জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী শুরু
- আপডেটের সময় : ১২:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭
- / ১৬০৮ টাইম ভিউ
সমুদ্রতীরে ভেসে আসা সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ নাড়া দিয়েছিল বিশ্ববিবেককে। ওই শিশুকে উপজীব্য করে নিজের ভিডিও ইলাস্ট্রেশন সাজিয়ে সব মাধ্যমে সেরা পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী হারুন অর রশীদ টুটুল। বর্তমান সময়ের সুরের বিপরীতে অসুরের লড়াইকে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল। ‘নৃশংসতার সুর’ শিরোনামে এ চিত্রকর্মের জন্য তিনি পেয়েছেন সম্মানসূচক শিল্পকলা পদক। গুণী এ দুই শিল্পীর পাশাপাশি আরও আট শিল্পীকে স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ২২তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত তিন সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত।
গতকাল বিকেলে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান ও বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। বিচারকমণ্ডলীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভী।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আপনি এসব শিল্পকর্ম দেখতে দেখতে মোহিত হবেন; আপনার রুচির পরিবর্তন হবে; হবে রুচির বিকাশ। শিল্পকলার বিভিন্ন অনুষঙ্গ রুচির বিকাশে যে সহায়ক ভূমিকা রাখে_ তা সবার স্বীকার করা উচিত। এই রুচির বিকাশ জাতীয় জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের দেশে চারুকলার মান সব সময় উন্নত। আমরা সেই মান ধরে রাখতে পেরেছি, আরও বিস্তৃত করছি।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘দেশে শিল্পীর সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিল্পানুরাগীদের সংখ্যাও বাড়ছে। এক সময় চিত্রকলা কেনার জন্য আমরা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতাম। এখন দেশের মানুষও ছবি কিনছেন।’
প্রদর্শনীতে ৩৩২ জন শিল্পীর ৩৮৪টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছ। এর মধ্যে চিত্রকলা ২৬৫টি, ভাস্কর্য ৬৩টি, স্থাপনা ও অডিও-ভিডিও ৪৭টি এবং নিউ মিডিয়ার সংখ্যা ৯টি। এ থেকে যাচাই-বাছাই করে ১০টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন শিল্পীর ১০টি শিল্পকর্মকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেছেন বিচারকরা। এবার ‘আয়লান কুর্দির স্মরণে’ ভিডিও ইলাস্ট্রেশনের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (সকল মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ) পান হারুন অর রশিদ টুটুল। চিত্রকলা বিভাগে ‘নৃশসংতার সুর’ ছবির জন্য আনিসুজ্জামান সোহেল পান সম্মানসূচক পুরস্কার। ভাস্কর্য বিভাগে সম্মানসূচক পুরস্কার পান শ্যামল চন্দ্র সরকার। তার শিল্পকর্মের নাম ‘অদম্য’। ছাপচিত্র বিভাগে ‘রিডিমিং স্পেস-১’ ছবির জন্য শিল্পী আনিসু্জ্জামান, ‘ক্ষুধা ও পূর্ণিমার চাঁদ’ শিল্পকর্মের জন্য নিউ মিডিয়া বিভাগে উত্তম কুমার রায় শিল্পকলার সম্মানসূচক পুরস্কার পান। ‘শাশ্বত অস্তিত্ব-৩০’ শিল্পকর্মের জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার পান সৌরভ চৌধুরী; ‘সময় ও বাস্তবতার জটিলতা’র জন্য ছাপচিত্র বিভাগে রুহুল আমিন তারেক পান এবি ব্যাংক পুরস্কার; ‘রেস্টোরেশন-২’ শিল্পকর্মের জন্য ভাষাসৈনিক গাজীউল হক পুরস্কার (ছাপচিত্র) পান কামরুজ্জামান; ‘ঐতিহ্য-২’ ছবির জন্য বেগম আজিজুন্নেছা পুরস্কার (চিত্রকলা) পান মো. কামালুদ্দিন; নিউ মিডিয়া বিভাগে শুভ ঘোষ পান দীপা হক পুরস্কার। তার শিল্পকর্ম ‘মাতৃগর্ভ-২’।
আয়োজকরা জানান, এবারের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য ৬৩০ জন আবেদনকারীর ১৮৯০টি শিল্পকর্ম জমা পড়েছিল। এসব শিল্পকর্ম থেকে বিশিষ্ট শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিটির সদস্যরা ৩৩২ জন শিল্পীর ৩৮৪টি শিল্পকর্ম নির্বাচিত করেন। নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পী তরুণ ঘোষ, রণজিৎ দাস, নাসরীন বেগম, মোস্তফা জামান মিঠু ও রফি হক। আর পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন_ শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভী, শিল্পী মনসুর উল করিম, শিল্প সমালোচক মঈনউদ্দিন খালেদ, শিল্পী জামাল আহমেদ ও শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা।