কুলাউড়ায় ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি মুক্তিযোদ্ধার দখলে!
- আপডেটের সময় : ১১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৯
- / ৭৯৪ টাইম ভিউ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে পীরের বাজারে মকবুলুর রহমান চৌধুরী ওয়াক্ফ এস্টেটের ৭ শতক জমি দখল নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সিরাজ মিয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কয়েফ দফায় সামাজিক বৈঠকও হয়। দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও এক প্রবাসী পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। থানা ও আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পাবই মৌজায় এস এ রেকর্ডে ৬৭১ নম্বর খতিয়ানে ৪১২১ দাগে ৬০ শতক জমির মধ্যে ৭ শতক জমি ও আর এস রেকর্ডে ৩৩১১ খতিয়ানে সাবেক ৪১২১ দাগে ৭ শতক জমি ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে রেকর্ডভুক্ত হয় ১৯৫৬ সালের মাঠ জরিপের সময়। তখন ওই জমি দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার পিতা আব্দুর রহিমকে। মুক্তিযোদ্ধার পিতা আব্দুর রহিম জমি ভোগদখলে থাকাবস্থায় ১৯৬৯ সালে জমির ওপর মৌলভীবাজার মুনসেফী আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। ১৯৭০ সালে রায়ের সময় ওয়াক্ফ এস্টেটের কেউ বিবাদী হিসেবে উপস্থিত না থাকায় একতরফাভাবে আব্দুর রহিমের পক্ষে আদালত রায় দেন।
সেই রায়ের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার জমিতে দখলে আছেন। সর্বশেষ ভূমি জরিপে ও বর্তমান মাঠ ফর্সায় ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে ৪১২০ দাগে ৩৭ শতক, ৪১২১ দাগে ৬০ শতক, ৪১২২ দাগে ৬৪ শতক, ৪১২৪ দাগে ৩৪ শতক জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। এই চার দাগের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়াসহ তার আত্মীয়-স্বজন ভোগ-দখলে আছেন। কিন্তু ৪১২১ দাগের ৬০ শতক জমির ৭ শতকের মধ্যে লিজকৃত ৪ শতক জমি নিয়ে প্রবাসী বদরুল ইসলামের সাথে বিরোধ বাঁধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের।
এরপূর্বে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার পরিবারের লোকজন মকবুলুর রহমান চৌধুরী ওয়াক্ফ এস্টেটের ৭ শতক জমির গাছপালা কেটে দখলে নিয়েছিল। সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার ক্রয়কৃত’ উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ডও স্থাপন করেছিল তারা। এ ঘটনায় ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি ভোগদখলকারী পিয়ারা বেগম ১৮ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি মামলা (নং-২৩) দায়ের করেন। এরপর দুই দফায় সামাজিক বৈঠক বসলেও কোন সমাধান হয়নি।
সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে সামাজিক বৈঠক হয়। হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজারে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমানের সভাপতিত্বে সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওছার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান, হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু।
বৈঠকে জমির কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। সেখানে দখলদার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কোনো সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া জমির সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় দখলদারদের ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া’ পৈত্রিক সূত্রে জায়গার মালিক সম্বলিত সাইনবোর্ড অপসারণ করে ওয়াক্ফ এস্টেট কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর মকবুলুর রহমান ওয়াক্ফ এস্টেটের কাছ থেকে ৪ শতক জমির লিজ গ্রহিতা প্রবাসী মো. বদরুল ইসলাম প্রবাসে চলে যান। সেই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া ও তাঁর পরিবারের লোকজন লিজকৃত জমি তাদের দখলে নেয়।
এদিকে চলতি বছরের ৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া বিরোধপূর্ণ ৭ শতক জমি যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য নিজে বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মুনসেফী আদালতে (মামলা নং-২৭৭) দায়ের করেন। আদালত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সেই ৭ শতক জমি আবারো দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া।
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া বলেন, ৫৬ সালের জমিটি ওয়াক্ফ এস্টেটের ছিল। কিন্তু ৬৯ সালে সেটা আমার পিতা ক্রয় করেন। এরপর আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করলে রায় আমাদের পক্ষে আসে। সেই রায়ের প্রেক্ষিতে আমি জমিতে দখলে আছি।
মকবুলুর রহমান ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর ভাতিজা (অব.) মেজর নুরুল মান্নান চৌধুরী তারাজ বলেন, রেকর্ড পত্রের মাধ্যমে জমির মালিকানা নির্ধারণ হয়। রেকর্ডপত্রে যার কাগজাদি সঠিক থাকবে সেই জমির প্রকৃত মালিক বলে গণ্য হবে। জমি নিয়ে উত্তেজনা না ছড়িয়ে মামলার আলোকে মীমাংসা হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। রেকডপর্ত্রে যদি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার জমির প্রকৃত মালিক বলে আদালত থেকে নির্দেশনা আসলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এই জমি নিয়ে এলাকায় একটি মহলের ইন্ধনে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর বলেন, আদালত থেকে যে রায় আসবে সেই রায়ের প্রেক্ষিতে জমি হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।