ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার

আইসিইউ’র জন্য ৪ দিন অপেক্ষা, এম্বুলেন্সে মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০
  • / ৩১৭ টাইম ভিউ

 

এম্বুলেন্সের সিটে পড়ে আছে স্বামীর নিথর মরদেহ। পাশে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন স্ত্রী। চোখ বেয়ে জল পড়ছিল। একটু পর পর স্বামীর চোখে-মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। ভাবতেও পারেননি স্বামীর সঙ্গে পথচলা এত তাড়াতাড়ি থেমে যাবে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চোখের সামনে স্বামী এভাবে চলে যাবেন সেটি মানতে পারছিলেন না। প্রয়োজন ছিল একটি আইসিইউ সিটের। সেটি হলে হয়তো বাঁচানো যেত স্বামীকে।

এসব চিন্তা করে করেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ওই নারী। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) সামনে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের দেখা মেলে। ঢাকার আগারগাঁওয়ের তালতলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল হাই (৫৫)। পেশায় আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট বারে কাজ করতেন। ক’দিন ধরেই শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। তাই ৯ই জুন রাত দেড়টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলের ডেডিকেটেড করোনা ভবনের সাসপেক্টেড করোনা ইউনিটের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে। ভর্তির পরের দিন থেকেই তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট পর্যাপ্ত ছিল না। তাই আরো বাড়তি অক্সিজেনের দরকার ছিল। কিন্তু হাসপাতালে সেটি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরেরদিন তার শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়ায় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে রেফার করেন। আব্দুল হাইয়ের স্বজনরা তখন ঢামেকের নতুন ভবনের আইসিইউতে অনেক চেষ্টা করে একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারেননি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই আইনজীবীর জীবন বাঁচাতে তার স্ত্রী-সন্তানেরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করেন। ঢাকার সরকারি- বেসরকারি সব হাসপাতালে খোঁজ নেন একটি আইসিইউ সিটের জন্য। কোথাও মিলেনি একটি আইসিইউ সিট। সর্বত্রই একই কথা আগে করোনার পরীক্ষার ফলাফল তারপর সিটের ব্যবস্থা। আর বেশির ভাগ হাসপাতালে আইসিইউতে সিট খালি নেই এমন অজুহাত দেয়া হয়। এদিকে ক্রমেই আব্দুল হাই’র অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। একটি আইসিইউ’র সিটের জন্য তার স্বজনরা ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরছিলেন টানা চারদিন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ঢাকা মেডিকেলও আইসিইউ’র সাপোর্ট দিতে পারেনি, অন্য কোথাও মিলেনি। গতকাল সকালে আব্দুল হাই’র আইসিইউ সাপোর্ট অপরিহার্য হয়ে উঠে। তাই প্রাণপণ লড়ে ভাগ্যগুণে ঢাকার গ্রীন লাইফ হাসপাতালে একটি আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করেন তার স্বজনরা। তাকে তড়িঘড়ি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এম্বুলেন্সে করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হন তারা। কিন্তু ওই হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে পারেননি। পথে এম্বুলেন্সেই মারা যান আব্দুল হাই। আব্দুল হাই’র ছেলে হাসিবুল মুগ্ধ মানবজমিনকে বলেন, আইসিইউ সাপোর্টের জন্য চোখের সামনে বাবা মৃত্যুবরণ করলেন। কিছুই করতে পারি নাই। এই করোনাকালে রোগী ও তার স্বজনরা কতটা অসহায় সেটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলাম। চারটা দিন ধরে ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি-বেসরকারি সবক’টি হাসপাতালেই খোঁজ করেছি। সবাই আগে করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট দেখতে চায়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির দু’দিন পর বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর ৭২ ঘণ্টা পরে ফলাফল দেয়া হবে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তের রোগীর করোনা ফলাফল পেতে আমাদেরকে ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এসময়টা আমরা রোগী নিয়ে কোথাও মুভ করতে পারছিলাম না। যখন ফলাফল হাতে পেলাম তখন সেটি নেগেটিভ ছিল। অথচ দু’দিন আগে যদি এটা জানতে পারতাম তবে বাবাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা বা আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে পারতাম। বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পরেরদিন বাবার অক্সিজেনের লেভেল কমে গেলে চিকিৎসকরা দেখে তার জন্য আইসিইউ’র পরামর্শ দেন। তারপর ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের আইসিইউতে গিয়ে সিরিয়াল দেই। কিন্তু সেখানকার ১৫টি আইসিইউ সিটের মধ্যে একটিও খালি নেই। আর যে পরিমাণ সিরিয়াল জমা আছে সেটি দেখে আর আশা করতে পারিনি। গতকাল সকালে বাবার অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসক ও নার্সদের ডেকে এনে পরামর্শ চাই। তারা আবার আইসিইউ সিট ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে অনেক কষ্ট করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সিটের ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বলেন, আমার বাবা যেমন করে আইসিইউ সাপোর্টের জন্য মারা গেলেন আমি চাই না এরকম আর কারো বেলায় হউক। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সিট বাড়ানো দরকার। মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে আরো কম সময়ে করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেয়া দরকার। কারণ অনেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া ভর্তি নেয় না। এসব নিয়ে অনেক হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়।
সুত্র : মানবজমিন

পোস্ট শেয়ার করুন

আইসিইউ’র জন্য ৪ দিন অপেক্ষা, এম্বুলেন্সে মৃত্যু

আপডেটের সময় : ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০

 

এম্বুলেন্সের সিটে পড়ে আছে স্বামীর নিথর মরদেহ। পাশে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন স্ত্রী। চোখ বেয়ে জল পড়ছিল। একটু পর পর স্বামীর চোখে-মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। ভাবতেও পারেননি স্বামীর সঙ্গে পথচলা এত তাড়াতাড়ি থেমে যাবে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চোখের সামনে স্বামী এভাবে চলে যাবেন সেটি মানতে পারছিলেন না। প্রয়োজন ছিল একটি আইসিইউ সিটের। সেটি হলে হয়তো বাঁচানো যেত স্বামীকে।

এসব চিন্তা করে করেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ওই নারী। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) সামনে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের দেখা মেলে। ঢাকার আগারগাঁওয়ের তালতলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল হাই (৫৫)। পেশায় আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট বারে কাজ করতেন। ক’দিন ধরেই শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। তাই ৯ই জুন রাত দেড়টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলের ডেডিকেটেড করোনা ভবনের সাসপেক্টেড করোনা ইউনিটের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে। ভর্তির পরের দিন থেকেই তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট পর্যাপ্ত ছিল না। তাই আরো বাড়তি অক্সিজেনের দরকার ছিল। কিন্তু হাসপাতালে সেটি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরেরদিন তার শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়ায় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে রেফার করেন। আব্দুল হাইয়ের স্বজনরা তখন ঢামেকের নতুন ভবনের আইসিইউতে অনেক চেষ্টা করে একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারেননি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই আইনজীবীর জীবন বাঁচাতে তার স্ত্রী-সন্তানেরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করেন। ঢাকার সরকারি- বেসরকারি সব হাসপাতালে খোঁজ নেন একটি আইসিইউ সিটের জন্য। কোথাও মিলেনি একটি আইসিইউ সিট। সর্বত্রই একই কথা আগে করোনার পরীক্ষার ফলাফল তারপর সিটের ব্যবস্থা। আর বেশির ভাগ হাসপাতালে আইসিইউতে সিট খালি নেই এমন অজুহাত দেয়া হয়। এদিকে ক্রমেই আব্দুল হাই’র অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। একটি আইসিইউ’র সিটের জন্য তার স্বজনরা ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরছিলেন টানা চারদিন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ঢাকা মেডিকেলও আইসিইউ’র সাপোর্ট দিতে পারেনি, অন্য কোথাও মিলেনি। গতকাল সকালে আব্দুল হাই’র আইসিইউ সাপোর্ট অপরিহার্য হয়ে উঠে। তাই প্রাণপণ লড়ে ভাগ্যগুণে ঢাকার গ্রীন লাইফ হাসপাতালে একটি আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করেন তার স্বজনরা। তাকে তড়িঘড়ি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এম্বুলেন্সে করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হন তারা। কিন্তু ওই হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে পারেননি। পথে এম্বুলেন্সেই মারা যান আব্দুল হাই। আব্দুল হাই’র ছেলে হাসিবুল মুগ্ধ মানবজমিনকে বলেন, আইসিইউ সাপোর্টের জন্য চোখের সামনে বাবা মৃত্যুবরণ করলেন। কিছুই করতে পারি নাই। এই করোনাকালে রোগী ও তার স্বজনরা কতটা অসহায় সেটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলাম। চারটা দিন ধরে ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি-বেসরকারি সবক’টি হাসপাতালেই খোঁজ করেছি। সবাই আগে করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট দেখতে চায়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির দু’দিন পর বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর ৭২ ঘণ্টা পরে ফলাফল দেয়া হবে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তের রোগীর করোনা ফলাফল পেতে আমাদেরকে ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এসময়টা আমরা রোগী নিয়ে কোথাও মুভ করতে পারছিলাম না। যখন ফলাফল হাতে পেলাম তখন সেটি নেগেটিভ ছিল। অথচ দু’দিন আগে যদি এটা জানতে পারতাম তবে বাবাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা বা আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে পারতাম। বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পরেরদিন বাবার অক্সিজেনের লেভেল কমে গেলে চিকিৎসকরা দেখে তার জন্য আইসিইউ’র পরামর্শ দেন। তারপর ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের আইসিইউতে গিয়ে সিরিয়াল দেই। কিন্তু সেখানকার ১৫টি আইসিইউ সিটের মধ্যে একটিও খালি নেই। আর যে পরিমাণ সিরিয়াল জমা আছে সেটি দেখে আর আশা করতে পারিনি। গতকাল সকালে বাবার অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসক ও নার্সদের ডেকে এনে পরামর্শ চাই। তারা আবার আইসিইউ সিট ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে অনেক কষ্ট করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সিটের ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বলেন, আমার বাবা যেমন করে আইসিইউ সাপোর্টের জন্য মারা গেলেন আমি চাই না এরকম আর কারো বেলায় হউক। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সিট বাড়ানো দরকার। মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে আরো কম সময়ে করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেয়া দরকার। কারণ অনেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া ভর্তি নেয় না। এসব নিয়ে অনেক হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়।
সুত্র : মানবজমিন