একজন সালাম মাহমুদ
- আপডেটের সময় : ০৯:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
- / ৮৪৫ টাইম ভিউ
পুরো নাম মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, আমাদের কাছে যিনি সালাম মাহমুদ নামেই পরিচিত কারণ তিনি এই নামেই নিয়মিত লেখা-লেখি করছেন। পরিচয়টা দীর্ঘকালের নয়, তবে যেটুকু সময়ের তাতেই অনেকটা কাছের এবং পরম মিত্র হিসাবে হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন খুব সহজেই। একজন আত্মজ, অগ্রজ, পরম মিত্র কিংবা সর্বোপরি মনের মানুষ, সন্বোধনটা যাই হোক না কেন, সম্পর্কটা যে রক্তের জাগতিক সম্পর্ককেও ছাড়িয়ে গেছে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
আমাদের এই জাগতিক পরিচয়ে অনেক আত্মীয়ের ভীড়ে আত্মার আত্মীয় যেমন সবাই হয়ে উঠে না, তেমনি প্রচুর বন্ধু-বান্ধবের তালিকায় মনের মানুষের সংখ্যাটাও থেকে যায় খুবই নগণ্য। মনের ভাষা যার কাছে মূল্যায়িত হয়, যার মনের সাথে মিলে যায়, তিনিই না তবে মনের মানুষ বলে বিবেচিত হন।
সালাম মাহমুদ তথা প্রিয় সালাম ভাইয়ের পিত্রালয় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলাধীন টিলাগাঁও ইউনিয়নের বৈদ্যশাসন গ্রামে। বলতে গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেই, সোনার চামস মুখে নিয়ে জন্মেছেন এটাও বলা যাবে না, গাঁয়ের মাটির গন্ধে বেড়ে উঠা একজন সালাম মাহমুদের জীবনী লিখাটা হয়ত অত্যুক্তি হয়ে যাবে তাই প্রসঙ্গটা মূলধারাতেই সীমাবদ্ধ রাখছি।
যে কথা বলতে চাই, বৈদ্যশাসন থেকে যার দৌড় বর্তমান একটি বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক পর্যন্ত, অবশ্যই বিষয়টা সাধারণ কোন কিছু নয়। এছাড়া সাহিত্য, সংগঠন, সংস্কৃতি কোনটাতেই সালাম ভাইয়ের পদচারণা কম নয়, বলতে গেলে অভূতপূর্ণ। যার সাহিত্য সাময়িকী “পরাগ” মান বিচারে সাহিত্যাঙ্গনে প্রচুর সমাদৃত। এই সালাম মাহমুদ তৈরি হওয়া তো আর তুচ্ছ কথা নয়। আমাদের আশপাশের বৈষয়িক, স্বার্থ জড়ানো, আত্মকেন্দ্রীক জীবনধারা থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে এই অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করা যে কতটা কঠিন এই সালাম মাহমুদরা তা হাড়ে হাড়ে জানেন।
পিঠে প্রশংসার চাপর দিয়ে পাশ থেকে হিংসা আর তাচ্ছল্যের তীর ছোড়া সমাজের প্রাণীগুলো থেকে নিজেকে আগলে রেখে এ পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে আসা বড়ই কষ্টসাধ্য। কথায় আছে ভোরের সূর্যোদয় দেখে সারাদিনের আবওয়া কিছুটা হলেও আঁচ করা সম্ভব হয়। এর ব্যাতিক্রম নন সালাম মাহমুদও। কৈশোরের বাঁধা-ধরা জীবনের বাইরে গিয়ে সৃজনশীল মনোভাবে বিমোহিত করতো যাকে সবসময়, মেধাবী ও গম্ভীর স্বভাবের এই লোকটির প্রতিভা ছড়ানোর কাজ সেখান থেকেই বোধহয় শুরু।
ছোট ছোট ক্লাব, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক আর সাহিত্য সংগঠন থেকেই শুরু করে যার পথচলা আজ রাজধানী জাতীয় পর্যায়ের বাংলাদেশের তৃণমূল সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন আর.জে.এফ এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় অনেক সংগঠনেরই আজ যিনি কর্ণধার। শত প্রতিকূলতা আর পিছুটানকে পদাঘাত করে যার বিজয়মাল্য এনে দিয়েছে একজন খ্যাতমানের পরিচিতি। অসংখ্য হৃদয় দখল করেছেন জনপ্রিয় কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক কিংবা সম্পাদক হিসাবে।
এখানেই থেমে নেই, একজন অগ্রজ কলম সৈনিক হিসাবে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শত প্রতিকূলতার মধ্যে উঠে আসা কলম প্রেমিকগণকে ছাতার মত অকাতরে দিচ্ছেন ঠাঁই। একজন শিক্ষক কিংবা অবিভাবকের মতই তাদের গড়ে তুলছেন স্বমহিমায়। নিজে গড়ে উঠা যেমন কষ্টসাধ্য তার চেয়ে অধিক কষ্টসাধ্য গড়ে তোলার কাজটা, যা এই মানুষটা করে যাচ্ছে।
“মানুষ মাত্রেঃ দোষ-গুণ সমাশ্রিতা” সবার মধ্যেই দোষ-গুণ দুই বর্তমান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন সালাম ভাইকে আমি যতটা দেখেছি গুণের হিসাবটাই সিংহভাগ পরিলক্ষিত হয়েছে। নিস্বার্থ, নির্লোভ, নিঃস্পৃহ এই মানুষটির সান্নিধ্য আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করে। ব্যাক্তিজীবনে অহংবোধ শুণ্য কথাসুবিদ এই ব্যাক্তিটির কাছ থেকে পাওয়ার আছে অনেককিছু।
যাকে ভালবাসা যায়, তাকে নিয়ে বলার আর লিখার ভাষা হয় সু-দীর্ঘ, তাই আর না বাড়িয়ে পরিশেষে বলবো আমাদের গর্ব সালাম মাহমুদ আমাদেরই লোক। একজন অগ্রজপ্রতিম আদর্শ সালাম মাহমুদের দীর্ঘায়ূ ও সুস্থ, সুন্দর জীবন কামনা করে এখানেই থামছি। ভালো থাকবেন প্রিয় সালাম ভাই।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, মৌলভীবাজার।