় আশি ভাগ খেলোয়াড়ই বিকেএসপির। কিন্তু যার রক্তে মিশে আছে ফুটবল তিনি হকি কিংবা অন্য খেলা কিভাবে চয়েস করবেন। শুরু হয় শ্যামল রহমানের নতুন করে ফুটবল যাত্রা।
বিকেএসপিতে ব্যাচমেটের হিসেবে পান সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার ফিরোজ মাহমুদ টিটু, বর্তমান দেশ সেরা কোচ সাইফুর রহমান মনি, মনোয়ার মুন্না, কিংশুক চাকমা, হাসান আল মাসুদ এবং মাসুদ রানাকে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক উনার দুই বছরের সিনিয়র হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিকেএসপির হয়ে প্রথম প্রফেশনাল টুর্নামেন্ট খেলতে যান ভারতের কলকাতায় এবং সারা বাংলা নামের এই ফুটবল টুর্নামেন্টে বিকেএসপির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করায় প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ৫০ ডলার ভাতা দেয়া হতো। টানা সতের দিনের এই টুর্নামেন্টে বিকেএসপি রানারআপ হয়।
শ্যামল রহমানের ফুটবল জীবন মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে শুরু হলেও বিকেএসপিতে ভর্তি হবার পর কোচের পরামর্শে কখনো রাইট ব্যাক আবার কখনো স্টপার পজিশনে খেলতেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত টানা তিন বছর বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফুটবল টুর্নামেন্ট বিমানকাপে বিকেএসপির পাঁচ জন সতীর্থ সহ টাঙ্গাইল জেলার পক্ষে খেলতেন। বিমান কাপে নিয়মিত ভালো করার সুবাদে ১৯৯৬ সালে অ১৬ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ৪০ জনের মধ্যে সুযোগ পান। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত মেডিকেল টেস্টে জন্ডিস ধরা পরায় ক্যাম্প থেকে ছিটকে পড়েন।
বিকেএসপির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি চট্টগ্রামে মেয়র গোল্ডকাপ, রাজশাহী, চাপাই, মানিকগঞ্জ, বগুড়ার চান্দু স্টেডিয়াম, জাবি এবং ঢাবি মাঠেও ফুটবল খেলেছেন। ১৯৯৭ সালে শেরে বাংলাকাপে সুনামগঞ্জ জেলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনে গেন্ডারিয়ার ক্লাব ইস্ট এন্ড ক্লাবের হয়ে খেলেছেন এবং এসময় উনার কোচ ছিলেন সেলিম ভাই। বিকেএসপিতে তিনি জাপানি কোচ সুজিকা মিউরার অধীনে প্রশিক্ষন নিতেন এবং দেশী কোচ ছিলেন কাজী রফিক দিপু, অমল চন্দ্র দে এবং জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া।
১৯৯৭ সালে বিকেএসপি থেকে এইচএসসি পাশ করে বের হবার পর আবারও চলে আসেন জন্মমাটি কুলাউড়ায়। ১৯৯৮ সালে কুলাউড়ায় ক্রিকেট লীগে জাতীয় তরুণ সংঘের হয়ে ওপেনিং ব্যাটিং করতেন। একই সালে ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমতির আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্টে উনার দল রানারআপ হয় এবং তিনি নির্বাচিত হোন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। কুলাউড়ার এই কৃতিমান ফুটবলার ১৯৯৯ সালে পড়াশুনার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান এবং এর সাথে কুলাউড়ার একজন সম্ভবনাময় ফুটবলারের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি হয়।
কিন্তু ফুটবল যার রক্তে মিশে আছে তিনি ফুটবল থেকে দূরে থাকেন কিভাবে। অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট তিনি নিয়মিত খেলেন এবং উক্ত টুর্নামেন্টে উনার দল র্যামসগেট আরএসএল ক্লাব সিডনির দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার জালালাবাদ এসোসিয়েশনের তিনি একজন সক্রিয় সদস্য।
কুলাউড়ায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের আলোচনার কেঁন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা প্রতিষ্টান জুবেদ চৌধুরী ক্রীড়া ও ফুটবল একাডেমির অন্যতম পরিচালক মাসুদুর রহমান শ্যামল কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। খেলোয়াড় জীবনের নিজের অভিজ্ঞতা এবং পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে এই একাডেমির মাধ্যমে কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনে বিপ্লব ঘটাতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন সেই দিন বেশী দূরে নয় যেদিন কুলাউড়ার কোন ছেলে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এলাকার জন্য গৌরব বয়ে আনবে। আমরাও উনার স্বপ্নের সারথি হয়ে জন্মভুমি কুলাউড়ার ক্রীড়াঙ্গনের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে চাই।