ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনে বড়লেখার সোয়েব আহমেদের সমর্থনে মতবিনিময় সভা ইতালির ভেনিসে গ্রিন সিলেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ইতালির ভেনিসে এনটিভির ইউরোপের ডিরেক্টর সাবরিনা হোসাইন কে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা

ড. আবেদ চৌধুরীর ‘রঙিন ভুট্টা’

মাহফুজ শাকিলঃ
  • আপডেটের সময় : ১১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ১১৭৩ টাইম ভিউ

মাহফুজ শাকিলঃ জিন বিজ্ঞানী কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন ‘রঙিন ভুট্টা’।

আজ রবিবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপজেলার সফল কৃষক, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মুখে নতুন উদ্ভাবনী ‘রঙিন ভুট্টা’ নিয়ে বিস্তর কথা বলেন।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ খুবই বেশি। এটিকে নিউ নিউট্রেশন বলা যেতে পারে। ভুট্টায় কেরোটিন থাকার কারণে মূলত এর রং হলুদ হয়। তাই তিনি রঙিন ভুট্টার ক্লোন উদ্ভাবন করেন। একত্রে সবরঙের ভুট্টাসহ আলাদা আলাদা রঙের ভুট্টা উদ্ভাবন করেন।

রঙিন ভুট্টা ক্যান্সার প্রতিরোধক বলে জানান ড. আবেদ চৌধুরী। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এই ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। শিশুরা ভুট্টা খেলে তাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পুরণ হবে।

ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা সারা বছরে ৪ বার চাষ করা যায়। আবার খরিফ -১ ও খরিফ -২ মৌসুমেও ভুট্টা চাষ করা যায়। হাইব্রিড ভুট্টা একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। বেরিয়ে আসা ভুট্টা ফলন হবে হাইব্রিডের সমান। ফলে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার ভুট্টাচাষীসহ সফল কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ভুট্টার বীজ বিতরণ করেন। প্রত্যেকটি বাড়ি আশেপাশে এবং পতিত জায়গায় ভুট্টা চাষের আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবা দিয়েছি। এবার সেই সেবা নিজের দেশকে তথা কুলাউড়াকে দিতে চাই। বিশেষ করে কুলাউড়ার কৃষি বিভাগকে এগিয়ে নিতে আলাদা সময় দেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

ড. আবেদ চৌধুরী কৃষি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে বিজ্ঞানের কারণে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে, জমির কারণে নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো যেভাবে জমির উপরিভাগ (পলি) অংশ ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে, মিল ফ্যাক্টরি করে ধানী জমিকে ধ্বংস এবং নগরায়ন করা হচ্ছে তাতে কৃষি বিভাগ আগামীতে হুমকির মুখে পড়বে। কৃষিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, সেই সাথে নতুন জাতের উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি সবধরণের গবেষণা দেশ ও দেশের বাইরে করেন।
বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সাথে বিভিন্ন ধরণের গবেষণামূলক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন।

নরমাল ভুট্টার সাথে জিনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরণের রং তৈরি করে এই ভুট্টাকে কালার করা হয়েছে। জেনিটিক্যালি মডিফাইড করে এ ধরণের ভুট্টা তৈরি করা হয়।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা বৈজ্ঞানিক বিষয়, বিজ্ঞানী ছাড়া এটা কেউ বুঝবে না। আমরা চাইলে যেকোন ফসলকে যে কোনো রং দিতে পারি অথবা যে কোনো রং ফসলের রং তৈরি করা সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কৃষি অফিসার জগলুল হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিকাগোর অনারারি কনস্যুল জেনারেল মুনির চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিটি লিডার শামছুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ চাষী আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, আবেদ চৌধুরী একজন বাঙালি জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। তিনি বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং ক্যানবেরা শহরে বসবাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন।

তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরেগণ স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়লজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিন বিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। তিনি দেশীয় নতুন উদ্ভাবন হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম- এ চার জাতের ধানের উদ্ভাবন করে বেশি ফলন পেয়েছেন।

পোস্ট শেয়ার করুন

ড. আবেদ চৌধুরীর ‘রঙিন ভুট্টা’

আপডেটের সময় : ১১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৯

মাহফুজ শাকিলঃ জিন বিজ্ঞানী কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন ‘রঙিন ভুট্টা’।

আজ রবিবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপজেলার সফল কৃষক, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মুখে নতুন উদ্ভাবনী ‘রঙিন ভুট্টা’ নিয়ে বিস্তর কথা বলেন।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ খুবই বেশি। এটিকে নিউ নিউট্রেশন বলা যেতে পারে। ভুট্টায় কেরোটিন থাকার কারণে মূলত এর রং হলুদ হয়। তাই তিনি রঙিন ভুট্টার ক্লোন উদ্ভাবন করেন। একত্রে সবরঙের ভুট্টাসহ আলাদা আলাদা রঙের ভুট্টা উদ্ভাবন করেন।

রঙিন ভুট্টা ক্যান্সার প্রতিরোধক বলে জানান ড. আবেদ চৌধুরী। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এই ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। শিশুরা ভুট্টা খেলে তাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পুরণ হবে।

ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা সারা বছরে ৪ বার চাষ করা যায়। আবার খরিফ -১ ও খরিফ -২ মৌসুমেও ভুট্টা চাষ করা যায়। হাইব্রিড ভুট্টা একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। বেরিয়ে আসা ভুট্টা ফলন হবে হাইব্রিডের সমান। ফলে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার ভুট্টাচাষীসহ সফল কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ভুট্টার বীজ বিতরণ করেন। প্রত্যেকটি বাড়ি আশেপাশে এবং পতিত জায়গায় ভুট্টা চাষের আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবা দিয়েছি। এবার সেই সেবা নিজের দেশকে তথা কুলাউড়াকে দিতে চাই। বিশেষ করে কুলাউড়ার কৃষি বিভাগকে এগিয়ে নিতে আলাদা সময় দেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

ড. আবেদ চৌধুরী কৃষি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে বিজ্ঞানের কারণে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে, জমির কারণে নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো যেভাবে জমির উপরিভাগ (পলি) অংশ ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে, মিল ফ্যাক্টরি করে ধানী জমিকে ধ্বংস এবং নগরায়ন করা হচ্ছে তাতে কৃষি বিভাগ আগামীতে হুমকির মুখে পড়বে। কৃষিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, সেই সাথে নতুন জাতের উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি সবধরণের গবেষণা দেশ ও দেশের বাইরে করেন।
বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সাথে বিভিন্ন ধরণের গবেষণামূলক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন।

নরমাল ভুট্টার সাথে জিনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরণের রং তৈরি করে এই ভুট্টাকে কালার করা হয়েছে। জেনিটিক্যালি মডিফাইড করে এ ধরণের ভুট্টা তৈরি করা হয়।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা বৈজ্ঞানিক বিষয়, বিজ্ঞানী ছাড়া এটা কেউ বুঝবে না। আমরা চাইলে যেকোন ফসলকে যে কোনো রং দিতে পারি অথবা যে কোনো রং ফসলের রং তৈরি করা সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কৃষি অফিসার জগলুল হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিকাগোর অনারারি কনস্যুল জেনারেল মুনির চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিটি লিডার শামছুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ চাষী আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, আবেদ চৌধুরী একজন বাঙালি জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। তিনি বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং ক্যানবেরা শহরে বসবাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন।

তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরেগণ স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়লজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিন বিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। তিনি দেশীয় নতুন উদ্ভাবন হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম- এ চার জাতের ধানের উদ্ভাবন করে বেশি ফলন পেয়েছেন।