আটকে আছে লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স
- আপডেটের সময় : ০১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯
- / ৪২১ টাইম ভিউ
নতুন সড়ক আইন কার্যকর হয়েছে। চলছে কড়াকড়ি। লক্ষাধিক আবেদনকারী বিআরটিএতে পরীক্ষা দিয়ে, ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েও পাচ্ছেন না ড্রাইভিং লাইসেন্স। বছরের অধিক সময় অপেক্ষা করেও তারা ভুক্তভোগী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ অস্থায়ী রোড পারমিট দিয়ে সড়কে চলাচল করছেন।
কিন্তু লাইসেন্সের অভাবে পেশাদার বেকার চালকরা চাকরি বঞ্চিত হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জানিয়েছে, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপা বন্ধ থাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না। এতে আটকে রয়েছে লক্ষাধিক গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রিন্টিংয়ের জন্য ব্যবহূত ‘ডুয়েল ইন্টারফেজ পলিকার্বনেট’ কার্ডটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন না পাওয়ায় লাইসেন্স প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীদের অভিযোগ, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন আগে বিআরটিএতে পরীক্ষা দিয়েছেন তারা। এরপর ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অস্থায়ী রোড পারমিট দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১০-১১ মাস যাবৎ দুই-তিন দফা এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে না বিআরটিএ।
দীর্ঘ সময়ে কাগজে লেখা অস্থায়ী রোড পারমিট ময়লা হয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষে লাইসেন্সের খোঁজ নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু লাইসেন্স কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলছে না।
বিআরটিএ’র সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ কে এম মাসুদুর রহমান বলেন, ‘লাইসেন্স কার্ডের অনুমতির জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়া গেলে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নতুন টেন্ডার ডাকা হবে। টেন্ডার পাওয়া কোম্পানি পুনরায় লাইসেন্স ছাপার কাজ শুরু করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে টাইগার আইটি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাপার কাজটি করছে। তাদের মেয়াদ শেষের পথে। দু-এক মাস সময় আছে।’
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের এক নম্বর ভবনে লাইসেন্স শাখায় গিয়ে অসংখ্য আবেদনকারীর সমাগম দেখা যায়। কেউ ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার সিরিয়ালে রয়েছেন। কেউ আবার স্থায়ী রোড পারমিটের কাগজ তুলছেন।
এদিকে ভবনের পাশে ১২০ নম্বর কক্ষে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহীতাদের সিরিয়াল দেখা যায়। তবে তারা কেউ লাইসেন্স পাননি। সবাইকে নতুন তারিখ নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
সাজ্জাদ হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এসেছেন।
তিনি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে লার্নার ফরমের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের (অপেশাদার চালক) আবেদন করেছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস পর সাজ্জাদ বিআরটিএ’র লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। নির্ধারিত তারিখে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে একটি অস্থায়ী রোড পারমিট হাতে পেয়েছিলেন। চলতি বছরের ১৯ জুন লাইসেন্স দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল। কিন্তু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাকে লাইসেন্স দিতে পারেনি।
দ্বিতীয় দফায় তার অস্থায়ী রোড পারমিটের মেয়াদ ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় বিআরটিএ। ওই তারিখেও লাইসেন্স পাননি তিনি। আবারো তার অস্থায়ী পারমিটের মেয়াদ ২০২০ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বিআরটিএ।
এ বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে এখন হয়রানিতে আছি।’
মো. লিটন নামে এক যাত্রীবাহী বাসচালক বলেন, গত বছর তিনি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরে ছবি তুলে ফিঙ্গারপ্রিন্টও দিয়েছেন। নির্ধারিত তারিখে লাইসেন্সের জন্য গেলে পুরোনো কপিটি রেখে আবারো রোড পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে ফিরিয়ে দেন। এ মাসে আমার সেই মেয়াদও শেষ। এখন যোগাযোগ করার পর বলছে এখনো লাইসেন্স আসেনি। আবারো মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে যান।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, মেয়াদ বাড়িয়ে কী হবে, পরিবহন মালিক তো এই অস্থায়ী রোড পারমিট দেখে চারকিতে বহাল করছেন না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।
অপর ভুক্তভোগী মো. ফারুক বলেন, ‘বিআরটিএ’র লাইসেন্স শাখারা কর্মকর্তারা আমাদের বলেন, রোড পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে যান। লাইসেন্স পেতে হলে ২০২০ সালের জুন মাসের পর পাবেন। কারণ লাখ লাখ আবেদন এখনো পেইন্ডিং রয়েছে। কারও লাইসেন্সই ছাপা হয়নি।’
এদের মতো অসংখ্য আবেদনকারী প্রতিদিনই আসছেন বিআরটিএ কার্যালয়ে। লাইসেন্স না পেয়ে অস্থায়ী রোড পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে জাল/অবৈধ/ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের প্রবণতা বোধে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করা হয়।
বিআরটিএ’র তথ্য মতে, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩৮টি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত ও বিতরণ করা হয়।
গত ছয়টি অর্থবছরে বিআরটিএ’র ইস্যু, নবায়ন ও সংযোজিত লাইসেন্সের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক লাখ ৯৯ হাজার একটি; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯টি; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৩টি; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন লাখ ৪০ হাজার ২৮৮টি; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৬ হাজার ১৯৩টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছয় লাখ ১৭ হাজার ১৬২টি ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ করে তারা।
চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) জুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আবেদন করেও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা লক্ষাধিক।