ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা রিডানডেন্ট ক্লোথিং আর মজুর মামার ‘বিশ্বকাপ’ ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের নামাজ পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্তুগাল বাংলা প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন ঈদের কাপড় কিনার জন্য মা’য়ের উপর অভিমান করে মেয়ের আত্মহত্যা লিসবনে বন্ধু মহলের আয়োজনে বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিল মান অভিমান ভুলে সবাই একই প্লাটফর্মে,সংবাদ সম্মেলনে পর্তুগাল বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটি

কুলাউড়ায় গোগালীছড়া নদীর বাঁধের চার’টি স্থান ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০১৭
  • / ১২২১ টাইম ভিউ

তিন দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় গোগালিছড়া নদীর বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে গিয়ে ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং আউশ ধান ও সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তা চলে। বৃহস্পতিবার সকালে অধিক পরিমানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নেমে গোগালিছড়া নদীর জয়চন্ডীর ইউনিয়নের গাজীপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাছে একটি, কুলাউড়া রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে একটি, গাজীপুর জামে মসজিদের কাছে একটি এবং রংগীরকুল এলাকায় একটিসহ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।

এসব ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে গাজীপুর, রাজাপুর, পুরন্দরপুর, কুটাগাঁও, মীরবক্সপুর, কামারকান্দি, গিয়াসনগর, লামাগাঁও, রংগীরকুল গ্রামের আউশ ধান ও বিভিন্ন রখমের সবজি ক্ষেতের জমি পানিতে তলীয়ে যায়। এছাড়াও বাঁধ ভাঙনের ফলে কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর গ্রামের কিছু জায়গা তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকালে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙনকবলিত চারটি স্থান দিয়ে প্রবলবেগে পানি ঢুকছে। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় লোকজন ঘরের নিচে থাকা মালপত্র খাটের ওপরে তুলে রেখেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে আরও প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভাঙনকৃত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুনকরে আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া, গিয়াসনগর গ্রামের বাসিন্দা হাসিম মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অধিকাংশ জমিতে আউশ ধানের চারা লাগিয়ে ছিলেন। গোগালী নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে রোপনকৃত সব জমি পানির নিচে। গিয়াসনগর হাওরে দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব জমির রোপনকৃত ধান পচে যাবে বলে জানান তাঁরা।

কামারকান্দি গ্রামের কৃষক লেচু মিয়া, লামাগাঁওর বাবুল মিয়া, রংগীরকুল গ্রামের রুবেল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে অকাল বন্যায় বোরো ধান নিলো, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আউশ ধানের চারা রোপন করেছিলাম, সর্বনাশা গোগালী নদীর ভাঙনে তাও নিয়ে গেলো। এবার মনে হয় না খেয়েই থাকতে হবে।  দানাপুরের বকুল সূত্রধর বলেন, ঘরোর মধ্যখানে হাঁটুপানি। দু’দিন থেকে ঠিকমত রান্না-বান্না করা যাচ্ছেনা। বড়ই বিপদে আছি, কই যাইতাম।

গাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজীব হাসান চৌধুরী বলেন, হাসান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গাজীপুর মাদ্রাসার কাছে বাঁধের ওপর দিয়ে ৭৫০ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজ পায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই কাজ করাচ্ছে। বালু ফেলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার মাস আগে রাস্তা কেটে গর্ত করে রাখে। তিনি অভিযোগ করেন, দ্রুত বালু না ফেলায় পাহাড়ি ঢলে বাঁধ দুর্বল হওয়ার কারনে তা ভেঙে গেছে।

এ বিষয়ে হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মুহিবুর রহমান জয়নাল দাবি করেন, বালুর সংকটের কারণে তিনি রাস্তায় কাজ করাতে পারেননি। কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী ইসতিয়াক হাসান বলেন, বালুর সংকটের বিষয়টি ঠিকাদারও তাঁকে জানিয়েছিলেন। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু বলেন, গোগালী নদীর চারটি স্পটে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ১০টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও অনেক কৃষকের আউশ ক্ষেতের বীজতলা, চারা, ধানীজমি, সবজিক্ষেতসহ প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ চাওয়া হবে।

পোস্ট শেয়ার করুন

কুলাউড়ায় গোগালীছড়া নদীর বাঁধের চার’টি স্থান ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত

আপডেটের সময় : ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০১৭

তিন দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় গোগালিছড়া নদীর বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে গিয়ে ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং আউশ ধান ও সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তা চলে। বৃহস্পতিবার সকালে অধিক পরিমানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নেমে গোগালিছড়া নদীর জয়চন্ডীর ইউনিয়নের গাজীপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাছে একটি, কুলাউড়া রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে একটি, গাজীপুর জামে মসজিদের কাছে একটি এবং রংগীরকুল এলাকায় একটিসহ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।

এসব ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে গাজীপুর, রাজাপুর, পুরন্দরপুর, কুটাগাঁও, মীরবক্সপুর, কামারকান্দি, গিয়াসনগর, লামাগাঁও, রংগীরকুল গ্রামের আউশ ধান ও বিভিন্ন রখমের সবজি ক্ষেতের জমি পানিতে তলীয়ে যায়। এছাড়াও বাঁধ ভাঙনের ফলে কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর গ্রামের কিছু জায়গা তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকালে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙনকবলিত চারটি স্থান দিয়ে প্রবলবেগে পানি ঢুকছে। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় লোকজন ঘরের নিচে থাকা মালপত্র খাটের ওপরে তুলে রেখেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে আরও প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভাঙনকৃত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুনকরে আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া, গিয়াসনগর গ্রামের বাসিন্দা হাসিম মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অধিকাংশ জমিতে আউশ ধানের চারা লাগিয়ে ছিলেন। গোগালী নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে রোপনকৃত সব জমি পানির নিচে। গিয়াসনগর হাওরে দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব জমির রোপনকৃত ধান পচে যাবে বলে জানান তাঁরা।

কামারকান্দি গ্রামের কৃষক লেচু মিয়া, লামাগাঁওর বাবুল মিয়া, রংগীরকুল গ্রামের রুবেল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে অকাল বন্যায় বোরো ধান নিলো, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আউশ ধানের চারা রোপন করেছিলাম, সর্বনাশা গোগালী নদীর ভাঙনে তাও নিয়ে গেলো। এবার মনে হয় না খেয়েই থাকতে হবে।  দানাপুরের বকুল সূত্রধর বলেন, ঘরোর মধ্যখানে হাঁটুপানি। দু’দিন থেকে ঠিকমত রান্না-বান্না করা যাচ্ছেনা। বড়ই বিপদে আছি, কই যাইতাম।

গাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজীব হাসান চৌধুরী বলেন, হাসান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গাজীপুর মাদ্রাসার কাছে বাঁধের ওপর দিয়ে ৭৫০ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজ পায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই কাজ করাচ্ছে। বালু ফেলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার মাস আগে রাস্তা কেটে গর্ত করে রাখে। তিনি অভিযোগ করেন, দ্রুত বালু না ফেলায় পাহাড়ি ঢলে বাঁধ দুর্বল হওয়ার কারনে তা ভেঙে গেছে।

এ বিষয়ে হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মুহিবুর রহমান জয়নাল দাবি করেন, বালুর সংকটের কারণে তিনি রাস্তায় কাজ করাতে পারেননি। কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী ইসতিয়াক হাসান বলেন, বালুর সংকটের বিষয়টি ঠিকাদারও তাঁকে জানিয়েছিলেন। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু বলেন, গোগালী নদীর চারটি স্পটে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ১০টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও অনেক কৃষকের আউশ ক্ষেতের বীজতলা, চারা, ধানীজমি, সবজিক্ষেতসহ প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ চাওয়া হবে।